আজ আমার কথা তোমাদের শুনতেই হবে
অজস্র কথা জমে আছে। লক্ষ কোটি বছরের কথা
তিল তিল করে জমেছে বেদনার পাঁজর
আজ আমার কথা তোমাদের শুনতেই হবে!


হ্যাঁ আমি ঈশ্বর বলছি
তোমাদেরই তৈরি করা 'প্রিয় ঈশ্বর'
সেই আদিম যুগের কথা
প্রাচীন কোনো গুহার রাজত্বের দখল নিতেই
আমাকে জন্ম দিয়েছিলে তোমরা
তারপর থেকে এক এক করে আমার ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছো
তোমাদের সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন রুপে করেছো চরিত্রায়ন
আমার এই অদৃশ্য শরীরের মঞ্চায়ন করেছো বারংবার
কখনো মসজিদ, কখনো মন্দির, কখনো গির্জা কিংবা প্যাগোডায়
হ্যাঁ, আমি তোমাদের ঈশ্বর বলছি।


অস্তিত্বহীন এই আমাকে টিকিয়ে রাখতে তোমরা
সর্বত্র চালু করেছো রক্তক্ষয়ী ব্যবসা।
যদিও এতে আমার তেমন ব্যথিত  হওয়ার কথা নয়!
যখন নিজেই বুঝতে পারিনা আসলে কে আমি?
কি আমি? কেনই বা আমি?
তখন এই অস্তিত্বহীন বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।


তোমরা বলো, আমি নাকি সর্বত্র বিরাজমান। আমি নাকি মঙ্গল, আমি স্রষ্টা ।
আমিই নাকি তোমাদের দোষ-গুন, ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্যের নির্ণায়ক!
আমার নামে তোমাদের পূজা অর্চনার মেলা হয়।
আমার নামে আমারই কল্পিত পায়ে উৎসর্গের নামে বলি দাও সব নিরীহ প্রাণ
সেই রক্তাক্ত শানিত অস্ত্র উচিয়ে জপ করো আমার কল্পিত খুশির মন্ত্র


হ্যাঁ আমি তোমাদের ঈশ্বর বলছি
এ সমাজের ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য বিচারের আমি কেউ নই।
বিশ্বাস করো, এ যাবৎকাল যা কিছু নির্ণয় হয়েছে তার কোনটাই আমি করিনি
সবই করেছো তোমরা, তোমাদেরই স্বার্থে
কোথাকার কোন আদম না ইভ!
তাদেরকে আমি কখনই চিনতাম না
তাদের চিনেই বা আমার কি লাভ?
কে আপেল খেলো না গন্ধম খেলো তাতেই বা আমার কি!
অথচ, তোমরাই তাদের জন্মের দায়, ভুলের দায় চাপিয়েছো আমার কাঁধে।


হ্যাঁ, আমি ঈশ্বর বলছি।
মনে পড়ে! বহুকাল আগে
তোমরা হরণ করেছিলে মরিয়মের কুমারিত্ব
তাও আবার আমারই জন্য তৈরি করা এক 'পবিত্র' গৃহে
তোমরাই ইতোপূর্বে সেই সঙ্গমকে ব্যাভিচার বলে নিষিদ্ধ করেছিলে।
অথচ এই কুমারিত্বের অভিশাপের দায়ে অভিযুক্ত করেছো আমাকেই
আমি হয়েছি নিষিদ্ধ ব্যাভিচারের দোষে দোষী
সেদিন আমাকে রুপ দিয়েছিলে নারী শরীরভোগী এক ঈশ্বরের
যে নিজের শরীরের অস্তিত্বের স্বাদ কখনই পায়নি
সে অন্য শরীর ভোগ করে কি করে?


তোমরা আমারই নাম করে ভোগ করেছো অসহায় এবং নিরীহদেরকে। ক্ষমতাহীনদেরকে।
তোমাদের অসভ্য যৌনতার থাবা থেকে রক্ষা পায়নি তোমাদেরই পুত্রবধূরা, কন্যারা।
সকল জাগতিক যাবতীয় অজাচার, অনাচারকে হালাল করেছো আমারই নামে
অথচ, তোমাদের রক্তাক্ত ক্রোধে বারংবার আমি নির্বাক, নিশ্চুপ কেদে যাচ্ছি
তোমাদের নির্ধারিত অসীম শূণ্যতায়।
আমার নামে তোমরা হত্যা করে যাচ্ছো তোমাদেরকেই
নৃশংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে সব কিছুর দায় চাপাচ্ছো আমার উপর
তোমরাই বলো আমি নাকি পবিত্র, পরম করুণাময়
আবার আমারই পরিচয় দিচ্ছো রক্তপিপাসু হিংস্রতায়
এমন দ্বিচারিতা কোন ঈশ্বরের হতে পারে না
সে আর যাই হোক, ঈশ্বর হতে পারে না।


হ্যাঁ, আমি তোমাদের সৃষ্ট ঈশ্বর বলছি
তোমাদের মগজের উগ্রতাকে ঝেড়ে ফেলে
"কোনো স্রষ্টা তার এক সৃষ্টিকে দিয়ে অন্য সৃষ্টিকে হত্যা করতে পারে না"
এই সাধারণ কথাটা অন্তত বোঝো।
তোমরা শান্ত হও, মানবিক হও, ভালোবাসতে শেখো।
হে পরম 'করুণাময়' মানুষ,
তোমাদের লাভ-ক্ষতি, পাপ-পূণ্যের হিসেবের খাতা থেকে
এই অস্তিত্বহীন অসহায় ঈশ্বরকে মুক্তি দাও।


২৭-০৪-১৯
সকাল ৫ঃ০০
বরিশাল