কচি হাতের কচি লেখা
বোনটি সেদিন লিখেছিলো একটি চিঠি
ভাই কতদিন হয় তোকে দেখিনা
সেই যে হেমন্তের সোনালি ধান মাড়িয়ে
ভাইয়া তুই বলেছিলি-
মাঘে এসে আমার হাতের পিঠা খাবি
মাঘ গেলো ডালে ডালে কৃষ্ণচুড়ার কূঁড়ি
সজনে ডাল হয়ে গেছে ফুলে ফুলে শাদা
পলাশ শিমুল বনে লেগে গেছে বিভিষিকা
তবুও তুই এলিনা।
কবে আসবি তুই?
আর দেরি করিসনে।
সময় চলে যায়
শহর থেকে কত মানুষ আসে
কেবল ভাই আসে না
বোন পথ চেয়ে থাকে
দৃষ্টি তাঁর ধুলায় মিশে যায়
শহরে চলছে দুর্দান্ত সংগ্রাম
সে সংগ্রাম নাকি মায়ের জন্য
সে সংগ্রাম নাকি ভাষার জন্য
সে সংগ্রাম নাকি কথা বলার জন্য
সে সংগ্রাম নাকি অধিকার আদায়ের জন্য
ভাইটি হলো সে সংগ্রামের অগ্রপথিক
তাই তো দেরী
মিছিল মিটিং লেগেই আছে
প্রতিটি সন্ধ্যায় দিতে হয় জ্বালাময়ী ভাষন
উদ্ভুদ্ধ করতে হয় আপামর ছাত্রজনতাকে
এ অধিকার আদায় করতেই হবে
তাই তো ভাই আসে না
বোনের চোখে তাই জ্বালা ধরে যায়।
আর কত সে পথ চেয়ে রবে
আর কত সে শুকনো পিঠা রোদে দেবে
সবপিঠা যে কাকে নিয়ে যাচ্ছে
তাই তো এই লেখা
তাই তো এই ভালোবাসার আহ্বান
তাই তো এই ভালোবাসার এত অনুরাগ
এবার যদি তুই আসিস
তোর জায়গা হবে না
কথা বলবো না তোর সঙ্গে
খাবো না তোর আদরের চুমো
শুনবো না তোর স্নেহমাখা ডাক
প্রিতা আয় আমার কাছে আয়।
আরো কতো অন্তহীন ভাবনা
ভাবনার ছিন্নপাতা উড়ে উড়ে যায়
লেখতে লেখতে চিঠির পাতা ভরে যায়
তবুও কথা শেষ হয়না।
এবার পোস্ট হলো
গ্রামে কতলোক আসে
কতজনকে সে বলে
আমার ভাইয়াকে বলো আমার কথা
ভাই তবু আসে না
ফাগুনে ডালে ডালে ততদিনে ফুটেছে ফুল
কৃষ্ণচুড়া হয়েছে রক্তরঙ্গিন
যেন আগুনে পুড়ে যাবে সব
ভরে যাবে অপার সমূদ্র লালে
তাই হলো
ওরা ভাষা দিতে চাইলো না
গুলি চালালো।
দূর হতে বোন শুনে তার শব্দ
ও কার কান্না
ঠিকরে উঠে বোনের বুক
হাজারো শঙ্কা এসে ভীড় জমায়
মনের দুয়ারে।
সে শঙ্কাই একসময় সত্য হয়
ঘুমহীন চোখে বোন চেয়ে দেখে
তাঁর ভাই এসেছে
কত ক্লান্তি তাঁর সারা শরীরে
সে আর ডাকবে না
সে আর হাসবে না
সে আর পিঠা খাবে না
প্রিতাকে দেবে না আদরমাখা চুমো
নেবে না আর বুকে টেনে
অ আ ক খ কাঁথায় সে শুয়ে আছে
কৃষ্ণচূড়ার একটি ফুল ঝরে পড়েছে বুকে
কারও মুখে কোন কথা নেই
কে দেবে প্রিতাকে শান্তনা।