অন্ধিকা আজ চঞ্চল তার সাজে সজ্জিত,
তুলো মেঘ ছোঁয়া বৃষ্টি
হালকা প্রভঞ্জনে সকল ক্লান্তি
দূর করেই মনে হয় শান্ত হবে।
আমার আর তন্দ্রার লুকোচুরি খেলা
এখন বিভাবরীর হাতের মুঠোয়,
হঠাৎ যখন মুঠো ফোনের আলোটা জ্বলে উঠলো
রজনী যেন আরো গভীরে আমায় জড়িয়ে নিলো,
ক্ষনিকের মধ্যে দৃষ্টি বন্ধু বৃষ্টিকে গ্রাস করে নিয়ে
কানে কানে বলে গেলো
- আজ আর লুকোচুরি খেলা নয়,
ওঠো ......



মেসেঞ্জার এর উপর চোখ পড়তেই
আনন্দ আর বিরহে মুহূর্তের মধ্যে
আমার কলেবরে
আলতো হাতে অভিমান ছোঁয়া দিয়ে গেলো,
তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে
মেসেজটা ওপেন করলাম।


ঠিক আগের মতো,
সেই সম্বোধন, সেই সহজ সরলভাবে
ছোট একটা প্রশ্ন
- "তুমি ভালো আছো"?
অপলক স্থির দৃষ্টি
চুলের ফাঁক থেকে ক্রমশই ঝাপসা হতে থাকে,
ইন্দ্রিয় নিজেকে শীতের চাদরে
আঁষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দিলেও
মস্তিষ্ক ছোট ছোট কাঠের টুকরো জ্বালিয়ে
তাকে উষ্ণ আবেগে আঁকড়ে ধরলো।  



ভেজা মাটির গন্ধে বেরং স্মৃতিগুলো
আর
স্যাঁতসেঁতে গন্ধে ভরা
অভিমানের কিছু অসমাপ্ত চরণ
আজও আমায় শেষ অবধি নিতে ব্যর্থ.....
যা বন্ধ কলসের ঢাকনা খুলার অপেক্ষায়।
তোমার অনিশ্চিত ভাবনা
আর
আমার রঙিন মনের গল্প
- এক অতৃপ্ত ও তৃষিত রাত্রির কথা।  



স্বাভাবিকতা আমাদের বাতুলতার কাছে
হার মেনেছিল অনেক আগেই ,,,
আমার নূপুরের ঝঙ্কার,
তোমার তাল ও লয়ের সাথে
আড়ি পেতেছিল বহুবার।
আমাদের কথা হতো মনে মনে
আর দৃষ্টিতে ছিল আহবান,
তবুও তোমার মতো করে
কথা বলার ইচ্ছা ছিল আমার  অবিরল।
অথচ সঠিকভাবে কিছু বলে বা লিখে বুঝাতেই
পারলাম না তোমাকে,
তবে যেটুকু মুহূর্ত একান্ত আমাদের ছিল
তা পড়ন্ত বিকেলে
পাখি নীড়ে ফেরার পরিতৃপ্ত প্রশান্তিতে
ছিল ভরপুর।



নীরব দুপুরে তোমার জন্য অপেক্ষা যেন
অনন্তকাল ধরে
জ্বলন্ত একটা সিগারেট মতোই প্রিয় ছিল,
কোন খেয়ালে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে ,,,
আর আমি হতবাক দৃষ্টিতে ...
কম্পিত কায়ায় ...
দাঁড়িয়ে দেখতাম,
অনুরোধ আর অনুরাগের খেলায়
এতই মত্ত ছিলাম যে,
নিজের সাথেই লুকোচুরি খেলে যেতাম।  
তবে অনেক অনেক ভালো লাগতো
... জানো?
ভালো লাগতো
তুমি আদর করে আমায় যে নামে ডাকতে,
ভালো লাগতো
যখন কোনো কারুপণ্য ছাড়াই
আমার প্রশংসা করতে...
ভালো লাগতো
তোমাকে এক ঝলক দেখার অধীর আগ্রহ,
ভালো লাগতো
তোমার গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকা শীতল দৃষ্টি,
ভালো লাগতো
যখন তুমি নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে
আমার মাঝে,
ভালো লাগতো
তোমার চঞ্চল চোখের লাজুক আহবান,
ভালো লাগতো
তোমার আশ্বিনের শান্ত দুপুরের সাথী হওয়া ,
ভালো লাগতো
তোমার ছোঁয়ায় ক্ষণিক সুখের অশ্রুভেজা তৃপ্তি,  
হয়তো আমার এই ভালো লাগাগুলো
তোমারও অনেক প্রিয় ছিল ...
কিন্তু বলার সুযোগ
কখনোই তুমি আমাকে দাওনি।



প্রকৃতির সাথে তোমাকে ভাগাভাগি করতেও
শিখে নিয়েছিলাম আমি,
তাইতো বসুধাধর
তোমায় মেঘের আলিঙ্গনে লুকিয়ে রাখতো,
নীল অম্বর জানতো তুমি সেই শুকতারা
যার আবির্ভাবে ঝলমল করে উঠবে সমগ্র ধরণী।
আর জলনিধি বলেছিলো,
সে তার উত্তাল ঢেউয়ের প্রলয় নৃত্যে
সব অভিমানকে অতল গহীনে চিরস্থায়ী করবে।


বলে দেখতে -
একবার হলেও প্রকৃতির এই রূপে
নিজেকে সাজিয়ে নিতাম ...
যেই লেবাজের রঙে রঙে থাকতো
তোমাকে না বলা আমার সব ভালো লাগা।
নিখুঁত সুতার বুনন দুঃখ-কষ্টগুলো
আঁকড়ে ধরতো আমার তনু,
যার উষ্ণ স্পর্শে মিলিয়ে যেতো  
শিশির মাখা অজানা সব অভিমান,
তার পরিধানে তোমাকে স্থায়ী করতাম
হৃদয়ের আলিঙ্গনে।


কিন্তু আজও বলতে পারিনি  ......
উত্তরে আমি লিখলাম -
"বলো আমি শুনছি''