—“নিধিরাম! নিধিরাম! বাবা যাসনে!
ঢাল নাই, তলোয়ার নাই
ক্যামনে করবি লড়াই!”


—“ওগো মা! চিন্তা কইরোনা!
ঢাল নাই, তলোয়ার নাই
তো কি হইছে! মুখ তো আছে!
কথা দিয়ে লড়বো
নইলে পাইদে দিবানে,
পাছা তো আছে!
হা হা হা হা হা!”


এভাবেই মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যায় নিধিরাম। এই সেই নিধিরাম সর্দার, যাকে ঘিরে আজ এতো অনাটন, এতো মারামারি! অথচ তাঁর কাছে একে-ফোরটিসেভেন তো দূরের কথা, একটি চাইনিজ চাকুও ছিলোনা। কেবল ছিলো মুখ তথা কথা বলার মাধ্যম এবং পশ্চাৎদেশ তথা বায়ু নিঃসরণের উপায়। এই দুটো সৎ তবু আপন মায়ের পেট থেকে পড়েই কুড়িয়ে পাওয়া, দুটো মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইকে (!) নিয়ে নিধিরাম এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সাহস দেখিয়েছিন এই সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে আজকের এই গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করেছেন একেবারে খালি হাতে। তাই আসুন ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ এবং পাতা কুড়ানি ছেলে ও মেয়েরা, আমরা এই নিধিরাম অর্থাৎ অধম নিধির কাছ থেকে কিছু শিক্ষাগ্রহণ করি।


—“শোনেন শোনেন ভাই-বেরাদার, শোনেন দিয়া মন
নিধিরাম সর্দারের কথা করিব বর্ণন; আহা করিব বর্ণন।।


নিধির হাতে ছিলোনাকো কোনো অস্ত্র-শস্ত্র
তবু নিধি একাই এসে বাঁধাইলো ভূকম্প; আহা বাঁধাইলো ভূকম্প।।


কইলো নিধি, “মরলে মরমু, যা করার তুই কর
ভূতের রাজা আমার কণ্ঠে দিইয়া গ্যাছেন বর; আহা দিইয়া গ্যাছেন বর।।


দেখতাছি তো কতোশতো মানুষ তোরা মারিস
দুর্নীতি আর খুন-খারাবি ধর্মের নামি ঢাকিস; আহা ধর্মের নামে ঢাকিস।।


জনগণের পোয়াবারো, খুব ওরা হয় বোকা
তোদের কথা লইয়া কানে আঙুল চোষে খোকা; আহা আঙুল চোষে খোকা।।


ঢোল বাজাইয়া শিক্ষা-দীক্ষার কোনো হয়নাই লাভ
ঝুলাইয়া মুলো রে তোরা খাইয়া লইছোস ডাব; আহা খাইয়া লইছোস ডাব।।


মরলে মানুষ বিস্ফোরণে এদের যায়না এসে
পুছবে এরা নিহতদের কি নাম ছিলো শেষে; আহা কি নাম ছিলো শেষে।।


হিন্দুর বাড়ি গিইয়া কইবে খাইলো সব যবোন
মুসলমানের বাড়ি গিয়াও সাফ করবে লবণ; আহা সাফ করবে লবণ।।


নিমকহারাম এদের মতোই দেশের ইজ্জত লোটে
এদের মুখেই আবার বেশি দেশ-পিরিতি ফোটে; আহা দেশ-পিরিতি ফোটে।।


কইলে কিছু তোমার নামে কইরা দেবে মামলা
থালায় খাইয়া হয়না এদের লাগে বিশাল গামলা; আহা লাগে বিশাল গামলা।।


সময় থাকতে হে জনগণ এখন একটু বোঝো
ছাইড়া দিইয়া দুশমনি ভাই একসাথে পথ খোঁজো; আহা একসাথে পথ খোঁজো।।


আসল মোদ্দা চাকরি-বাকরি, পণ্যের বাড়তি দাম
বাজারে গিইয়া যে তোমার সইরা যাচ্ছে পাম; আহা সইরা যাচ্ছে পাম।।”


এই কথাটা যেই বলিলো বাবা আমার নিধি
একটি গুলি আইসা বুকে তাঁহার গেলো বিঁধি; আহা তাঁহার গেলো বিঁধি।।


লুটাইয়া মাটিতে পইড়া হইয়া গিইয়া শেষ
বুঝাইয়া গেলো গো নিধি কি আজব দেশ; আহা কি আজব দেশ!!


ঢাল নাই–নাই তলোয়ার, নিধিরাম সর্দার
বুঝলো যে তাহার কথা সে আসল বোঝদার; আহা সে আসল বোঝদার।।”


জ্বি হ্যা, সুপ্রিয় দর্শক-শ্রোতা, আর এভাবেই আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিলেন বিপ্লবী নিধি। নিধি তো বিধির লিখন খণ্ডন করতে না পেরে পরপারে চলেই গেলেন, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আমরা কি শিখলাম? যে আদর্শের সন্ধান আমাদের দিয়ে গেলেন নিধিরাম সর্দার, তা কি আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম? আর যদি সক্ষম নাও হই, এতোটাই কি অক্ষম আমরা যে এই নিঃস্বার্থ বিপ্লবীর জন্য আমাদের হাত উপরে উঠবেনা? প্রতিবাদ না করুক, এই হাত কি করতে পারবেনা নিধিকে একটি স্যালুট? আপনারা করতে পারুন না পারুন, আমি স্যালুট জানাচ্ছি নিধিরাম সর্দারকে; নিজের আদর্শে অটল থাকতে পারায় আমি তাঁকে জানাচ্ছি টুপিখোলা অভিবাদন। আর এর মাধ্যমেই টেলিভিশন ও বেতারযোগে আমাদের এই সম্প্রচার এখানেই সমাপ্ত হলো। আবার কথা হবে আমাদের, তার আগ পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, বুদ্ধিদীপ্ত থাকুন এবং সংগ্রাম করতে থাকুন জীবনের। জীবনযুদ্ধে পরাজিত কিংবা বিজয়ী, আমরা সম্মান জানাই প্রত্যেক যোদ্ধাকেই।


৮ মার্চ, ২০২৩