গরীবের জন্ম (আয়না সনেট)
রাজুব ভৌমিক
পেতে শুধু অবহেলা জন্মায় গরীব,
ক্ষেতে করে শ্রম বন্ধ্য, ফসলে মুনীব;
নিষ্ফল কপাল তার, শোষিত জীবন,
বল হীন বুকে সর্ব, লাথিতে মরণ।
ক্লেশ দু:খ নিয়ে, অতিবাহিত সংসার,
বেশ হল ভাবে, ধনাঢ্য যে পরিবার;
করুণ কাহিনী তার, ভূতেও না শুনে,
তরুণ আত্মা ঝরে, রাখে না কেউ মনে।
মহাকাব্য হয়নি কভু, কথা নি:স্বের,
অদ্রাব্য তাহার গল্প, করুণা ভবের;
ডরে নাহি চলে, ভবে দিন গরীবের,
মরে সে অযথা, নিয়ে বোঝা সংসারের।
গরীবের জন্ম ভবে, জন্যে ভুলিবার;
পাপের কুদৃষ্টি যে, সারাজনম তার।
০৪/২৯/২০১৯
ম্যানহাটন, নিউইর্য়ক
আয়না সনেট নামটি কেন দিলাম? কারন এই সনেটটি দুই দিক থেকেই পড়া যাবে। যদিও এটি একটি সনেট কবিতা কিন্তু এই কবিতার বিশেষত্ব হচ্ছে এই কবিতার ভিতরে আরেকটি কবিতা আছে। পড়ার চেষ্টা করুন।
যেমন ধরুন:
পেতে শুধু অবহেলা জন্মায় গরীব;
২+২+৪+৩+৩=১৪
ক্ষেতে করে শ্রম বন্ধ্য, ফসলে মুনীব।
২+২+২+২+৩+৩=১৪
শেষ দিক থেকে পড়লে হবে:
গরীব জন্মায়, অবহেলা শুধু পেতে;
৩+৩+৪+২+২= ১৪
মুনীব ফসলে, বন্ধ্য শ্রম করে ক্ষেতে।
৩+৩+২+২+২+২= ১৪
ঠিক আয়নার মত। তাই না?
আমার সব সনেট কবিতাগুলো স্বতন্ত্র (মূলত চৌদ্দ অক্ষরের, চৌদ্দ লাইন বিশিষ্ট, ককখখ, গগঘঘ, ঙঙচচ,ছছ অন্তমিল নিয়ে সাজানো)। এই কবিতাটিও ব্যতিক্রম নয়। পার্থক্য হচ্ছে এই কবিতাটি দুই দিক থেকেই চৌদ্দ অক্ষরের, চৌদ্দ লাইন বিশিষ্ট, ককখখ, গগঘঘ, ঙঙচচ,ছছ অন্তমিল নিয়ে সাজানো।
বাংলা সাহিত্যের কোষে নতুন কিছু জমা দেব বলে সনেটের নতুন এই ধারার সৃষ্টি করা। এটি খুব একটি সহজ পদ্ধতি নয়।পূর্বে প্যালিনড্রোম বা Palindrome পদ্ধতিতে সাধারন কবিতা লেখা হয়েছে। কিন্তু কখনো সনেট লেখা হয়নি। ৭৯ সালে প্রথম প্যালিনড্রোম কবিতা লেখা হয়েছে কিন্তু Henry Peacham সর্বপ্রথম ১৬৩৮ সালে প্যালিনড্রোম পদ্ধতিতে লেখা তার বই The Truth of Our Times প্রকাশ করেছেন। চীনের বিখ্যাত কবি Su Hui সবচেয়ে জটিল একটি প্যালিনড্রোম কবিতা লেখেছেন। কিন্তু তিনি একটিই লেখেছেন কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ প্যালিনড্রোম সনেট লিখে নি।
আশা করি সবার এই কবিতাটি ভাল লাগবে।
রাজুব ভৌমিক