"মদের ফেনার মতো সাদা সাদা দাঁত আমি অনেক দেখেছি।
জেনেছি আগুন যত দুরেই হোক না কেন তাকে দেখা যায়।
মুকুরের বুকে ঠাঁই পেতে হলে সরাসরি সম্মুখেই চলে যেতে হয়
পিছনে বা পাশে নয়; গ্রন্থ ছন্দোবদ্ধ হলে তবে আপনিই মনে থাকে
মৃত্যু অবধিই থাকে; মানুষ সমুদ্রকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।"
(মুকুর)


শিবপুর বি ই কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্নাতক কবির কর্মজীবন বহুতা ও ক্ষণস্থায়ী। কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেলথ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট, ত্রিপুরা গভমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এমন কি "ফিরে এসো, চাকা" ছাপা হয়ে বার হয় যখন তখন কবি দুর্গাপুরে কর্মরত। যদিও কবির প্রথম কবিতার বই "নক্ষত্রের আলোয়"।


এরূপ বিরহ ভালো ; কবিতার প্রথম পাঠের
পরবর্তীকাল যদি নিদ্রিতের মতো থাকা যায়,
স্বপ্নাচ্ছন্ন, কাল্পনিক ; দীর্ঘকাল পরে পুনরায়
পাঠের সময় যদি শাশ্বত ফুলের মতো স্মিত,
রূপ, ঘ্রাণ, ঝ’রে পড়ে তাহলে সার্থক সব ব্যথা,
সকল বিরহ, স্বপ্ন ; মদিরার বুদ্বুদের মতো
মৃদু শব্দে সমাচ্ছন্ন, কবিতা, তোমার অপ্রণয়।
হাসির মতন তুমি মিলিয়ে গিয়েছ সিন্ধুপারে।
এখন অপেক্ষা করি, বালিকাকে বিদায়দেবার
বহু পরে পুনরায় দর্শনের অপেক্ষার মতো ...
হয়তো সর্বস্ব তার ভ’রে গেছে চমকে চমকে।
অভিভূত প্রত্যাশায় এরূপ বিরহব্যথা ভালো।  
(এরূপ বিরহ ভালো)


বহু বার তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সুধু কবিতা রচনা করেই কাটিয়েছেন, কবি লিখেছেন, " আমার বয়স তখন ২৩/২৪ এ যাবত লেখা সব কবিতাই বর্জন করে মন বিষণ্ণ। এই ভাবেই ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ চলে গেলো। এই সময় প্রচুর বিদেশী সাহিত্য পাঠ করি। ধীরে ধীরে আমার মনে কবিতা রচনার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আবির্ভূত হয় ।"


পৃথিবীর কাজে ব্যস্ত, ভিজে মুখ দুপুরের ঘামে;
আকাশ রয়েছে ভরে নীল রৌদ্রে,
শরীরের দীপ্তি তার ক্লান্ত হয়ে আছে।
ক্লান্ত হয়ে অবসরে-ক্ষণিক বিশ্রামে
চেয়ে থাকে বহু দূরে- বহু দূরে ঘুরে আসে অলস মেঘের কাছে কাছে,
জেগে থাকা অবসরে নয়-
এক দিন চুপি চুপি কাছে যদি যেতে পারি
                            জ্যোৎস্নার নিচে তার ঘুমের সময়!
(রৌদ্রে)


অন্যান্য কবির মতো কবির কবিতা আপাতসরল নয়, তার কবিতা পাঠে নতুন চিন্তা/গভীর অনুভবের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। কবিতা গভীর পাঠ ও মনোনিবেশ দাবি করে; এক বার পাঠে তার মর্মউদ্ধার অনেক সময় ই সম্ভব হয় না। বাংলা কবিতার প্রচলিত যে ভাষা, যে আঙ্গিক বা ভাবনা তা কবির কবিতায় পাওয়া যায় না আর সেটাই তাক সবার থেকে আলাদা করে। তিনি কবিতাকে রূপ দিয়েছেন গণিতের সূত্রে; সেটা কিন্তু শুধু গণিত নয় বা সোজা ভাষায় গণিত বা বিজ্ঞানের সূত্র নয় তা সেই সব গণিতের ভিতরে থাকা দর্শন।


X=0
এবং Y=0
বা X=0=Y
বা X=Y
শূন্য 0 থেকে প্রাণী X ও Y সৃষ্টি হলো
এই ভাবে বিশ্ব সৃষ্টি শুরু হয়েছিলো।
(একটি গান)


সমীকরণের মতো উপস্থিত শর্তাবলী
পৃথকতা থেকে এসে একীভূত হবার নিয়মে
কিছু পরিবর্তীদের বহিষ্কারে শেষে নিয়ে আসে
সম্ভব স্বাধীনতার রুপতল, আকার, প্রকৃতি-
হতও এরূপ শর্তহীনতার মতো হাসে
প্রচুর তারকা প্রীতি, প্রেমপ্রীতি সার্থক আকাশে।
(৯- অধিকন্তু)


ক্রমশ ...


ঋণ স্বীকার ঃ কবির কবিতার বই, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, আলোচনা, বিভিন্ন ওয়েব সাইট।