মা, তুমি কেমন আছো ?
আর, তোমার চোখের মণি ?
যাকে, চোখে হারতে সব-সময় তুমি।
সে কেমন আছে তা কি জানো তুমি?


তুমি জানো মা-
তোমার সেই হাতের ছোঁয়া ,
সেই যেদিন থেকে তুমি-
হয়ে গেলে ঐ নীহারিকা,
আজও আমি রোজ রাতে ঘুমোই -
তোমারই সেই হাতের ছোঁয়ায়।


জানো মা, তুমি যখন -
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ,
কেবল আমাদের জন্য -
পরিশ্রম করেছ অক্লান্ত ,
তখন আমি হয়তো ভাবতাম -
মায়ের বোধহয়, কষ্ট-বোধই নেই।
কিংবা হয়তো ভাবতাম -
তোমার বোধহয় কষ্টই হয় না।
কিংবা হয়তো ভাবতাম -
যেদিন তোমার বার্ধক্য আসবে ,
সেদিন থেকে আর কষ্ট করতে দেবোনা তোমাকে।


কিন্তু দ্যাখো মা ,
আমার সব ভাবনাগুলো কেমন-
আজও ভাবনা হয়েই থেকে গেল।


সেই ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০০৩ দুপুর সাড়ে বারোটা ,
সেদিনও তুমিই এলে আমার কাছে।
এসে বসলে আমার পাশে।
তোমার হাতের কোমল ছোঁয়া -
বুলিয়ে আমার গায়ে ,
তুমি বললে আমায় ডেকে -
'এই দেখে নে আমাকে '।
সেদিনও কষ্ট করতে দাওনি আমাকে।
তুমিই এসেছিলে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে -
তোমার দিব্যলোকে যাত্রা থামিয়ে, আমার কাছে।


তোমার নীরব শ্রম,
কেবল তোমার ভালোবাসা পাওয়াটা -
যেন আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
কোনোদিন যে এটা হারিয়ে যেতে পারে -
একথা, যেন কখনো ভাবতেই পারিনি।
যেদিন তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে -
আমি কিন্তু জানতাম, তোমার অসুখটা কি ?
কিন্তু তবুও মনে মনে ভাবতাম -
তুমি আমার মা, তুমি আমাকে ছেড়ে -
কোথাও যেতেই পার না ।
এমনই ছিল আমার বদ্ধ-মূল ধারণা।


মা , তুমি সারা জীবন -
কষ্ট করেছ আমাদের জন্য ,
আমরা সবাই একটু ভালো থাকব বলে।
তুমি সকলের খাওয়ার শেষে -
উদ্বৃত্তটুকুই খেতে পরম- তৃপ্তিতে।
এমনকি কখনো তুমি নিজে না খেয়ে-
মাছের শেষ টুকরোটাও তুলে দিতে -
আমাদের পাতে।
বলতে তুমি -
এখন আর মাছ ভালো লাগেনা খেতে।


কালের চক্রে- আজ মা হয়েছি আমি ।
তাই সেদিন যে তুমি কথায় দিয়েছিলে ফাঁকি ,
আজ কিন্তু মা -
আমি বেশ বুঝতে পারি।


মা জানো ,
আজ আমার সব- আছে ।
ভালো বাড়ি আছে,  গাড়ি আছে ।
একটা সুন্দর সংসার আছে ।
যা- যা থাকলে একটা মানুষকে সবাই সুখী বলে -
তার সবই আছে।


কিন্তু মা- আমি ভালো নেই।
আমার সব কিছু থেকেও -
যেন আজ আমার মনে হয় -
আমি শূন্য- আমার কিছুই নেই।


আজ, একবার শুধু -
আমি তোমাকে কাছে পেতে চাই ।
একবার আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ,
শুধু বলতে চাই-
মা- আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
তোমাকে খুব খু-উ-ব ভালোবাসি।