অন্ধকারের মাঝে
নির্জীব শুয়ে আছি
ধূলি-মাঝে মিশে আছে
হাড়-গোড়-মজ্জা
জাগতিক হিসাবের
কুড়ি বৎসর ধরে
সমাহিতকাল চলে
নিয়ে ভূমিশয্যা।
কুড়ি বৎসর আগে
মৃত্যুর দিনটিতে
আমিও ছিলাম বেঁচে
টগবগে একজন
সুখী সংসার ছিলো
বিধি বড়ো বাম ছিলো
আচমকা এসে গেলো
অন্তিম দিন-ক্ষণ ।
দুর্ঘটনার হোতা-
অভিশাপ তোমাকে
অনাহূতভাবে তুমি
প্রিয়জনে বাটো শোক
এক নিমিষের ভুল
সব শেষ করে দেয়
ইচ্ছার প্রতিকূলে
অসময়ে পরলোক ।
কুড়ি বৎসর ধরে
তিল তিল হাহাকারে
মহীরূহ হয়ে উঠা
না পাওয়ার দুঃখ
বারে বারে কড়া নেড়ে
চায় দয়া ভিক্ষা
কেমন আছে পরিজন
জানাটাই  মুখ্য ।
আমার প্রার্থণারা
প্রত্যুত্তর পায়
নিরাকার ভূত হয়ে
নিশ্চুপ থাকবো
“আবার আসিব ফিরে”
সংসার-মাঝে আমি
বায়বীয় পটভুমে
পরিচয় ঢাকবো ।
আমার ভূতুড়ে-বেলা
গোড়াতেই থমকায়
আমার সমাধি কেন
এতো জরাজীর্ণ
ফলকটা পড়ে গেছে
ঝোপ-ঝাড় বেড়ে গেছে
আগাছায় হাঁটা-পথ
আজ সংকীর্ণ ।
পেছনের দু’দশক
যত নষ্টের গোড়া
এমনটা ভেবে আমি
হন্ হন্ করে ধাই
চির চেনা জনপদ
অনেক পাল্টে গেছে
সময়ের ব্যবধানে
আর চিরচেনা নাই ।
নিজ গৃহকোণে আমি
অবশেষে ফিরলাম
কুড়ি বৎসর পরে
কি ভীষণ শান্তি !
আধঘণ্টার মাঝে
সব ছেড়ে ছুটলাম
শেষ আশ্রয়পানে
কেটে গেছে ভ্রান্তি ।
শূণ্যভিটার মাঝে
ঘুরলাম,ফিরলাম
ভিন্নরকম লাগে
বুঝিনি যা এতোদিন
প্রিয়তমা স্ত্রী-র সাথে
অন্যের ছবি দেখে
বুঝলাম সবকিছু
কেন এতো আমি-হীন।
তন্ন তন্ন করে
খুঁজলাম সারা বাড়ি
আমার চিহ্ন যদি
কোথাও বা পাওয়া যায়
দু’বার কবর হলো-
দ্বিতীয়টা এ বাড়িতে
বর্তমানের কাছে
সব স্মৃতি চাপা খায় ।
কুড়ি বৎসর ধরে
যতটুকু মরে আছি
আধঘণ্টায় আমি
ঢের বেশি মরলাম
ঘাস-ঝোপ-ঝাড় ভরা
আমার কবর ভালো
সাক্ষাৎ ব্যতিরেকে
গৃহত্যাগ করলাম ।
অন্ধকারের মাঝে
জোনাকীরা জ্বলে-নেভে
চলে যেতে হয় তবু
সব কেড়ে নিও না
তোমাদের মাঝ থেকে
কেউ যদি চলে যায়
একটা কবর দিও
দ্বিতীয়টা দিও না ।