বিরাম বা যতিচিহ্ন:


ডট ( . ) ব্যবহার :
বাংলায় সংক্ষিপ্ত শব্দে ডট ব্যবহার হবে। যেমন— ড. (ডক্টর), লি. (লিমিটেড), মি. (মিস্টার) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Govt. (Government), Ltd. (Limited), Mr. (Mister), Dr. (Doctor)। ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত বর্ণ রূপে (Abbreviation) ডট ব্যবহার না করাই ভালো। যেমন— SSC, HSC, SMS, MMS, BSS, BA, JSC, MPO, UN, BGB, BSF, RDRS, BRAC, BPL, IPL, ICC, BBC, WFP; বাংলায় এসএসসি, এইচএসসি, এসএমএস, এমএমএস, বিএ, বিকম, বিএসএস, বিএসসি, সিইনএড, পিএইচডি, পিসি, আইসিসি, ইউএন, বিবিসি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ডট ব্যবহার করা ভুল নয়—তবে আমাদের দ্বারা ভুলের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— BSc, PhD লিখতে গিয়ে B.S.C., P.H.D. লেখা। BSc, PhD-তে ডট ব্যবহার এভাবে হবে B.Sc., Ph.D. শুধু মাঝে ডট দিলে চলবে না; যেমন— B.Sc, Ph.D অর্থাৎ Sc. ও D.-এর পরেও ডট হবে—অনুরূপ বাংলাতেও। সুতরাং ভুল এড়াতে এবং বাংলা বানানের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ডট ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এসব শব্দে হাইফেন ( - ) ও কমা ( , ) ব্যবহার করা যাবে না।


কোলন ( : ) ব্যবহার:


উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত বোঝাতে কোলন ব্যবহার হয়।
বাংলা সন্ধি দু প্রকার : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।


ব্যাখ্যামূলক/বিবরণমূলক শব্দে কোলন ব্যবহার হয়।
নাম: শামস
পিতার নাম: শামসুল
ঠিকানা: গ্রাম– পায়রাবন্দ, ডাকঘর– পায়রাবন্দ, উপজেলা– রংপুর, জেলা– রংপুর।
বিষয়: বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন।
মোবাইল: ০১*******০০
নিচ: নিচু, তল, নিচের দিক
নীচ: নিকৃষ্ট, হীন
গাণিতিক ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহার হয়।
১:৯ (অনুপাত)


সময় ও তারিখে কোলন ব্যবহার হয়।
২:৩০ মিনিট
তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩


নাটকের সংলাপের আগে কোলন ব্যবহার হয়।
দুকড়ি: কী চাই?
কাঙালি: আজ্ঞে, মহাশয় হচ্ছেন দেশহিতৈষী।


[দ্রষ্টব্য: ১ হতে ৪৪ নং ক্রমিকগুলো লক্ষ করলে কোলনের ব্যবহার বুঝতে সুবিধা হবে। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে বিসর্গ আর কোলন এক নয়। বিসর্গ বাংলা বর্ণ; কোলন যতিচিহ্ন।]


হাইফেন/যুক্তচিহ্ন ( - ) ব্যবহার:
সমাসবন্ধ পদে হাইফেন ব্যবহার হবে। যেমন— উপ-সহকারী, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম, মুহাম্মদ (সা.)-কে আল-আমিন বলা হতো, বিনোদ (২৮)-এর মৃত্যু, Sub-district, SMS-এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে, ISF-সহ, ৩-এর, ৫-সহ ইত্যাদি। এ ছাড়া শব্দকে ভেঙে দেওয়া ক্ষেত্রেও হাইফেন ব্যবহার হয়। যেমন— আন্ত-
র্জাতিক ইত্যাদি। হাইফেনের শুরুতে বা শেষে কোনো ফাঁকা (স্পেস) হবে না। অর্থাৎ দুটি শব্দকে একত্রে রাখবে।


ড্যাশ (—) ব্যবহার:
এম ড্যাশ (—) আকারে হাইফেনের তিনগুণ বড়। একই লাইনে বা, একই প্যারায় যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তারচেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন— তোমরা দরিদ্রের উপকার কর—এতে তোমাদের সম্মান যাবে না—বাড়বে। অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষেও ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন—
বাংলাদেশের রাজধানী হচ্ছে—
ক. চট্টগ্রাম খ. খুলনা গ. ঢাকা ঘ. রাজশাহী।


এন ড্যাশ (–) আকারে হাইফেনের দেড়গুণ বড়। সমার্থক ও বিপরীত ধর্মী শব্দে এন ড্যাশ ব্যবহার হয়। যেমন— দেশি–বিদেশি, সত্য–মিথ্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া থেকে বা হতে অর্থেও ব্যবহার হয়। যেমন— ১০–১২ বছর, ঢাকা–খুলনা ইত্যাদি। এ ধরনের শব্দে হাইফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।


কোটেশন মার্ক/ইনভার্টেড কমা/উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ “ ” ) ব্যবহার:
শব্দকে চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে একটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন— ‘সোনার তরি’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। উক্তিবাচক শব্দে দুটি উদ্ধৃতিচিহ্ন ব্যবহার হবে। যেমন— রেজা বলল, “আমি এখন স্কুলে যাই।”


অ্যাপস্ট্রফি/লোপচিহ্ন ( ’ ) ব্যবহার:
শব্দকে সংক্ষিপ্তকরণে এর ব্যবহার হয়। যেমন— ’৭১ সাল (১৯৭১ সাল)। কবিতায় ছন্দের মিল রাখতে লোপচিহ্ন ব্যবহার হয়। বাংলা বানানে লোপচিহ্নের ব্যবহার বর্জনীয়।


অবলিক/স্ল্যাশ/অথবা/বিকল্পচিহ্ন ( / ) ব্যবহার:
বিকল্প শব্দের মাঝে অবলিক ( / ) বসে। সহজ কথায় এটা নয় ওটা এরূপ বোঝাতে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন—
বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত/অবিবাহিত ইত্যাদি। যেখানে দু-ই বিদ্যমান যেখানে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার হবে না। যেমন— বিদ্যালয়ে শিক্ষক/কর্মচারী সংখ্যা কম বা, ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি। শুদ্ধরূপ হচ্ছে— শিক্ষক–কমচারী ও ছাত্র–ছাত্রী (ছাত্রছাত্রী)।
স্মারক ও তারিখে অবলিক ব্যবহার হয়। যেমন— ঢাবি/পরী/২০১২-১৩, তারিখ- ১২/১২/২০১২খ্রি.। ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে লেখার সময় বলা হয় স্ল্যাশ।


যতিচিহ্নের কিছু অশুদ্ধ ও শুদ্ধ ব্যবহার :
চিহ্নের নাম>>>>>> শুদ্ধ >>>> অশুদ্ধ
কোলন >>>>>>> ( : ) >>>>( ঃ )
কোলন-ড্যাশ >>> ( :— ) >>> (ঃ- ) [বিসর্গ ব্যবহার হবে শব্দগঠনে। যেমন- দুঃখ, ইতঃপূর্বে।]
ড্যাশ>>>>>>>> ( — )>>>> ( - )
হাইফেন >>>>>> ( - ) >>>> ( — )


অশুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা/২০১২, ২০১২/১৩ শিক্ষাবর্ষ, ২০১২/১৩ অর্থবছর, ১ জানুয়ারি/২০১২ ইত্যাদি।


শুদ্ধ ব্যবহার: পরীক্ষা ২০১২ অথবা, পরীক্ষা–২০১২, ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্


লেখায় কোন ভুল হলে ক্ষরার দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি--