- আমি তোর প্রেম চাই প্রমীলা।


স্থির চোখে তাকালে। চোখের ভাষা আমি কোনোদিনই বুঝি নি।
কেউ বলে খরা, কেউ বলে ঝড়। আগুন বা সমুদ্র বলে কেউ কেউ।
ক্রূর বা কোমলও হতে পারে এ চাহনি।


অনেকটা সময় ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বললে,
ওরে ও ছন্নছাড়া, এভাবে কি প্রেমিক হওয়া যায়?


কীভাবে প্রেমিক হওয়া যায়, পাঠ্যপুস্তকের কলামে এরকম
কোনো রচনা আমরা পড়ি নি। চিকন চিরুনিতে মাথার চুল
সাজাতে সাজাতে বড়ো বুবুরা কখনো বলেন নি প্রেমিক হতে
হলে আমাকে কী কী শিখতে করতে হতে হবে।


কাজী নজরুলের বোধন থেকে দীক্ষা নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা
মসীময় করে তোমার পদ্মহৃদয়ে অর্ঘ্য দিয়েছি।
আমাকে প্রেম দে প্রমীলা। আমি তোর প্রেম চাই।


- ওরে ও ছন্নছাড়া, এভাবে প্রেমিক হওয়া যায় না।


আমার নীললোহিত আমাকে টেনে তোলেন নিকষ
গহ্বর থেকে। প্রেমের জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিই।
হিমালয়শৃঙ্গের বরফখণ্ড মাথায় নিয়ে ডুব দিই
ভিসুভিয়াসের গলন্ত লাভায়।
আমি বাঁচবো না প্রেম ছাড়া। আমাকে প্রেম দে, প্রমীলা।


- ওরে ও অভাগা, পারলি না তুই। পারবি না প্রেমিক হতে।


আজও আমি জানি না প্রমীলা, কে তোমার প্রেমিক,
কে তোমার মন খুঁড়েছিল। আজও আমি শিখতে পারি নি
কী কী শর্তে বা যোগ্যতায় যুবকেরা প্রেমিক হয়ে ওঠে।
তোমার অনীহা কিংবা অবহেলা- কোন বিষে আমাকে
নীলকণ্ঠ করেছিলে, আমাকে কিছুই না জানিয়ে
কোথায় হারিয়ে গেলে।


কবিরা দুঃখের কবিতা লেখেন। দুঃখেরা পেছনে টেনেহেঁচড়ে
শতচ্ছিন্ন করে। দুঃখদের বাকলে আঁকড়ে থাকলে জীবনের
আলো ফোটে কি কখনো? আমি তো জেনেছি, বিমর্ষ বিলাপে
বক্ষ বিদীর্ণ করে সেখানেই জ্বলে ওঠে সুখসুখ চারাগাছ।
আমিও দুঃখ বুনেছি তাই। দুঃখে দুঃখে জীবন ধাবমান।


খা-খা আকাশ। তুমি কোথায় হারিয়ে গেছো, কিংবা লুকিয়ে,
তোমাকে কতদিন দেখি না। আমার চোখ পুড়ে যায়
পুড়ে যায় বুক। প্রমীলা- আমি তোর প্রেম চাই,
আমারে প্রেম দে প্রমীলা, আমারে প্রেম দে-
হৃদয়বিদারী চিৎকারে ফেটে খান খান হয়ে যায়
গনগনে আকাশ


সময় খুঁড়িয়ে হাঁটে, পেছনে চমকায় দুর্ধ্বর্ষ যৌবন।
প্রেম বা বাৎসল্য সবার জন্য হয় না। একফোঁটা অশ্রু বা
আশিস আমার জন্য নয়। সব কবিদের মতো আমিও অলীক
অন্বেষায় বিভোর- একদিন অকস্মাৎ আসমানের সিঁড়ি বেয়ে
নেমে আসবে অচেনা একজন; কোনো এক উদাসীন পথিকের
পেছনে দাঁড়াবে, আলগোছে কাঁধে রাখবে হাত; তারপর
নরম কণ্ঠে বলে উঠবে :


আমি তোর প্রেমিকা নই তাতে কী, বান্ধবী তো!


৭ এপ্রিল ২০১৮