★কবিতা সম্পর্কে কবি  বুদ্ধদেব বসু একদা বলেছিলেন--
"কবিতা সম্পর্কে বোঝা কথাটাই অপ্রাসঙ্গিক, কবিতা আমরা বুঝি নে, কবিতা আমরা অনুভব করি। কবিতা আমাদের কিছু বোঝায় না, স্পর্শ করে, স্থাপন করে একটা সংযোগ"।


★অামি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, কবিতার অাধুনিকতা মানে কখনোই এটা মনে করা উচিত নয় যে,কবিতা তাঁর সরলবোধ্যতা থেকে একেবারে অালাদা হয়ে যাবে।


★অামরা অনেকেই মনে করে থাকি যে,একটা কবিতায় প্রতিটি শব্দ এক একটি অর্থ প্রকাশ করলেই তা হয়তো সার্থক কবিতা।অাসলে ব্যাপারটা সেরকম নয়।মানছি শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কবিতার ভেতরে কিছু কিছু শব্দ থাকে যা এমন অর্থ ও ভাব প্রকাশ করে যা কবিতাকে কবিতাই করে তুলে।এদিকে সকল শব্দই যদি এক একটি ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে থাকে তাহলে কবিতা জগাখিচুড়ি হয়ে যায়,ভাবের দেশে টান পড়ে,কাঠিন্যতা অাসে,সেজন্য শব্দ হবে কখনো ভাবের সহায়ক অাবার কখনো কখনো নিজেই ভাবের ভাণ্ডার।


★কবিতায় শব্দ সম্পর্কে বারীন ঘোষাল বলেছিলেন--"শব্দ হলো একটা সংযোগ সম্ভব চিহ্ন । অর্থ খুঁজতে গেলে আরো একটা শব্দ বেরোয় যা ভাবের কাছাকাছি । আর সার্থকতা বলতে যদি ভালো লাগা বোঝায় তবে পাঠকের মনে যতক্ষণ না চিত্রটা স্থিরভাবে গড়ে উঠছে ততক্ষণ চেনা অচেনায় রহস্যময়তায় ভালোলাগা চলতে থাকে...তার মানে কখনই ওই প্রতিফলনটা বা রেফারেবল চিত্রটা নিশ্চিতভাবে একটাই নয়। যত পাঠক তত বিভিন্ন তার রূপ... শব্দের যে উৎস সেই ধ্বনির সংকেতময়তার সন্ধান , শব্দের এই শেকড় সন্ধানই বোধকরি নতুন কবিতার মোহ বা আনন্দ। "


★সত্যিই তাই----
শব্দের শেকড় খুঁজাটাই অাসল।


★একটা কবিতাকে পুরোপুরি বুঝতে হবে এর অাবশ্যিকতা অাছে বলে অামি মনে করিনা।


★তবে কবিতাকে অনুভব করার অাবশ্যিকতা অবশ্যই অাছে।অার অনুভবের জন্যে শব্দ দিয়েই হেঁটে যেতে হবে।


★কবি কি ধরণের শব্দ পথে বিছিয়ে রেখেছেন সেটার উপরই অনুভব ধরা দেয় ভিন্ন ভিন্ন পাঠকের ভিন্ন ভিন্ন মনে।এসব অনুভব কবিতার বিষয়বস্তুকে ছাড়িয়ে যাবে না,পাঠকসমাজ যেমনিই হোক না কেনো।


★বেশ কিছুদিন অাগে কবি হেলাল হাফিজ(দাদু)  ও হাংরি অান্দোলনের কবি  মলয় রায় চৌধুরী(দাদা)এর সাথে কবিতায় শব্দ নির্বাচন সম্পর্কে খানেকটা কথোপকথন হয়েছিলো অামার।যদিও এসব ব্যক্তিগত তবুও তুলে ধরছি খানেকটা,কারণ এখানে দুজনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন।এসব ব্যক্তিগত কথোপকথন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। কবিতা বিষয়ে  এ কথোপকথন এখানে তুলে ধরার ব্যাপারটি দুজনকেই অামি জানিয়ে দিব।কথোপকথনগুলি হুবহ তুলে ধরছি-------


★Hafijur rahman biplob.দেখো তো কবিতাটা কেমন হইছে?


Helal Hafiz:valo.tobe amar temon valo lageni.aro valo korte parti tui.


Hafijur rahman biplob:হুমম,ঠিক চেষ্টা করবো,শব্দগুলো খুব কঠিন করে ফেলছি তাই না?


Helal Hafiz.shobdo holo narir moton,khokhono hasbe,khokhono hasabe, khokhono kadbe,khono kadabe,Shobdo mane narir moto kumol kintu rohossomoy.


Hafijur rahman biplob.হুমম ঠিক বলেছো।



★Hafijur Rahman biplob. একটা কবিতা ট্যাগ করছি দেখুন তো দাদা......


মলয় রায় চৌধুরীঃকবিতা লেখার পর অন্তত তিন মাস ফেলে রাখতে হয়।  তারপর ফিরে গিয়ে আবার ঘষামাজা করতে হয় । সঙ্গে একটা 'সমার্থশব্দকোষ' রাখা জরুরি যাতে বিকল্প শব্দ বসানো যায় ।যাহোক, পড়েছি কবিতাটা।


Hafijur Rahman biplob:ঠিক অাছে দাদা,অামি অাজ হতে এমনটাই করবো।একটি কবিতা লিখে তিনমাস পরে অাবার দেখবো।তবে এতে ধৈর্য্যের প্রয়োজন।ভীষণ ভালোবাসা রইলো।অাপনার কথা অামি  মনের ভেতর রেখে দিলাম😊💓


★এখান থেকে কবিতায় শব্দ ও শব্দ নির্বাচন সম্পর্কে দুজন গুণী কবির গুরুত্বপূর্ণ কথা বেরিয়ে এসেছে এবং অারেকটি বিষয় গুণী কবিরা কখনোই সমালোচনা করতে কাপর্ণ্য বোধ করেন না।সমালোচনা যেকোন কবির জন্যেই অাশীর্বাদ।


"শব্দ হলো নারীর মতোন,কখনো হাসবে,কখনো হাসাবে,কখনো কাঁদবে,কখনো কাঁদাবে,শব্দ মানে নারীর মতো কোমল কিন্তু রহস্যময়"(হেলাল হাফিজ)


"কবিতা লেখার পর অন্তত তিন মাস ফেলে রাখতে হয় । তারপর ফিরে গিয়ে আবার ঘষামাজা করতে হয় । সঙ্গে একটা 'সমার্থশব্দকোষ' রাখা জরুরি যাতে বিকল্প শব্দ বসানো যায় ।"(মলয় রায় চৌধুরী)


★ কবি মলয়  রায় চৌধুরীর ভাষ্যের সাথে মিল রেখেই বলছি,কবিতাকে অাসলেই সময় দিতে হয়।তিনি অন্তত তিনমাস কবিতাকে ফেলে রাখার কথা বলেছেন,তারপর সেগুলো ঘশামাজা করতে বলেছেন।বিকল্প শব্দ বসানোর কথা বলছেন।


[বিঃদ্রঃ এ ব্যাপারে অামি হেলাল দাদুর কাছ থেকেও শুনেছি বাস্তব অাড্ডায়।কবিতাকে বহুদিন ফেলে রাখতে হয়।বহুদিন পর পুরানো কবিতা নিজে নিজে পড়লে অনেক ত্রুটি ধরা দেয়,অনেক শব্দচয়নে দুর্বলতা ধরা পড়ে।তিনি নিজেও  "হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট"শব্দচয়ন করতে দুমাস সময় লাগিয়েছিলেন।]


★অাশা করি এবার অনেকেই বুঝতে পারছেন শব্দচয়ন কত গুরুত্বপূর্ণ।


★কিছু কিছু শব্দ কিছু কিছু কবিতাকে কালজয়ী করে তোলে।তাই অামাদের সকলের উচিৎ শব্দ সম্পর্কে অারো সচেতন  হওয়া,সাধনা করা,চারদেয়ালে বন্দী না থেকে প্রকৃতির কাছে হেঁটে যেতে হবে,জীবনানন্দের মতো বনফুলের মতো ফুলকেও সম্মান দিয়ে কবিতায় তুলে অানতে হবে।


বহু বহু দিন পর অালোচনায় এসে পড়লুম।ভুল -ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যাবার বেলায় অামার একটি কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে অালোচনাটি শেষ করে যাচ্ছি।সবাই ভালো থাকুন।


"মাথা কেটে বসিয়ে দিলাম একখানি কবিতা
এখানে অাছে কলঙ্ক,অাছে জ্যোৎস্না,অাছে অমানিশা
যেটা চাও নিতে পারো
শুধু অামাকে রেখোনা অতীতে
অামার সমস্তটাই তোমাদের স্বপ্ন।"(ইথার)