বাবা, আমাদের ক্লাসে যে ফার্স্ট হত
কিংবা সেকাণ্ড থার্ড বা ফোর্থ
তারা পড়ত, খুব পড়ত, দিনরাত
পড়তে পড়তে বুদ্ধিকে কাজে লাগাত
স্যারদের সাথে কথায় কথায় কথা বলত
সমাধান সূত্রে নিজেকে ভাঙত গড়ত।
আমি অত পড়তে পারি নি
অত পড়ার চেষ্টাও করি নি
বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েছি
না বুদ্ধির হাওয়া লাগানো ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি
তোমরা খেলো, মাঠে যাও, কাদা মাখো?
ঘুড়ি ওড়াতে পারো?
কিংবা ধরো সাপ লুডু, তিন গুটি খেলতে পারো?
তারা বলত, এসব কিছু কিছু
সময় পেলে ঘরে খেলি বাইরে খেলি;
স্কুলে তো নিয়মিত খেলি
তুমিও তো সঙ্গে থাকো।
ইচ্ছে করে আমাদের ঠেলা দাও
তোমার জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া আমরা দেখেছি।
বাবা, আমি জেনেছি ওদের বাবা
ওদেরকে কখনও ফার্স্ট হতে বলে নি
চাপ দেয় নি।
ওরা ছাত্রছাত্রী, তাই পড়াশুনাকে তপস্যা ভেবেছে,
যেমন তুমিও আমাকে ফার্স্ট হতে বলো নি
কিংবা সেকেণ্ড বা থার্ড হওয়ার জন্য চাপ দাও নি
শুধু চেষ্টা করে যেতে বলেছো।
সেই চেষ্টায় তারা তাদের বাবার সাথে ছিল
আর আমি?
আজ বড় হয়ে সত্যি বলছি বাবা
আমি ছাত্র জীবনে সেই চেষ্টা করি নি।
জীবনকে ঠেলা দিয়ে
তোমাদের সব কিছু নাচ গান আঁকা আবৃত্তির
আপ্রাণ শিখিয়ে দেওয়া কষ্টে
আমি বাল্যের দোহাই দিয়েছি
ভারী বোঝার আঙুল তুলেছি
অবহেলা করেছি।
স্কুল যাওয়ার পথে যাদের খেলতে দেখেছি
তারা আজও মাঠে ঘাটে
জন মজুর কুলি কামিনের খেলা খেলে
মিছিলে হেঁটে মারামারি করে
তাদের বুদ্ধি বিন্দুমাত্র কোথাও কোন
সামাজিক পারিবারিক সৃষ্টিশীলতার কাজে লাগে নি
সমাজে কোন ছাপ ফেলে নি।
টো টো ঘুরে বেড়ানো ঘুড়ি ওড়ানো দামাল ছেলেটা
রাজা মন্ত্রীদের বোড়ে হয়ে দিন কাটায়।
আর সেই পড়ুয়া ফার্স্টবয় ছেলেমেয়েরা
আমাকে আকাশ মাটি মানুষ বোঝাচ্ছিল
আজ একটু আগে।
বোঝাচ্ছিল আমাদের হাতে
কাদা মাখা খেলাধূলা মাঠে যাওয়া এই পৃথিবীর
একটু একটু ধ্বংসচিত্র
এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখার
আগামী যুগের ইতিবৃত্ত।
সত্যি বলছি বাবা
সেইসব ফার্স্টবয় সেকেণ্ডবয় আজও পড়ে
কি সব আরও অনেক কিছু পড়ে
পড়ে পড়ে আমাদের সবার জন্য
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আঁকে।
আমি আর পড়ি না
আমার মত বাল্য উপভোগ করা ছেলেমেয়েরা
কেরাণী সংসারী ছাপোষা নিজেকে ভাবা
হয়ে গেছি।
আকাশে মাটিতে জলে সবুজে  
সর্বত্র আমরা বিষ মিশাই
আজও অন্যকে ঠেলা দিয়ে
অন্যের মন বিষিয়ে দিয়ে
অধিকারের সর্বজ্ঞ হয়ে যাই,
এখন দখল চাতুরী কাম ক্রোধ লোভ
আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।


সত্যি বলছি বাবা
এবং আরও অনেকের বাবা
তোমাদের সবাইকে বলছি
অনেক বই পড়ার বাহানায়
ভার কমানোর বাহানায়
শিশুবেলা নষ্ট হয়ে যাবে এমন বাহানায়
আমাদের সেই সব ফার্স্টবয়দের আঁকা ভবিষ্যৎ
নষ্ট করে দিও না।
সব ছাত্রছাত্রীকে আরো বেশি করে পড়াও
পড়তে দাও।