আজ কবিতা লিখবো বলে এসেছি
কেননা মানুষের প্রতি আর আস্থা নেই,
শব্দের উপরে বিশ্বাস করে বেঁচে থাকা যায় কিনা
কিংবা অবিশ্বাস করে টিকে থাকা যায় কিনা পূণ্যে
জানার জন্য এসেছি।
আমি জানি কবিতায় অনেককিছু বলা যায়
কিন্তু সেই বাকস্বাধীনতা কি আমাদের আছে?
কাউকে খুন করা কোনো ব্যাপার নয়
ব্যাপার হচ্ছে তার পরে কি হবে,
কাউকে হত্যার পরে আমি নিজে কিভাবে বাঁচবো?
একইভাবে যাচ্ছেতাই কিছু একটা লিখে ফেললাম কবিতায়—
লেখা যায়, কিন্তু তারপর? তারপর এই সমাজ এবং
এর নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা যতোটা সুনিপুণভাবে ছেদ করবে আমার শরীর
কিংবা বিবেকের বিষে নিজে যতোবার দংশিত হবো
সেই বেদনার কথা চিন্তা করে কিছুই লিখিনা আজকাল,
নিজের মুখটাকে বন্ধ রেখেছি কি চমৎকার প্রকৌশলে!
পেটের মধ্যে কথা জমতে জমতে
পাকস্থলী হয়ে গেছে এক গ্যাসবেলুন— কি বিশাল!
এর সুবিধা অবশ্য এই যে, হাওয়ায় ভেসে থাকা যায়
মানে গ্যাস আপনাকে উপরে উঠতে সাহায্য করবে;
মুখটাকে বন্ধ রেখে সমাজের উপরতলায় কি সহজেই উঠে আসা যায়!  
কিন্তু ভয় হয়, কেননা গ্যাস জিনিসটাই ঝুঁকিপূর্ণ—
পত্রিকার পাতা ওল্টালেই দেখা যায় এদিকে বিস্ফোরণ, ওদিকে বিস্ফোরণ
কোথাও বেলুন ফাটছে, কোথাও সিলিন্ডার;
লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে জীবন— যার যায় শুধু সেই নাকি জানে।
আমার তাই ভয় হয় নিজের পাকস্থলীটা ফেটে যাবে ভেবে
নিজের হাতে নিজের নাড়ি-ভূড়ি আঁকড়ে ধরে হাসপাতালে ছুটছি— ভাবা যায়!
নিজের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাই কবিতা লিখতে আসা
ঢেঁকুর উঠুক কিংবা পশ্চাৎ-বায়ু
গ্যাস যদি বের নাহয়, বুকে উঠবে ব্যথা।
আমি কবিতায় তাই কিছু কথা বলতে এসেছি।
কিছু শোনাতে এসেছি, কিংবা শুনতে এসেছি নিজেই
কারো হাত ধরে হাঁটতে এসেছি, কিংবা এসেছি বসতে
যতোদিন তরী পার নাহয়, ততোদিন এসেছি থাকতে।
কেননা আমি জানি চাঁদ আমাকে ছুঁড়ে দিতে পারে
সূর্য দিতে পারে অন্ধকার,
কিন্তু কবিতার সাথে যে বাঁধন আমার, তাতে মৃত্যুরও আছে অঙ্গীকার।
আমি তাই কবিতায় ঠাই পাবো জেনে এতোদূর, এতোখানি পথ
একা খালি পায়ে একলা রজনী এসেছি।
শুধু কবিতায় ঠাই পাবো জেনে ভরা সমুদ্রেও ডিঙে নৌকায় করে ভেসেছি।
আমি আর কিছু নয়, বনলতা ভেবে কবিতার চুলে এসে মেতেছি।


১৬ জানুয়ারি ২০২২।