তুমি যেদিন বিদায় বেলায় আমাকে ফোন করলে মনে হচ্ছিল এক নিমেষে সময়ের চাকা বুঝি থেমে গেছে।
তোমার গলায় কান্না মিশ্রিত আবেগ আমার ভিতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে নিঃশেষ করে দিচ্ছিলো।
রৌদ্রজ্জল শরতের আকাশ মুহুর্ত্বেই ভরে গেল কালো মেঘে।
এখনই বুঝি আকাশটা কেঁদে উঠবে। আমার মুখে শব্দ নেই শুধু কান পেতে ছিলাম
মিমাংসিত সত্যের অপেক্ষায়। কাঁপা গলায় বলে গেলে যা তুমি বলে হালকা হতে চেয়েছো।
শুধু শেষ কথাটা এখনও কানে বাজে, "তোমার কিছু বলার নেই?
বলেছিলাম-তুমি ভালো থেকো আর আমার জন্য দোয়া করো আমি যেন তোমাকে ছাড়া-
বলতে গিয়ে কন্ঠ রুদ্ব হয়ে গিয়েছিল সেদিন।
মনে হলো বুকের উপর কেউ যেন কয়েক শত মণ পাথর চেপে ধরেছিল,
আমার নিঃশ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল।


অনেক কথা বলার ছিল হয়ত সেদিন।
শেষ বারের মত তোমাকে একবার দেখার আকুলতা-একবার জড়িয়ে ধরে
ফুফিয়ে কেঁদে উঠার তীব্র বাসনা হতে পারতো।
লোকালয় ছেড়ে পাহাড়ে ঘর বাঁধার ব্যর্থ প্রস্তাব দেয়া যেতো,
অথচ এসব কিছুই বলা হয়নি।
যে শিকল তুমি পড়তে চলেছো তাকে উপেক্ষা করার শক্তি ও সাহস হয়ত দু'জনেই হারিয়ে ফেলেছি।
আমাদের আলাপচারিতা শেষে হয়ত তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছো!
বাসর ঘরে একান্তে কিভাবে কাটাবে, বিয়ের পরদিন সকালে কোন শাড়ীটা পড়বে,
হানিমুনে কোথায় বেড়াতে যাবে ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছো বুঝি। কাল থেকে
স্বামী-সংসার আর শাশুড়ী-দেবর-ননদদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠবে।
আমার কথা মনেই পড়বে না। এই ব্যর্থ মানুষটাকে মনে রেখে কি লাভ?
যে একবারের জন্যও শাড়ীর আঁচল টেনে বুকে আগলে নেয়ার সাহস করেনি!
এমন প্রেমিকের প্রতি হয়ত করুণা হয় তোমার, প্রেম জাগে না বোধহয়।


আষাঢ় পেরিয়ে আষাঢ় এলো অথচ একবারও আমার খবর নিলে না।
আমি কেমন আছি, মজনু হয়ে রাস্তায়-ফুটপাতে ঘুরছি নাকি মরে গেছি?
শপথ করেছো বুঝি-আমাকে ভুলে যাবে!
ভুলতে পারলে দুজনে বেঁচে যেতাম।
তবুও কেন জানি তোমার প্রতি রাগ নেই, অভিমান নেই, নেই কোন চাপা কষ্ট!
শুধু এই ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, তুমি সুখেই আছো।
আমার মেঘবালিকা ভালো আছে।
আর আমি?-হুম আমার কথা আর জানতে চাইলে কই?
রাত অনেক হয়েছে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।
একটু ঘুমানো দরকার,
একটু ঘুমানো---- দরকার।