(১)
ভোরের ঘন কুয়াশায় ঢাকা আছে বে আব্রু এক নারীর শরীর,
এলোমেলো চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হিমেল ঘাসের উপর ,
বোধ হয় কাল রাতে চুলগুলোতে জোনাকিরা বাসা বেঁধেছিল
আমার বড্ড অসটা লাগছিল বেআব্রু ওই নারীর  শরীর টা ,
তাই শশব্দে বন্ধ করে দিলাম জানালাটা ,
চা এর কাপের পাশে থাকা চিনির পাত্রে কালো পিপড়ের জমায়েত ,
চিনি ছাড়া চা এর বাষ্প চশমার কাঁচে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ,
তাই দৃষ্টি টা একটু ঝাপসা !
ফের শাল দিয়ে চশমা টা পরিষ্কার করে খবরের কাগজ টা হতে নিলাম,
১৬ টা পাতায় ১৭ টা ধর্ষণের গল্প ,
তাই জাপানী তেলের বিজ্ঞাপন টাও খুশি হয়ে হাসছে বড্ড !


(২)
তেলের কথায় মনে পড়লো,
একবার সর্ষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটছিলো
কয়েকটা  হাফ pant আর হাতে বোনা সোয়েটার পরা ছেলেপুলে,
ভোরের আবছা আলোতেই তারা ফিরছিল  খেজুর রস চুরি করে !  
হঠাৎ চোখে পড়লো ক্ষেতের দিকে,
লাল রঙা গ্ল্যামারাস চুলের গুচ্ছ মাটিতে পড়ে ,
কিছুদুর যেতেই একটা বেআব্রু নারীর দেহ ,
মাথা থেকে গড়িয়ে আসা লাল রক্ত
সিঁদুরের দাগ টাও মিলিয়ে দিয়েছে ,
সঙ্গে জল ছিলনা  -তাই খেজুর রসের হাড়ি থেকে
কালো পিপড়ে গুলো সরিয়ে এক লোটা রস নিয়ে মুখে চোখে তার ঝাপটা দিলো ,
হুহঃ , মিষ্টি মুখ কি আর অশুভ কাজে মানায় ?


(৩)
স্ত্রীর চিতার আগুনের একটু দূরে
বসেছিলো সমরেশ ,
চিতার আগুনের স্ফুলিঙ্গ যেনো  আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে চাইছে
- একটু মুক্তি পাওয়ায় জন্য ।
আর সেই আঁচে তপ্ত হতে থাকছে সমরেশ ;
সঙ্গী বলতে যারা এসেছিল তারাও ফিরে গেছে যে যার ঘরে ,
ডোমদের  দেওয়া এক প্লাস্টিক ভর্তি চোলাই নিলো গিলে ,
আগুনের দিকে ঠাই তাকিয়ে আছে চিতার দিকে,
  সে যেনো প্রথম বারের মতো  স্ত্রীর প্রেমের পড়লো ।
আগুনের ওপারে সে দেখছে নীরার চোখগুলো ,
একটু একটু করে  চোখ - নাক- কান-ঠোঁট- গলা- ঘাড়- বুক - চিবুক সব ষ্পষ্ট হতে থাকে সমরেশের কাছে,
  সে নীরার  পাশে গিয়ে বসে , নীরার গায়ের বাসি আতরের গন্ধটা আরো বেশি তাকে কাছে টানছে ।
পাহাড়ি তাবুর নগ্ন নির্জনে সেদিনে রাত টা  ধোঁয়ার মতো উড়ে যেতে চাইছিলো , সেদিনে রাতেও নীরার শরীরে পিপড়ের কামড়ের দাগ পড়েছিল ।
সেই দাগ অবশ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি , এক লোটা অ্যাসিড এর জাপটায় সে দাগ ও গেছিলো মুছে , তারপর সমরেশ আরও আরও দূরে গেছিলো সরে...
হটাৎ একটা বিস্ফোরক শব্দে সমরেশের জ্ঞান এলো ফিরে , স্ত্রীর মাথার খুলি ফাটার শব্দে প্রেমিকার হিসেব গেলো মুছে !!


(৪)
জানলা দিয়ে আসা সূর্যের আলোর তেজটা  যেনো আজ একটু বেশি ,
ঘুম থেকে উঠে চোখ গেলো
চায়ের কাপ এর দিকে,
বাষ্পটা যেনো চুমক দেওয়ার ডাক দিচ্ছে ,
পয়লা চুমুকে ঘুমটা  ভেঙ্গে গেলো , চা টা মোটেও মিষ্টি নয় , হয়তো চিনি দিতে ভুলে গেছে চা এ !!


তবে চা , চায়ের কাপ,  চিনি - সবকিছু সাইডে রেখে কি জানি অনমনে  হাঁটা দিলাম জানালার পেছনের মাঠের দিকে ।
মাড়িয়ে যাওয়া ঘাসের মাঝে কালো হয়ে যাওয়া রক্তের দাগ - কয়েকটা পিপড়ে জমায়েত বেধেছে সেখানে ;
একটু দীর্ঘ নিশ্বাস পড়লো -
মিষ্টি হোক বা বাসি রক্ত এ দেশে পিপড়েরা কোথাও মুখ মারতে ছাড়েনা !!!