"চেতনায় রাজ বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব"
       (স্বরবৃত্ত ছন্দ মাত্রায় রচিত)


রচনায়ঃ প্রফেসর ড. মোস্তফা দুলাল
পিএইচ.ডি. (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
রচনাকালঃ ১২/০১/২০২১


মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বার্তায় আহলাদে রাঙানো ১০ জানুয়ারি,
কৃষক শ্রমিক মজুর সহ সব বাঙালী মোরা কভু
এ দিনটি কি ভুলতে পারি?


নিপিড়নে নির্যাতনে ও শোষণে মোদের রক্ষায়
সবার আগে আসেন আগায়,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর তার নিজ জীবন বিপদ গ্রস্ত করে পড়েন সদা ঝাঁপায়।


সারা জীবন বঞ্চিত ও দারিদ্র্য সব মানুষ জনের পাশে সদা বীর বেশে রয়,
তাদের জন্য বহু বছর কারা বরণ করে তিনি বাঙালীর মন করেছেন জয়।


দিনে দিনে তিনি মিশে যান প্রতিটি বাঙালীর মন
মেজাজ চিন্তা ও চেতনায়,
হয়ে ওঠেন সবার স্বজন পেয়ে যান ঠাঁই বাংলার
প্রত্যেক পরিবারের লোক মর্যাদায়।


স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় গুলোয় বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবের মুখের কথায়,
সব বাঙালীর কর্মকাণ্ডে মনন মেধায় ও চেতনায় সদা আইনের বিধি হয় যায়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এমন সময় সন্ধিক্ষণের অপেক্ষাতে রয়েছিলেন,
সুযোগ বুঝে ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তিনি বাঙাল জাতির উদ্দেশ্যে দেন।


বলেন তিনি এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,
এসব বজ্র কন্ঠ স্বর খুব দ্রুত ছড়ায় সারা বাংলার শহর বন্দর গাঁও এবং গ্রাম।


পূর্ববাংলার আবাল বৃদ্ধ নারী সহ সকল মানুষ অনেক আশায় বুকখান বাধে,
পঁচিশে মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের   স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়।


পাক হানাদার বাহিনীরা তখন তাঁকে নিক্ষেপ করে
পাকিস্তানের গারদ খানায়,
আকাশ বাতাস কম্পমান হয় বিদ্যুৎ বেগে সারা বাংলার ঘরে ঘরে খবর ছড়ায়।


স্বজন হারার করুণ ব্যথা বেজে ওঠে হৃদয় মাঝে
সব বাঙালীর ঘরে ঘরে,
সন্তান হারা বৃদ্ধা যেন চেয়ে থাকে উদাস মনে
আঁখি নোনা জলে ভরে।


প্রসূতি মা তার সন্তানের প্রসব জ্বালা ও যন্ত্রণা
সব বেমালুম গেলো ভুলে,
শিশুর কান্না ভুলে গিয়ে মা অপলক দৃষ্টিতে রয়
বক্ষ ভাসে নয়ন জলে।


জননীর কোল জুড়ে থাকা দুদ্ধ পোষ্য শিশুটিও মায়ের করুণ চাওয়া দেখে,
দুধ পান করা বন্ধ করে মায়ের করুণ বদন পানে অপলকে চেয়ে থাকে।


হটাৎ এমন ঘটনাতে বাড়ির কর্তা বিমর্ষতায়
নিমজ্জিত অবশ পা তার,
মাসওয়ারি বাড়ির ভৃত্য যেন থাকে সদা চুপচাপ বদন খানা করে আঁধার।


স্কুল গামী সন্তানেরা মুখ ভার করে বসে আছে
হাতে খাতা বই ওঠে না,
গৃহ শিক্ষক মলিন মুখে রয় উঠানে চুপচাপ যেন
কথা মুখে তার ফুটেনা।


নববধূর হাসি মাখা সুবদনে কে বা কারা
কালি মাখায় এক নিমিষে,
শাড়ির আঁচল তার বাতাসে নড়ে চড়ে কেশগুলো তার এলোমেলো নিশ্চুপ রয় সে।


স্কুল কলেজ মক্তব মন্দির ও পেগোডায় নেই
চলাচল নেই কোলাহল রয় ম্রিয়মাণ,
দম্পতিরা দুখের সায়রে নিমজ্জিত ভুলে গেলো সকল রকম মান অভিমান।


পাখ পাখালি কীট পতঙ্গের সব কোলাহল যেন নিথর নিস্তব্ধ হয় নেই তো কূজন,
দুখে শোকে শোকাতুর হয় বাঙালীর মন কানের পর্দা কাজ করেনা মোদের এখন।


নীল নীলিমায় মেঘের ভেলার ফাঁকে ফাঁকে উজ্জ্বল হাসি সদা লাগে যে বেমানান,
আকাশ গঙ্গায় চাঁদের আলোয় কেউ হাসে না দেখে না চাঁদ খুলে তার মন হৃদয় ও প্রাণ।


তট তটিনীর কুলু কুলু মধুর ধ্বনি বাগ বাগিচায় মর্মর শব্দ শুকনো পাতার,
সকল শ্রেণি এবং পেশার মানুষ জনের নিকট সবি অনুভূতি হীন হয় এবার।


গোয়াল ভরা গরু মহিষ গুলো যেন বোবা কান্নায় ভেঙে পড়ে অবিরত,
রাখাল বালক সঠিক সময় আসেনি আজ সেয়ো বুঝি অতি কান্নায় আছে রত।


পাহাড়ের সব পাহাড়ি ফুল মঞ্জুরীরা লজ্জায় মস্তক করছে যে অবনত,
পাহাড়ি সব ললনারা হেসে হেসে আসেনা ফুল তুলতে নিত্য দিনের মতো।


জেলেদের হাত পা নিস্তেজ ফেলতে চায়না জাল জলাশয় ব্যাঙ লাফায় না জলে ঝুপ ঝাপ,
মাছের চলন লাফালাফি বন্ধ এখন শান্ত দেখায় সব জলাশয় যেন চুপচাপ।


মলয় কুসুম কলি ফোটে আপন মনে মৃদু মন্দ বাতাসে দোল যে সদা খায়,
আলোক চিত্র তুলতে কপোত ও কপোতী এবং যুবক ও যুবতী নেইতো সেথায়।


শিমুল পলাশ হাসনাহেনা কৃষ্ণচুড়া গোলাপ বকুল রকমারি কতো যে  ফুল,
দোলা দেয়না কবির কোমল মনন মগজ ও
চেতনায় লেখা বন্ধ থাকে বিলকুল।


মহান নেতা জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের
কারা বরণ এর খবর পায়,
পাহাড়ি সব ঝর্ণাগুলো করুণ সুরে কেঁদে কেঁদে আঁখি ভরা পানি ঝরায়।


নেই কোলাহল নেই যে ব্যস্ত পারাপারে জল যান
গুলো একসাথে রয় নঙোর করা,
জল তরঙ্গের তালে তালে মাথা নেড়ে যেন কথা বলাবলি করে তারা।


হাঁকা ডাকা ও কোলাহল থেমে গেছে দোকান
পাটের ঝাপি গুলো তোলেনা কেউ,
গঞ্জের হাটে  খাঁ খাঁ করে নত শিরে বসে সবাই চেঁচামেচির নেই কোন ঢেউ।


কোর্ট কাচারি আদালত ও অফিসগুলোয় কথা ফুটে নাতো মানুষ জনের মুখে,
কাচারির সব বাঘা বাঘা উকিলগুলো মুখ ভার করে চুপচাপ বসে মনের দুখে।


জনমের সাধ স্বপ্ন ভরা বাসর ঘরে নব বধূ
নত শিরে চুপচাপ বসে,
পাত্র আসে চুপিসারে মলিন মুখে নব বধূ চায়না এখন মুচকি হেসে।


বর ও কনে রয় একখানে কথা কয় না অন্তর মেলে রয় যন্ত্রণা মনের আয়নায়,
বদন করে ভার দুজনে প্রাণ খুলে হাসেনা আর কয়না কথা মনের ব্যথায়।


ছাত্র ছাত্রী নেতা নেতৃ তরুণ এবং তরুণীরা
সকলে রয় মহা ভাবনায়,
কিভাবে এ পুর্ব বাংলার জনগণের এমন গুমোট পরিস্থিতি সামলানো যায়।


অচিরেই যে বাংলার গগন ভরে উজ্জ্বল ধ্রুব তারার  আবির্ভাবে মেঘ সরে যায়,
বঙ্গবন্ধু খুরধার শক্তি হয়ে ফিরে স্বাধীনতা
কামিদের মন ও চেতনায়।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ তিনটি মিলে হয় একাকার,
এ তিন সত্তার তিনটি ধারা মিশ্রিত হয় এক মহোনায় পৃথক করার উপায় নেই আর।


ঘরে ঘরে গ্রামে গঞ্জে হাটে ঘাটে ও বাজারে জনগনের অন্তর ভরে,
প্রচন্ড তেজ ক্ষিপ্র গতি তে রাজ বন্দী বঙ্গবন্ধু ঘরবসতি শুরু করে।


চায়ের দোকান পানের দোকান ফসলের মাঠ খেলার মাঠে সব ধরনের গল্পের আড্ডায়,
রাজ বন্দী শেখ মুজিব এসে যেতেন তাদের কথা কাজে এবং চিন্তা ও চেতনায়।


গাড়ি ঘোড়া বাস টার্মিনাল রেল স্টেশন বিমান বন্দর চলমান বাস ট্রেন সর্বত্র,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আধিপত্য বিস্তার লাভ
করে সদা একচ্ছত্র।


তিনি থাকতেন ভারতে সব আশ্রয় নেয়া কোটি কোটি স্বরণার্থীর মনের মধ্যে,
স্বরণার্থী যুবক এবং যুবতীরা অম্লান চিত্তে
যোগদান করে মুক্তি যুদ্ধে।


তিনি থাকতেন মুক্তি যোদ্ধার হর্ষমুখোর রিক্রুট স্থানে আনন্দময় ট্রেনিং মাঠে,
গেরিলাদের ট্রিগার চাপে মুক্তি যোদ্ধার সম্মুখ যুদ্ধে
ফায়ার করা অস্ত্রের বাটে।


সব সাহিত্যিক সাংবাদিকের ও লেখকের লেখার আগায় গায়কের গানের সকল কথায়,
নির্ভয় বহুল প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দেশ মুক্তির অনুষ্ঠান মালায়।


আহত সব মুক্তি যোদ্ধার করুণ গঙান স্ট্রেচারের হাতলে ও গুলির বোঝায়,
সর্বত্র রাজ বন্দী মুজিব প্রেরণা ও উৎসাহ ও
উদ্দীপনা হয়ে দাঁড়ায়।


মহা শক্তি ধর রাজ বন্দী বঙ্গবন্ধু সদা থাকে বাঙালী সব নেতার পাশে,
প্রবর্তনার উৎস তিনি সারা বিশ্বের সকল নেতার অন্তর মাঝে একই সাথে।


রাজ বন্দী শেখ মুজিবুরের চেতনা বল ও নেতৃত্বে বাঙালীরা অস্ত্র হাতে,
ছিনায় আনে স্বাধীনতা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবকে একই সাথে।