নিঃসঙ্গতার শহরে আমি পড়ে আছি একা!
এখানে শত ব্যস্ততা, শত কোলাহল রাত্রি-দিন,
জোড়ায় জোড়ায় চতুর চোখ চারিদিকে,
চোখের আড়ালে লুকোনো অন্য মানুষ;
এখানে মানুষের দেহে যান্ত্রিক ছুটে চলা,
থামছে না কেউ- দেখছে না কিছু,
লক্ষ্য তাদের দূর বহুদূর ঝাপসা গন্তব্যের দিকে,
সন্ধ্যে নামে, আলোটুকু হয়ে আসে ফিকে,
আমি দাঁড়িয়ে থাকি ল্যাম্পপোস্টের মতো একা!
এখানে কুয়াশার স্বাদ আমি বুঝিনা,
অপরিচিত সবগুলো সোডিয়াম আলো,
এ রাত আমাকে সঙ্গ দেয়না,
রাতের অন্ধকার বুকে লুকিয়ে থাকে মৃত্যু;
প্রতি অলি-গলির কোণে চাপা গুঞ্জন চলে,
গণিকালয় থেকে ভেসে আসে-
বেদনাতুর সুখে বিভৎস আর্তনাদ;
এখানে শহর কখনো ঘুমায় না,
অনিশ্চয়তার বুকে কান পেতে জেগে থাকে শহর,
বৃদ্ধ বুনোফুলের মতো গুনে যায় বিনষ্ট প্রহর,  
আমি পড়ে থাকি বাসস্টপের মতো একা!
মুখোশের আড়ালে মানুষ দেখি,
এখানে মানুষের নাম বিচিত্রিতা,
পুঁজিবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সরু রাস্তায়,
ফুটপাতে চায়ের দোকান অথবা পথশিশু,
নর্দমার অসহ্য গন্ধ অথবা খোলা ম্যানহোল-
ভীষণরকম অচেনা আমার;
আমি কাউকে চিনিনা, আমি কাউকে বুঝিনা,
কোথায় যাবো, কার সাথে বলবো দুটো কথা-
সভ্য পোকা ঠুকরে খেয়েছে সবার মগজ,
ব্যস্ততা নিয়ে ওরা অন্য মানুষ হয়ে বেঁচে থাকে,
অন্তরে এক অজ্ঞাত যান্ত্রিকতা ধরে রাখে,  
আমি পড়ে থাকি বৃক্ষের মতো একা!
ধূলো জমে জমে রঙচটা ধূসর হয়ে উঠি,
আমাকেও আঁকড়ে ধরে শহুরে বিষন্নতা,
সময় গড়িয়ে চলে, হয়ে উঠি অমানুষ,
আমি আর দু'চোখে জীবন দেখি না,
আমি আর তাকিয়ে আমাকে দেখি না,
থেমে থেমে আর চিৎকার করে উঠি না,
আমি আর নিজেকে ভাবি না ভীষণ একা;
আমার মগজও শূন্য হয়, আমিও ছুটে চলি,
চোখে আলো নেই- সবকিছু দেখি বর্ণহীন;
তারপর,
হটাৎ একদিন মৃত্যু জমাট বাঁধে আমার বুকে,
সবকিছু থেকে যায়, শহরটা জেগে থাকে নির্ঘুম,
সদর্পে দাঁড়িয়ে থাকে সবগুলো বহুতল অট্টালিকা;
শুধু আমি-
শুধুমাত্র আমি, নিভে যাই নক্ষত্রের মতো একা!