দৃশ্য একঃ
------------------
সুজাতা,দুঃখটুকু কুড়িয়ে নাও
                                    জমিয়ে রেখো!
তারপর স্তব্ধতাকে ছুঁয়ে দিয়ে
                   মাঝরাতের পাঠশালায় পড়ে থাকা
কাগজের ছেঁড়া পৃষ্ঠায় দেখে নিও আধেক লাইন
                   যেখানে লেখা ছিলো কুমারীর ইতিহাস।


সুজাতা, স্পর্শটুকু কুড়িয়ে নাও
                                জমিয়ে রেখো!
তারপর জড়ো হওয়া রাজ্যের অন্ধকারের ভেতর,
বলিষ্ঠ বুকের মৃদু কম্পন স্পর্শ করে বুঝে নিও-
                  মানুষের অসম্পূর্ণতা কতখানি রয়ে যায়!

সুজাতা!
একটুখানি ভুল পথে প্রণয়ের ব্যর্থ আয়োজন দেখে,
আহত এক প্রেমিক
                      তাঁর সাজানো বাগানে
কীটের আঘাত সয়ে বেড়ানো
                             লাল-রঙা ফুলের কাছে,
লুকিয়ে ফেলেছে  প্রাণান্ত লজ্জা!


তুমি অষ্টাদশী রমণী!
ভেবেছো শ্মশানের ছাই মেখে,
সে ভুলে যাবে তাঁর গতজন্মের স্মৃতি-- কখনো নয়!


এবার সে শাসন ভেঙ্গে ছুঁয়ে দিবে রমণীর স্পর্ধা!
অসময়ের খেলায় উড়িয়ে দিবে পথের নিশান,
সাঁঝের আঁধারে নামিয়ে আনবে জ্যোৎস্নার হল্লা।


আর পাখিদের ফেরার গান শুনে শুনে,
সে চলে যাবে স্বপ্নের মিছিলে......
স্লোগানে স্লোগানে থাকবে কেবল প্রেমের কথা।


দাবি একটাই---
কিছুটা সময় হোক মুখোমুখি দাঁড়াবার,
নয়তো,প্রাণের বুকে জন্ম দিয়ে যাক
                                আরেকটি পারিজাত প্রেম!


ইচ্ছে জাগে,পৃথিবীর সব প্রেমিক-কে
               পরাজিত করে
                    একা হাঁটু গেড়ে বসে থাকি
                               তোমার গোলাপের ছায়ায়......


ইচ্ছে জাগে,তৃষ্ণার নীচে
                     লুকিয়ে ফেলি
                           আধেক জনমের চাওয়া-পাওয়া।


ইচ্ছে জাগে,  উর্বশী চোখের
               আগুন ঝরা দৃষ্টিতে
                            পুড়িয়ে ফেলি বেদনার শরীর।


ইচ্ছে জাগে, পৃথিবীর সব ঝরা পাপড়িগুলো
               কুড়িয়ে এনে
                       জমিয়ে রাখি তোমার খোঁপার ভাঁজে।


সুজাতা!
    যদি কোনদিন
        নিষিদ্ধ নগরীর তোরণ দ্বার হতে
জন্মের ছাড়পত্র ছিনিয়ে এনে,
     বিকলাঙ্গ জারজ শিশুটির হাতে তুলে দিয়ে
                তোমার কাছে ফিরে আসতে পারি
তবে জেনে রেখো-
                   আমি পরাজিত ছিলাম না।


সুজাতা!
যদি কোনদিন-
          পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে,
ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিয়ে
               তোমার কাছে ফিরে আসতে পারি
তবে জেনে রেখো-
                আমি নির্দয় ছিলাম না।


সুজাতা!
যদি কোনদিন
নগরীর কুখ্যাত খুনিকে মরা লাশের পাশে পুঁতে রেখে,
            তোমার কাছে ফিরে আসতে পারি
তবে জেনে রেখো-
               আমি পাপী ছিলাম না ………….

শুনতে পাচ্ছো কি হে অামার সুজাতা?
সঙ্গীহীন ধূসর উপকন্ঠে গড়ে উঠে নীল বেদনার তাজমহল,
     দিকচিহ্নহীন আকাশের মধ্যপ্রান্তে ঝুলে থাকে
                        চোখ ঝলসানো ফেরারি স্বপ্নে-রা!


সুখের ব্যারিকেড ভেঙে
                 নেমে আসে সর্বনাশা অন্ধকার;
থাকে শুধু অস্তিত্বের সাথে সংঘাত
                     শতাব্দীর পর শতাব্দী ......


চাঁদের বৈঠা ধরে রাখা সেই মহাশূন্যের যাত্রীরাও
                             হারিয়ে যায় মেঘমালার ভীড়ে.....


মহাসংকেত শুনে ওঠে আসে গ্যাসীয় দানব,
আক্রোশে খসে পড়ে উল্কা,
                         ছিঁড়ে নক্ষত্রের শৃঙ্খল।
ফেনিল সৈকতে অবহেলায় পড়ে থাকে স্বপ্নের নুড়িপাথর;
বাতাসের আবর্তনে পাল্টায় চন্দ্রাক্রান্ত চোখ।


চিকচিক বালুতে হামাগুড়ি খায়-
                 নশ্বরতায়বিদ্ধ খেয়ালি যৌবন।
জরাগ্রস্ত হাত ধরে রাখে অভিশপ্ত রুটি,
শেষে,অনিকেত পথেই থেমে যায় জিহ্বার আন্দোলন।


ঐশ্বর্যের কাছে পরাজিত মানবিক দেহটিও
                বিজুলী আকাশ চিরে
                          ঢেকে দিতে চায় জন্মগত দুর্বলতা.....


দৃশ্য দুইঃ
---------------
একবিংশ শতাব্দীতে-
    আমি যদি প্রাণের কবি হই,
          তবে মিশকালো আঁধারের বুক চিরে
                 নেমে আসবে আলোর ফোয়ারা।
দখিনা হাওয়ায়-
    পৃথিবী খুলে দিবে তাঁর সবুজ বেণী।
       কলঙ্ক লুকাবে সাইবেরিয়ার হিমজলে
           মঞ্জুরি ফুটবে ফুলের শাখে-শাখে;
                সুবাসে ভরে যাবে প্রাণের বাগান।
                   দলে-দলে ডানা মেলে উড়বে পান্থ পাখিরা...


হে অচেনা প্রজন্ম!
         আমার এ দৃষ্টির সীমানায়
                মুক্তোর মালা গেঁথে
                       বসে আছেন জগন্নাথ।


আজ হতে যুগের পর যুগ
        বিমূঢ় বিস্ময়ে তোমরা দেখবে;
               আমি হাতের মুঠোয় রাঙা ধুলো নিয়ে
                     তোমাদের খেলাঘরে সাজিয়ে দিচ্ছি
                                          আমার প্রাণের মূর্তি।


দৃশ্য তিনঃ
-------------------


মনে পড়ে!মনে পড়ে!
   দু'জোড়া বাদামী পায়রায়,
         স্বপ্নের চিঠি দিয়েছিলাম বেঁধে।
                  
লাল-গালিচায় ছিলো সুখের ছোঁয়া;
        যৌবন বন্ধক রেখেছিলাম
                   নারীর পিপাসার্ত হৃদয়ে।


আজ আকাশে মেঘ জমতেই --
      ব্যস্ত দুপুরের কাঠফাটা রোদ
                  ফিরে গেল অজানা গন্তব্যে......


আসলে রোদাক্রান্ত শরীর,বৃষ্টিকে চায় …
                  বৃষ্টি কি আসে?


অপ্রাপ্তির বাতাসে-
        বর্মের মত দুটি হাত রেখে
             ভাঙাতে চাই পৃথিবীর অভিমান।
ভাঙাতে পারি কি?
            অবহেলায় পাশ কাটিয়ে,
                           চলে যায় সময় …..


বিবশ হয়ে পড়ে শুধু চোখের জ্যোতি,
         ক্ষয়ে যায় মাটির দেয়াল;
               উবু হয়ে হাঁটি শুকনো ধুলোর পথে।


কিন্তু নির্ভীক স্বপ্নে-রা কখনো হারায়নি,
         চাঁদের স্পর্শ এখনো পাই,
                মন-ময়ূরী নাচে ব্যাবিলনের উদ্যানে।


ঝাউবন কিংবা জলপাই বনে
          অহর্নিশ উদাস চেয়ে থাকি।
                   আর সোনামুখী স্বপ্নের দেখা পাই-
                             বালিকার দুরন্ত উচ্ছ্বাসে................


দৃশ্য চারঃ
-------------
ও মানুষ! আধপোড়া এ জীবন
                   আগুনের কাহিনী শুনেনা!


তুমি দেখোনি?
          
     বীজের দানায় যত অতীতের বেদনা চাপা পড়ে থাকে
     তা-ই একদিন হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের সুমিষ্ট ফল।


আফসোস!
     বৃক্ষ তার শিকড়ের কাছে জেনে নিয়েছে মাটির মাহাত্ম্য;
     অথচ মানুষ আজো জানেনা তার জন্মপথের ইতিহাস.....


দৃশ্য পাঁচঃ
-----------


ইথারের জীবনটাই এক মহাকাব্য
                যার সাজানো অক্ষরে আছে ব্যথা
আহত শব্দেরাও ক্রমাগত পৌঁছে যায় সাত-আসমান।


তাই অশ্রু-ভেজা ধুম্র কুয়াশায়
   তাঁর ব্যস্ত হৃৎপিন্ড সেরে নেয় স্নান।


ওদিকে আগুন-ঝরা আর্তনাদে
           আলো- ছায়ায় ঘটে অদৃশ্য আলিঙ্গন;
গভীর চেতনার নীল সীমানায় দাঁড়িয়ে
                                     কাঁদে শেষ অনুভূতি......


শুনে নাও হে শুকনো ধুলোর মানুষেরা!
যেদিন অভাগা ইথার চলে যাবে চিরতরে
       সেদিন হতে থাকবে শুধু কবিতা
                                         প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তর ......