ভালোবাসা কি তা আজও জানি না
ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত আমি
আজও তার খোঁজে পাড়ার গলিপথের মোড়ে টিনএজবয়
ল্যাম্পপোষ্টের খুঁটি হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে
চেয়ে চেয়ে দেখি শহর ফেরত কিশোরী মেয়ের
ললাটের বিন্দু বিন্দু ঘাম
কিংবা উড়নার ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা মেঘ কাল চুল
কিংবা চেয়ে দেখি স্কুল ফেরত বালিকাদের উন্মেষ চপলতা
স্কুলড্রেস ফিতে বাঁধাস্তনের নিপূঁণ কারুকাজ
কিংবা সামনের দোতলার ছাদে আসা স্বরবর্ণের ভেজা কাপড় নাড়া
দুপুর রোদে হুক খোলে তারে ঝুলানো লাল ব্রেসিয়ার নিয়ে যাওয়া।
রাতের আকাশের তারা গুনতে গুনতে চোখ পড়ে যায়
স্বরবর্ণ যে পাশে থাকে সে পাশটায় আবছা কাঁচে জানলায়
দেখি স্বরবর্ণ পড়ছে আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আমায়।
একদিন স্বরবর্ণ আমায় ডেকে নিয়ে বললো,
-এভাবে দাড়িয়ে আছ কেন?কিছু একটা কর,
তুমি দাড়িয়ে থাকলে যে আমার ভাল লাগে না,পড়া হয় না।
আমি অপলক চেয়ে দেখি তার লেসমিক ঠোঁট
কেমন যেনো থরথর কাপঁছে
তার চোখ কেমন ড্যাব ড্যাব তাকিয়ে দেখছে আমার বুকের জমিন।


তার কথায় কিছুদিন আমি আর ল্যাম্পেপাষ্টে দাড়াইনি
আড়ালে দূরে দাড়িয়ে দেখেছি দোতলার ছাদে কেউ আসে কিনা।
এখন আর স্বরবর্ণ ঘরে থাকে না-পড়ার টেবিলে বসে না
ছাদে দাড়িয়ে থাকে-ছাদ যেনো তার পড়ার  টেবিল
আর গলিপথ পড়ার বই-খাতা-কলম
দুচোখের দৃষ্টি দিয়ে স্বরবর্ণ কারও আসার অপেক্ষার কাব্য লিখে।


একদিন স্বরবর্ণ চিঠি লিখে-
আমি বললেই তোমাকে পলাতক হতে হবে?
তুমি কি চোখোর ভাষা মনের ভাষা কিছুই বুঝ না
কত আর আসায় কষ্ট দিবে,আমার যে পড়া হয়না,
তোমাকে না দেখলে ভালো লাগে না।


তারপর থেকে আবার আমি সেই ল্যাম্পপোষ্টের তলায়।


তবে এখন আর আমাকে হেলান দিয়ে দাড়াতে হয় না
চায়ের দোকান খুলেছে আমাদের পাড়ার রহিম চাচা
তার টোলেই বসে থাকি-স্বরবর্ণদের জানালার দিকে কিংবা রিক্সায় সামনে দিয়ে চলে যাওয়া কোন নারীর দিকে চেয়ে চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে ঝড় তুলি,
আর তাতে আমার বুকের মধ্যেও ঝড় উঠে।


বেশ কিছুদিন হয় স্বরবর্ণদের জানালা বন্ধ
এ পাশটায় আর গহীন রাত অব্দি আলো জ্বলে না
কেউ সারা ঘর জুড়ে হন হন করে হাঁটে না
জানালার শিক ধরে কেউ দাড়িয়ে থাকেনা।


আমার বুকের মধ্যে মূহুর্তে মূহুর্তে মোচড় দিয়ে উঠে
গায়ের লোমগুলো অজানা আশংকায় খাড়া হয়ে উঠে
শিরায় শিরায় টান পড়ে এলোমেলো বাতাসে নষ্ট হয়ে যায় চুলের ভাঁজ
পায়ের মাংশপেশী কাঁপে-প্রচন্ড ব্যথায় যেণো ছিড়ে যেতে চায়
আচমকা চোখ গলে গন্ড বয়ে গড়িয়ে পড়ে জল
স্বরবর্ণের  কি হলো ? তাহলে সে কি আমায়
ভালোবাসার ছাড়পত্র দিয়ে গেলো ?
আমায় না দেখে থাকে কিভাবে স্বরবর্ণ?
দীর্ঘ্যশ্বাস ফেলে স্বরবর্ণের কথা ভাবতে ভাবতে
দুহাতে দুচোখের জল মুছে চোখ মেলে তাকাতেই দেখি যে স্বরবর্ণ এতদিন খাচাঁয় বন্ধী পাখির মতো ছটফট করতো
সে আজ আমার সমূখে সঠান দাড়িয়ে




----------------------------------চলবে