আষাঢ়ের সঙ্গে দেখা হয়
তাকে জিজ্ঞেস করি,
তুমি এত ঝরে পড়ো কেন?
গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যায়
ঘর বাড়ি ভেসে যায় ফসল নষ্ট হয়
মানুষ হাহাকার করে
গরু বাছুর মরে যায় ভেসে যায়।


ঘন মেঘের আড়ালে সে বিদ্যুৎ চমকিয়ে হাসে
বলে, আমি তো সেই আগের মত
বাদল মেঘ সাথে করে আসি
রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতিকে শ্যমাল সবুজ করে গড়ে তুলি
বনে বনে হিল্লোল ওঠে
ফুলে ফুলে ঢেকে যায় দিগন্ত
কচি ধানের পাতা ঢেউ খেলে যায়।
তারপর ঝরঝরিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে বলে
এই যে আমার অঝোর ধারা বয়ে কি যেতে পারছে?
কোথায় আমার গ্রাম ঘেরা নালা নয়নজুলি
কলকলিয়ে চলা খাল বিল?
বড় বড় অট্টালিকায় উঁচু উঁচু কংক্রিটের রাস্তায়
আমি যে নেচে নেচে চলতে পারি না।
কোথায় কত দূরে আমার মিলন মোহনা
সাগরের অপার শান্তি হৃদয়,
যেখানে আমার বাস আমার সুখ দুঃখের আছড়ে পড়া?
কোথায় কত দূরে আমার উথাল পাতাল
আনন্দ অবকাশের ঢেউ ঢেউ অবগাহন?
খুঁজতে খুঁজতে আমি চলতে থাকি
তাতে ভেসে যায় ঘর বাড়ি মানুষ গরু বাছুর
ডুবে যায় তলিয়ে যায় ধুলিসাৎ হয়ে যায় আরো কত কি?


আষাঢ় এভাবে বলে যায় ঝরে যায়
অবিশ্রান্ত টিপটিপ টপটপ ঝরঝর ঝিলমিলিয়ে
একা, একলা একা।


আর আমি খোলা জানলা
বেশি দূর দেখা যায় না
এমন পথ চাওয়া পথের পাশে
ঘর বন্দী অদক্ষ জীবন আঁকা এক প্রাণ।
কত কি স্বপ্নের চুল ভিজিয়ে
রূপরেখার তীরে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাদের বদলে ফেলা জীবনরন্ধ্রে
আমিও চাতক পাখির প্রেম ভরসায়
বেঁচে থাকার শ্লোগানে একা
একলা একা,
আষাঢ়ের আকাশে চেয়ে আছি।