খোলা চিঠি,
  রোজ ইস্কুল থেকে ফেরার পথে নিয়ম করে
একবার  পোস্ট অফিস এ যাই,
খোঁজ নিয় তুই কোনো চিঠি দিয়েছিস কিনা,
পোস্ট মাস্টার এর মুখে  সেই একি উত্তর ,
ছেলে র বোধয় দোয়াতের কালি ফুরিয়ে গেছে,
জানিস , এটাও আমার অভ্যেস হয়ে গেছে।


শেষ যখন চিঠি লিখেছি আমি তখন উনিশ,
আজ সাহস করে লিখতেই বসলাম ,
বলি ইস্কুলের বাংলা মাস্টার কি
চিঠি লেখা  টা সেখাননি তোকে,
নাকি দোয়াতের কালি সত্যি ফুরিয়ে গেছে!!
থাক সেসব মন অভিমানের কথা!


জানিস আমার ইস্কুল এ একটা বাচ্চা কে দেখলাম,
নীল হাফ পেন্ট আর সাদা শার্ট,
সকালে জামাটা সাদা ছিলো,
স্কুল শেষে  ধুলো মাখা শার্ট টা র একটা বোতাম ও গেছে ছিঁড়ে,
ঠিক যেমন বেসে তুই স্কুল থেকে ফিরতি ,
এখন তো অফিস ফেরার পথে
জামার হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছিস ,
অনেক বড়ো হয়ে গেছিস বল!!


জানিস, এখনো পয়লা বৈশাখ এ
গ্রামে  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়,
সবার মুখে একই কথা ,
তোকে  ছাড়া নাটক টা ঠিক জমেনা!!!
আমি মনে মনে ভাবি
হইতো সেখানে রোজ তুই ভালো থাকার অভিনয় করিস!!
জীবনটাও তো রঙ্গমঞ্চের ঘনঘটা!!


জানিস বাবা, তোর জন্য একটা সোয়েটার বুনেছি
সাদা আর নীল রাঙা ,
শীতকাল এলেই ওটাকে দেখি,
ভাবি তোকে ওটাই বড্ডো মানাবে,
তিনটে শীত পেরিয়ে গেলো,
তোর কি ঠান্ডা লাগে না?
তিনটে শীত পেরিয়ে গেলো,
এখনো তুই আসবিনা!!!


জানিস, তোর  হাতল ভাঙ্গা ক্রিকেট ব্যাট,
চুপসে যাওয়া ফুটবল ,  কাঁটা হীন বরশি,
ধুলো মাখা গল্পের বই ,
লুকিয়ে রাখা গাভাস্কার এর ছবি,
সব কিছু মাঝে মাঝে ছুয়ে দেখি,
ওতে তোর শৈশব ঘুমিয়ে আছে বৈকি,
তোর অনুপস্থিতে ওগুলোই আমার
মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে!


আচ্ছা, তোর অনামিকা কে মনে আছে?
যার সঙ্গে গলা মিলিয়ে  ,গেছিলি
আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি
নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান।


জানিস, কদিন বাদে ওর পাকা দেখা,
দেখা হলেই জিজ্ঞেস করে তোর কথা!!
বলছি বাবু, এবার পুজোতেও কি ফিরবি না বাড়ি??
সুয্যি গেছে পাটে, বেলা পড়ে এলো,
আমার কলমের কালিও ফুরিয়ে আসছে,
এবারেও পুজোই থাকবো তোর অপেক্ষায়,
অন্য বছর গুলোর মতো,
বলছি বাবু, এবার পুজোতেও কি ফিরবি না বাড়ি??


ফাঁকা ফ্রেম



একদিন হঠাৎ  ফিরছি বাড়ি,
কাশ ফুল রাশি রাশি
কিন্তু
ঠোঁটের কোণায় নেয়  হাসি,
গ্রামের মাটিতে আর চরণ ঠেকানো হলোনা,
ওই তোহ পুরনো আম গাছ টা , পাতাগুলো সব
ঝরে গেছে , ঠিক আমার জীবনের মতোই।
অদূরের মাঠে  রোদ উপেক্ষা করে চলছে ক্রিকেট খেলা,
বাবা ঠিক ই বলতো, বাইশ গজে যুদ্ধ কোনোদিন থামেনা,
থেমে যায় শুধু  নাড়ির স্পন্দন!


সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এসে গেছি দোর গোড়ায় ,
আগাছার রামরাজত্ব ঘরের আঙিনায়,
মন মাঝি তুই বৈঠা বেয়ে
নিয়ে গেলি
কোন সাগরের মোহনায়,
আগাছার মাঝে ফুটেছে হাস্নুহানা ,
আমি হীনা এই ঘরের আঙিনায়!


যেদিন জন্মেছিলাম গ্রামের লোকেরা ঠিক এরকম
ভিড় করে দেখছিল আমায়,
আজও ভিড় জমেছে , আমার বাড়ির আঙিনা তে,
হটাত করে খুললো কেউ কফিনের দরজাটা,
সাদা চুলের এক রমণী কে দেখে  কেপে উঠল মৃত প্রাণটা,
জোর করে ডাকতে চাইলাম মা বলে,
মৃত মানুষ কি আর ডাকতে পারে?
এবার মরলে জন্ম নেবো,
মায়ের বাধ্য সন্তান হিসেবে,
"মা তোর স্নেহের শাসনে,
ক্ষমার আদরে
হৃদয় গিয়েছে গলে
ও মা এই যে নিয়েছো কোলে।


(একটা ফ্রেম ততক্ষন প্রয়োজনীয় যখন তাতে একটা ছবি চিপকানো থাকে!!
ফাঁকা ফ্রেম ঠিক অন্তহীন অপেক্ষার মত মূল্যহীন)