কেটে গেছে অনেক বসন্ত
কেটে গেছে বহু গ্রীষ্মের হালখাতা
তবুও ভুলতে পারিনি আজও
সেই স্বাধীনচেতা শান্ত মেয়ের কথা।
আমরা ছিলাম একই কলেজে
থাকতাম দুজনে বেশ ভদ্রবেশে সেজে গুজে
মাঝে মাঝে চলত ধুন্দুমার কথার খুনসুটি
হঠাৎ হঠাৎ খেতাম আমরা চিকেন আর নানরুটি।
কলেজের ব্যস্ততাময় পড়াশুনার ফাকে
নিজেদের জন্য সামান্য টুকু সময় রেখে
ঘুরতে যেতাম ক্যাম্পাসের পাহাড়ি এলাকায়
যেখানে জুটি বেধেই আসত সবাই।
তবে এই বন্ধু্ত্ব ছিল রস আর বিতর্কের ছড়াছড়ি
মেধাবী সে মেয়েটি দেখে চলত সর্বদা ঘড়ি
এত নিয়মমাফিক চেতনা লাগত না ভাল আমার
তাই ঝগড়া হতো আমাদের মাঝে বার বার।
সীমিত হতে লাগল এ বন্ধুত্বের সীমারেখা
এক সপ্তাহ পর পর হতে লাগল আমাদের দেখা
দৈনন্দিন নানা ব্যস্ততার মাঝে তখন
ভুলতেই বসেছিলাম তাকে
জানতাম না একদিন হারিয়ে যাবে সে
নিষ্ঠুর বাস্তবতার বাকে।
আমার অপছন্দ কে জানিয়ে সম্মান
সে ছেড়ে দিয়েছিল এই বন্ধুত্ব
আর দিল সে পড়ায় তীব্র মনোযোগ
বাড়িয়ে দিল আমাদের মাঝে এক অস্বাভাবিক দূরত্ব
শুরু হল আমাদের একলা পথচলা
অনিয়মিত অগোছালো এই আমি
মিস করতে শুরু করলাম মেধাবী মানবীকে
আর বইতে লাগল মনে আবেগের সুনামি।
তখন ভাবলাম বদলে ফেলব নিজেকে
সেই নিয়মিত সময়ানুবর্তী মেয়ের মতো
পড়াশুনায় দিব তীব্র মনযোগ
প্রায়শ্চিত্ত করবো যত পারি তত।
শুরু হল আমার নিজের সাথে সংগ্রাম
যুদ্ধ করতে লাগলাম বানাতে সব হ্যান্ডনোট
আর নীরবে প্রদান করতাম মেয়েটিকে সেগুলি
বিপদে আপদে সে যেন না খায় কোন হোচট।
মেয়েটি পারল না বুঝতে কখনো
আমার এই আড়ালে বদলে যাওয়া
ফলাফল বেরুলে মুখে হাসি ফুটিয়ে
খেতে লাগলাম একলা একলা মিষ্টিমধুর হাওয়া
সেই পাহাড়ী এলাকায় একদিন আসলাম আবার
কি মনে করে যেন একটু হাটতে
ঘটনাক্রমে হঠাৎ চোখ ফিরে তাকাতে
মেয়েটি পেল আমাকে দেখতে।
ছুটে এল সে আমার কাছে
কৃতজ্ঞতা জানাল খুব করে
কফি খেতে চাইল ঠিক দুপুরে
টেনে নিয়ে গেল আমাকে ক্যাফের দ্বারে।
তারপর হল কত অনুরাগ বিরাগের খেলা
ক্ষমা চাইলাম আমি একান্তে
মুছে দিতে পুরনো শত অবহেলা।
পাল্টা জবাবে মেয়েটি বলে সহসাই
বন্ধু আর করিসনা প্রায়শ্চিত্ত
আমি হয়ে গেছি খুব যে ঋনী
এই নিয়মমাফিক বদলে যাওয়া গোছানো ছেলেটির কাছে
হার মেনেছে আমার দৃঢ চিত্ত
চল আবার মিলে যাই আমরা দুজন
হয়ে যাই একে অপরের যথাযথ সতীর্থ।