আমি হই এক অন্ধ বিশ্বাসী
সদাই রই, এই বিশ্বাসে খুশী ,
করিও না মোরে- যেন দোষী ৷
কোন জ্বালায় যে-, বেশি -
এ মত্, মনেতে পুষি ?
অনেকের পাইবে- হাসি -
আমি মনে-প্রাণে অন্ধবিশ্বাসী
ইহারে যে বড়ো ভালবাসি !!


কারণ ? আমার অন্ধবিশ্বাস -
পেয়েছি আমি তার আশ্বাস !
এর আছে অজস্র বহুগুণ ,
যেন বাণে ভরা অর্জুনের তূণ !
বড়ো বড়ো সংহার অস্ত্র -
ভরে আছে যত্র-তত্র !
বিস্তর রূপ সমাজ মাঝে
ভয় পেয় না শুনে পাছে !!


এ অস্ত্র করে না সিধা প্রহার
প্রয়োগে মানে না এরা হার -
প্রমাণ মেলে অনেক তাহার ,
যেমন প্রায় গাছে -
পরগাছা যেমন জড়িয়ে আছে
পরের উপরে তারা বেঁচে !
উধার কোথাও না যেচে ৷
এমনি ধারায় সব জায়গায় -
আমাকে মানায় !!
মম অবস্থানে, না হৈচৈ মচে
পড়ে থাকি সর্বদা অতুচ্চে !
রয়ে-সয়ে খাই শুধু তার রস
সবারে করিয়া ভালমত বশ ,
আমার অস্ত্র !অন্ধবিশ্বাস !!
আমি অন্ধ বিশ্বাসী ৷
রস চুষি ! না  প্রাণে নাশী ,
বিষ ভরা মম আশী !


শেষ করি না, কারো জানে -
বাঁচিয়ে রাখি তারে মনে-প্রাণে ৷
তারাও মানুষ-
তাদের থাক কিছু হুঁশ ;
আছে তার অতি দরকার
সুশ্রী এ ধরায় শুষিতে আমার
সবারে চিরতর বারবার ,
বেঁচে থাকার দেই অধিকার ,
করিতে চাইনা সব সাবাড় !
ওরাই যোগায় মম আহার !!
শুধু ধরি আর ধরে ঘুরাই -
সে বেঘোরে ঘোরে ,পাঁইপাঁই !
লাটিম যেমন ঘোরে
শুধু ঘুরাই তাকে ধরে
সে ঘোরে বেজায় –জোরে !
সত্য কথাটি, ঠিক তাই
আমি প্রায়ই স্মরণ করাই !
তবু হবে না মানবে বোধগম্য
আস্থা যে মানুষের আদি ধম্য ?
আমি চালি আমার চালাকী
আমার খেলাটাই হল ভেলকী !!
পরপর সারা হয় কাজ বাকি ,
রহিব সমাজে স্থির পাকাপাকি !
এরকম ধারায় চলিতে থাকায়
আমার মান বাড়ে হেথায় ,
বাড়ে আত্ম সম্মান -
সবাই আমাকে মানে -
বিশ্বময় সব জানে -
করে সদা মম জয় গান !!


অন্ধবিশ্বাসে ভরি ভয় !
সর্বস্থানে আবার তা’ নয় ,
বিজ্ঞানে কিছুটা আশ্বস্ত হয়
জানিয়া ক্ষণিক রয় নির্ভয় ৷
অন্ধ বিশ্বাসীর বিশ্বস্ত লোকে ,
হৃদে মেখে ,তার স্বাদ চেখে -
মম আচরণ দেখে-দেখে -
সকলে মন ভরে শেখে !
আস্থায় ধরিয়া বিশ্বাস -
আমার এই অন্ধবিশ্বাস ,
গরবে মাথায় তুলে রাখে ৷


এজন্য তো অন্ধবিশ্বাসী হই ,
সত্য কথাটি এখন কই !!
আমি যে অন্ধবিশ্বাসী
তবু হেথায় পরিচয় প্রকাশি
সদা, ধৌত ধবল পোশাকে
অপরূপ দেখায় আমাকে
উজ্জ্বলতায় অতি মাধুর্য
লেশ হীন কোথাও কদর্য !
সৌম্য চেহারা মনোহরা
দেখিবে যারা আত্মহারা
দর্শন, কান্তিতে কার্তিক
গাঢ় আভামণ্ডিত ভাবগতিক,
পবিত্র, সত্য, সাধু সম
গুণ ভরা সাথে ঘোরতমঃ !!
শ্বেত লম্বিত ঘনকেশ
তারা মস্তকে শোভে বেশ !
কখনো বিরাজে মস্তঝুঁটি
শ্মশ্রু-গুম্ফ, নির্মূল ছাঁটি
করেছি পরিপাটী, সপাট -
লাল তিলকে ভরেছি ললাট !!
সত্যকে মিথ্যা করি
জীবন ভর হেরাফেরি ,
সর্বদা কর্ম ,উলট-পালট
মনে কেহ ভাবে না লম্পট !!


উচ্চশিরে বুক ভরে
বলি সবারে বারেবারে
আমি যে অন্ধবিশ্বাসী
দেখ মোরে ভূলোকবাসী ৷
আমায় সবে মানার কারণ
এ বিচিত্র ভেক ধারণ !!
ছলনায় মন করিতে হরণ
সমাজে সব ব্যবসায়ী করণ !
পরিস্থিতি ভরা গোলমেলে
সঠিক যতো ছুড়ে ফেলে
চিন্তা-ভারনা ধূম্র জালে
বাঁধি সকলে, সাথে একালে ৷
বিভ্রান্ত করা আসল সাজ
ফাঁকে সারি অজস্র অকাজ
বিশ্ব জোড়া এসবের রাজ ,
রাজ করি বিনা তাজ !!


আমার বিচরণ সর্বকালে
যদিও বিজ্ঞান এসেছে হালে
পারে নাই সমূলে তাড়াতে ,
ভাগ বসাই বাড়া ভাতে !!
আমি যে অস্থায়ী ভাড়াটে ,
পুঃন পাই স্থান, পরঘর জোটে ৷
যখন থাকি পরের ঘরে
তারে ও খাই, কুরে-কুরে !


এক তাড়ালে লুকাই আড়ালে
থাকি বাহারে, রাজার হালে !
নেই ভাবনা কোন অভাব,
বদলায় না চির স্বভাব
দরকারে অপরে দেয় ঠাই ;
আমি সর্বদা আস্তানা পাই ৷
সুস্বাদু সব খাই, ঘি-ভাতে
আমিষ নিরামিষ তাও জোটে ,
ঠাণ্ডা গরম, পানীয় সদ্য-
যখন থাকে যা বরাদ্য ;
পাওয়া যে বড়ো দরকার -
কেন পাব না আহার ?
কে করিবে মানা তাহার ,
বড়ো শক্তি যে আমার !!


যারা মোর শিষ্য, সাকরেদ্
তাহার এবং তার পরিবার
সদা রাখি, খবরা-খবর
নেই জাতি ভেদা-ভেদ ৷
যার ঘাড়ে চাপি
সে ওঠে কাঁপি
শক্ত করে ধরে
আধমরা করে
বাঁচিতে তারে দেই
হোক না কেন যেই ৷
মন্ত্রী হোক না কেন সন্ত্রী
হুনূরী বা যন্ত্রী
সবাই আমাকে চায়
না চেয়ে যাবে কোথায় !
শুপ্ত বা অন্ধকার কোনায়
দুর পথে যাত্রায়
আমাকে স্মরণ করে মেলায় ৷


বাঁচা মরা, যৌবন জরা
শ্মশানে শব পোড়া
সব তাতে আভা ধরি
নিজের মত কাজ সারি ৷
আছে ভালমত জানা
তারা আমাকে বিনা
কোন ভাবে বাঁচে না !
এ জঘন্য হেরাফেরি
সবার জন্য ত্রাণে সারি
সবকে সযতনে বশ করি !
গ্রহ-নক্ষত্র, সূর্য, শশী
আর পরলোকবাসী
আমি যে অন্ধবিশ্বাসী ,
মর্ত্যে দেখাই গয়া কাশী !
তবে, সৃষ্ট সবে এভবে
আমাকেই কোলে নেবে ,
স্বর্গ মর্ত্য পাতাল
আর একাল পরকাল
সবই আমার মায়াজাল !
ঢেকেছি দিয়ে ধূম্রজাল ৷


ঝঞ্ঝাঝড় বন্যায়
দুর্ভিক্ষে ক্ষরায়
যখন প্রাণী প্রাণ হারায়
উপশম পাবার আশায়
সব মানুষ আমাকে চায় ,
তখন আমি মাতি যজ্ঞে !!
সবে মিলে অজ্ঞ-বিজ্ঞে
ডাকাই দেবতা ইন্দ্রকে
আহ্বান করি তাঁকে ,
ইন্দ্র সমস্ত বার্তা শুনে
মহাআপদ ভরা বিপদ জেনে
অবতরিত সাক্ষাৎ ধরায় এসে
তিনি উপনীত হন পাশে বসে !
যে মানে সে অন্ধবিশ্বাসী
না মানে সে অবিশ্বাসী !!


আমার আবার বড়ো সাজ
নাহি মোর ভয় লাজ
আমি অন্ধবিশ্বাসী
কাজও সারি রাশিরাশি !
বাঁধিতে বড়ো বাঁধ
অপদেবতার অশুভ সাধ
আমাকে মিটাতে হয় ,
অন্ধবিশ্বসের হয় তখন জয় !
খাদানে রুখিতে ধ্বস্
আমি করি মন্ত্রে বশ
কখনো নর বলিময় ,
পূজা-পার্বণ-হবন রয়
জীব হত্যা পশু ক্ষয়
শেষে আসে বশে কার্যজয় !!


অনাবৃষ্টি-অতি বৃষ্টি
প্রকৃতির অশুভ সৃষ্টি
হটাতে সবার কু-দৃষ্টি
আমাকে নিয়ে নানা জায়গায়
যে কোন হত্যালীলা ঘটায় !!
তারা এখনো অন্ধবিশ্বাসী
মোর প্রাচীন আদিবাসী ,
তারাও জীব হত্যায় ধায়
ভূত-প্রেত দানব পোষ মানায় ,
অন্ধবিশ্বাসে ভরা তার আলয় !!


আমাতে বড়ো শক্তি
প্রবল আমার প্রলয় গতি
আমি গড়ি সতী
অধুনা ‘রূপকুম্বর’
এর চাক্ষুষ উত্তর !!
যতো আছে পবিত্রধর্ম
বুঝিয়া গূঢ় মর্ম
আমাকে তারা ডাকে
কাজের ফাঁকে ফাঁকে
সাধ্য মত সাড়া দেই
হউক না কেন যেই ৷
করি মন দিয়ে সবার কর্ম
এটা আমার পরম ধর্ম ,
আমি চরম স্বস্তি ইহাতে পাই
মনোকামনা পূরণ যে তাই  !!


আমার গোলকধাঁধা ইহকাল-
রূপ দেখাই পরকাল
পাতা আছে মোর মায়াজাল !
পাইতে বর্তমান ফলাপল
এখনো জালে বাঁধো
যদিনা সেঁধো তবে কাঁদো
অশুভ আত্মা হয়ে ভোগ
পুনঃ বলছি জাগো !!


উদ্ধারিতে জগৎ আমি আগত
আমাকে জানাও স্বাগত ,
বিনা অন্ধবিশ্বাস
না পাবে আশ্বাস
যা পাবে প্রকাশ
হবে না বিকাশ
অতএব অন্ধবিশ্বাসী
নহে সত্যানাশী !!


আমি সারা বিশ্বে
ভরেছি নানান শিষ্যে
আমার হয়ে অবিরাম বয়ে
আমার বলে ধারায় চলে
সর্ব স্থানে স্থলে জলে
তারা মম বলে বলিয়ান
আমি তাদের দানি মান
তারা পায় সম্মান !!


আছি আমি চীন, জাপান,
সেই সুদূর কুমেরু সুমেরু
সাগরের গভীর সলিলে
আরো বিরাজি পাতালে !
সাহারার তপ্ত মরু
তেষ্টায় বুক করিলে দুরুদুরু
মরুতে নকল মরুদ্যান
এই বিশ্বাস, মম যোগদান
তপ্ত তাপে জল দেখাই
এসব মরীচিকা মাত্র তাই !
কারও তেষ্টা মেটে না
তৃাষ্ণার জল আর পায়না !!


সময়ে এক-এক স্থানে
যেখানে যেমন সকলে মানে
সেই মত পছন্দ রূপ ধরে
আমি যাই সহজে উৎরে ৷
বহুবছর পিরামিডে পড়ে মমি
জমিয়া মিশর দেশে আমি
সহস্র কাল থাকি আমি নীচে
সেথায় আরও অনেকে আছে ৷
একে অপরকে শুধু দেখি
দুঃখ-বেদনার ভাষা শিখি
কথা হয়, নীরব ভাষায় ,
দু’চোখ ভরে, থরে-থরে
বারি ধারা ঝরে অঝোরে-
চোখ ছল-ছল, কান্নায় !
যদিও তারা এখন নাই
বহুদূরে গেছে সরে তাই ,
পড়ে শুধু রয়, দেহ অবশেষ
তাও মাত্র কঙ্কাল বিশেষ ;
কর্মকাহিনী সাথে কুহেলিকা
ভরা কত যায় না আঁকা !!


রুদ্ধ কণ্ঠে আমাকে জানায়
ভাবনা ভরে আমার মাথায় ,
হৃদয় নিদারুণ অতি করুণ
মর্ম কথা মমিরা কয় !!
সত্য যেন ঘটিত সেথায় ,
তারা প্রতিকার এর চায় !
ওদের শান্তি ভঙ্গ মনে
অধুনা ব্যবস্থার ধরণে ৷
অসম্ভব নহে কখনো সম্ভব
মৃতে হয় না জীবন উদ্ভব ,
তোমরা কত কি বলো
হোক না কেন খুবভাল ,
আমরা রয়েছি হয়ে মমি
কেন সত্যটা বোঝ না তুমি ?
মরে শান্তিতে আছি একান্তে
বাঁধা নেই কোন কালান্তে
থাকি না মোরা হয়ে ক্ষুব্ধ
তবে কেন কর মোদের দগ্ধ ?
তোমরা গড় অজুত
অজস্র কাহিনী অদ্ভুত !
বাস্তবে যা কখনো হয়নি
কী করে আমরা মানি ,
যখন মনগড়ন কাহিনী শুনি ?
তোমরাই গড়, টেনে আনি
বিচিত্র মাল-মসলা সব ,
বাস্তবে হয় না সম্ভব ?
রচনায় আজগুবি উপন্যাস
সেথায় ভাষার কী বিন্যাস !!


অবাস্তব কথা, মনে পাই ব্যথা
তোমরা বলো অযথা ৷
মমি আরও বলে, -
চোখের জল ফেলে ,
লোকে করে বিশ্বাস
আমরা হই হতাশ !!
রজনীর গড়া রোমাঞ্চ
মমির বাড়ে আতঙ্ক
মাথা খাও, বলি থামাও,
শান্ত থাকিতে দাও ?
তোমরা অন্ধবিশ্বাসীরা
লিখে সারো হও সারা
তোমরা শান্তি চাও না
তাই তো করো না মানা ,
এজন্য ঘটনা, বাদ্ধ রটনা
স্বার্থী রয়ে, ত্যাগ করুণা !
তোমরা কর ব্যবসা ?
লোককে ধরাও মিথ্যা আশা !
দেয় তারা প্রচুর পয়সা ,
এসব মায়া- ইন্দ্রজাল !
অতি ম্লান তোমাদের খেয়াল ,
ভরা যেন ঘন কুয়াশা
অন্ধবিশ্বাসীর বল- ভাষা !


সাগরে আমি ‘কমলে কামিনী’!
ভ্রমনে, সাগরে একদা যামিনী ,
চাঁদ সওদাগর
পাড়ি দিতে সাগর
দেখিয়া এ দৃশ্য যারপর
প্রচারে মাতে, ঘরে-ঘর !
সারা দেশ যায় ভরে
অন্ধবিশ্বাসের জোরে
কৌতুহল নিয়ে আসি
মানে সবে, খুশী-খুশী !!


অন্ধকারে আকাশে দেখাই
রোজ এলিয়ান্স আসে, বুঝাই
উড়ন্ত তসতরী, সারি-সারি
তারা ভূতলে নামে
আমরা দেখি মাত্র ভ্রমে !


আমরা দেখি পরী
তার সওয়ারী
পঙ্খযুক্ত কামধেনু
কে যেন সাথে বাজায় বেনু ,
দেখি আকাশে রাহুকেতু
এসবই হয় অন্ধবিশ্বাস হেতু !!


যমকে কখনো
হয় না পাঠানো
অন্তিতম কাল এলে
যমদূত আসেন চলে
সামান্য যমদূতে না হলে
যম আসেন চলে
আত্মাটা বেজায় ভারী পানা
আনিতে ধকল আছে নানা ,
একাজে ঝুকি ভারী
এ সময় দরকার তাহারি !
যম না করে শব্দ
আত্মা ধরে করিয়া মুঠিবদ্ধ ,
নীরবে অতি সত্বরে
নিয়ে যান সাথে উপরে
যমের দুয়ারে আত্মা আবদ্ধ
অন্ধবিশ্বাসে এ জ্ঞানলব্ধ !!


নানা জায়গায়
যন্ত্র যানে ঝুলায়
কাচা লঙ্কা, লেবু ,
বিপদ কাটেনা তবু !
বিড়ালে রাস্তাকাটা
উল্টো করে রাখা ঝাঁটা
এরাও যাত্রা পথের কাঁটা !
চালে বসিয়া কাক
যদি করে হাক্-ডাক্
এই বুঝি গেল জাত
যেন ঘরে ভরে হাভাত !
রাতে হুতুম পেঁচা
বসে যদি উঠোন মাচা
ডাকো ওঝা, হবে যাচা !
রাতে যদি কেহ গোঙায়
খোঁজে নানা উপায়
মুচনে ভূতেরা মিলে
ধরেছে বুঝি ছেলে !
ভূত ভাগাতে, ওঝা লাগাতে
ধকল হয়, অনেক পোহাতে ;
এ যাত্রা ভূত ভাগিল তাহলে ,
ওঝাই বাঁচাল ছেলেটা একালে !


এদিন বা ওদিন, প্রতিদিন
যদিও কোন দিন নয় হীন ,
এদিক বা ওদিক, প্রতিদিক
বুঝিতে হলে সঠিক
দিন-দিক বোঝ ঠিক-ঠিক ;
আগে দেখ পুঁথি
জান যোগ, তার স্থিতি
গমনে হও সুমতি
যেন, অশুভতে হবেনা গতি ,
সব তাতে ভেজাল জাদা
কথা গুলো সিধা-সাদা ৷
সবই অন্ধবিশ্বাস
মিটাই ক্ষণিক মনের আশা ৷


আমার শক্তির খেলা
দেখ এবার তার জেল্লা !
গভীর রাতের আঁধারে
ভূতে ধরে যারে তারে
সে কী অসহ্য জ্বালা !
তখন আমাকে দেবে ইত্তলা
শীঘ্র ভূত তাড়ানোর পালা ,
সে সব ঘটনা আছে মেলা-
নয় তাহা ছেলে খেলা
আমার সাড়ায় মেলা চেলা
তারা না করিয়া হেলা
তথায় তারা দেখায় খেলা !
সর্বকালে মেলে ডাকিলে
সেবার্থে চলে তারা সকলে ।


হুঙ্কার ছেড়ে চেলা আসে
ভূত ভাগাতে বড়ো ভালবাসে ,
ভূত যাবে না তাদের না হলে
ঝাড়াতে ব্যাস্ত নানা কৌশলে !
অমাবস্যারাতে ভূত ভাগাতে
রকমারি ধারিকাটে চেহারাতে ,
কালো কাপড় বেঁধে মাথে
চিমটা হাতে নাচিতে-নাচিতে
তারা উৎসাহে ওঠে মেতে !
খুব করে ধুনি জ্বালি
মুখে মাখি, গাড় কালি
সাজে নানান পালি
বলে মুখে যা তা বুলি !


আবার অনেক ফাইফরমাশ
তাল তলার একগোছা ঘাস ,
তুলসী পাতা বেল পাতা
ব্যাঙের তাজা ছাতা
পেঁচার মরা মাথা ,
এক টুকরো মুরগীর ঠ্যাং
গাছে থাকা গেছো ব্যাং ,
পঁচা কুকুরের কাদা
ছাই এক গাদা ,
ধান-দুর্বা-সর্ষ পঞ্চফল
সাথে ডাব নারকল ৷
একমুঠো পিঁপড়ের ডিম
ডাল, পাতাশুদ্ধ নিম  ,
পিতলে ঘটি ভরা জল
তালের তাড়ি এক বটল ,
ঘৃত-মধু-দুধ
সাথে সোয়া আনা সুদ ৷
এসব ভাল করে সেরে
অদ্ভুত ভেক ধরে ,
ভূতের মত হম্বিতম্বি
দেখায় বিচিত্র অঙ্গ ভঙ্গি !
হাত পা বেজায় নাড়া
চুল ঝাঁকিয়ে ছাড়া
চিমটা ঠন্- ঠন্
ঘুরিয়া বন্ -বন্
গলাকম্প, লম্ফ-ঝম্ফ,
টেনে ছেড়ে, নিজ গুম্ফ ;
চোখ করে লাল ও মোটা
রাগে যেন সর্বশরীর পাটা !
কখনো বিড়-বিড়ানো-
সজোরে মন্ত্র আওড়ানো
হ-য-ব-র-ল-বলিয়া বোল
অকথ্য আবোল-তাবোল !
দেয় গঙ্গাজলের ছিটা,
দু’হাতে খুব বাজায় চিমটা !
এতেও না হলে জুত
বাগে না আসিলে ভূত
বলে, আচ্ছা ব্যাটা !
রুগীর গালে কষে দেয় চাটা
দেখেছিস মুড়ো ঝাঁটা ?
এবার করিবো ঝাঁটা পেটা !
রুগী বলে বাবারে -
ভূত বলে বাঁচারে -
ওঝা বলে,- বল, যাবি ?
ভূত বলে মানিব সবি ৷
নিশানা ছাড়ি দিব্যি পাড়ি
এক্ষুণি দিবি রুগী ছাড়ি
নিয়ে পিতলে কলসটা ভারী !
কানায়-কানায় ভরা জল
যাওয়ার সময় সেইটা ফেল ?
ওঝা করে আইন জারি-
যাবি নিশানা ছাড়ি !
আমড়া গাছের ডাল
তাও ভেঙে কর বেহাল ৷
দিয়ে প্রমাণ তবে যাবি
বল, এসব কী পারবি ?
রুগী বলে হ্যাঁ,নাই মানা
বাস্তবে এসব হয় না !
অন্ধবিশ্বাসী হয় রাজি
সত্যবিশ্বাসী বলে কারসাজি !


আমার প্রথম প্রধান কাজ
শিশুদের মনে করি রাজ৷
অবুঝ শিশুর শূন্য মনে
ঘুণ ধরাই মনে-প্রাণে ,
ভরি বিচিত্র অদ্ভুত কথা
যদিও সব মিথ্যা ৷
তবুও তাদের ভাল লাগে
যখন তারা আরো মাগে
বার বার বলে শুনি
যদিও তার মনিব-মানী
আরো ভাল গুণী-জ্ঞানী
তারাও উৎসাহে ধনী
শিশুর অবুঝ মন তা জানি ;
কচি শিশুটা শিখছে যেটা
অগ্রসর আগে অনেকটা-
গোড়ায় যখন পাকা-পোক্ত ,
হবে শীঘ্র অন্ধবিশ্বাসে ভক্ত ৷
আগে যতো পাবে
হৃদয়ভরে নেবে
মগজ হবে বেজায় শক্ত ,
এজন্য এখন এসবে অনুরক্ত
আগ্রে হবেনা তিক্ত-বিরক্ত ৷


বর্তমান সময়
অতীত যেমন নয়
বিজ্ঞান দিয়েছে দ্বার খুলে
ইন্টার নেট সব মেলে,
রেখেছে সত্য জ্ঞান ভাণ্ডার
ভরে অজস্র অপার
এর ভাজে-ভাজে
আমার বিদ্যা লাগাই কাজে ,
জয় হোক অন্ধবিশ্বাস
মুছে যাক সত্যবিশ্বাস !


সময়ের সাথে পেয়েও শিক্ষা
অন্ধবিশ্বস করে না অদেখা
অতীত থেকেও বেশী তারা
মনে ধরে অধুনা যুবকেরা ৷
ছাড়েনা তবু অন্ধবিশ্বাস ,
যদিও তারা পড়াশুনা করে
বাস্তব জ্ঞান শিখে,মনে ধরে ,
করে এম়এ, এল়এল়বি, পাস ৷
প্রমাণ আছে তার
দোষ দেইনা তাহার
ঐ যে ছোট্ট শিশুটা
শিশু কালে শেখে যেটা ,
হৃদয়ে ধরে গভীরে
অন্ধবিশ্বাস ভরে স্তরে-স্তরে ;
এটাই আসল দোষ -
নেই আমার আপশোষ ,
আমি যে অন্ধবিশ্বাসী ৷
দেখাই মথুরা-গয়া-কাশী !


বৃদ্ধের দল
তাদের জ্ঞানে বড়ো দখল
অনেকের যুক্তি-তর্ক প্রবল
কেহ আপন বলে বলিয়ান
কেহ বা থাকে ভোলা প্রাণ
অন্ধবিশ্বাসে নহে অনজান
আচার নিয়ম যার -যার
সবই মানা পরস্পর ৷
অনেকের আছে জ্বালা
বৃদ্ধাবস্থায় চিন্তা মেলা ,
আগের পরপারের ভাবনায়
তারা থাকে সর্বদা উতলায়
তাদের হয়ে তাদের নিয়ে
তাদের আচারে কথা কয়ে
করিতে চাইনা জল ঘোলা,
বাড়িবে বেজায় ঝামেলা !
তারা বেজায় ভদ্র-
হয় যদি তাদের সনে অকদ্র
তারা বোঝে সংসার মাঝে ;
অবহেলিত যেন সমাজে !


ঘটনা যখন হয় ঘটিত-
অন্ধবিশ্বাসের কারণ জনিত ,
সাবধান হতে চায় কর্ম-কাজে ৷
উপায় অন্ত ভেবে না পায়
শেষে করে হায়-হায় !
আঘাত আসে মরমে
মন হয় পরিপূর্ণ শরমে
যখন তারা মানে
সব কিছু সঠিক জেনে !
ঘটিত ঘটনা, সেই অন্ধবিশ্বাস-
মন হয় বড়ো হতাশ !
তবু ,এতেই থাকে বেঁচে,
পরলোক যেচে-যেচে !
অন্ধবিশ্বাসী যদি হয় বলা
নিজ মুখ হবে মসিতে কালা
কান বিরোধে হবে ঝালা-পালা
বিপদ আসিবে মেলা !


কিন্তু একটা কথা
শিশু, কৈশোর, যৌবন যথা-
বৃদ্ধকাল কেন যাবে বৃথা ,
কেন হবে নিয়মে অন্যথা ?
ফল পাকিলে তাতে ভরে শাঁস ,
শেষে কিনা হবে সত্যে বিশ্বাস !
আমি নহি নীতি চালক -
আমি শুধু অন্ধবিশ্বাস বাহক ,
আমি ঘোর অন্ধবিশ্বাসী !
সবাইকে দেখাই গয়া-কাশী !
আমি হতে পারি বণিক চাষী
আর যে কোন ভাষা-ভাষি ,
উপরেও সেথা দেখা হবে
সেই স্বর্গে যাব দু’জনে যবে !
নয়তো পুনঃ পাবে ভবে !!


অসত্য অতি সহজ ভাষ -
কেহ করেনা হা-হুতাশ !
অসত্যকে বিশ্বাস করিলে
অন্ধবিশ্বাসী নেবে কোলে তুলে ,
সাথী স্বপক্ষে, দেবে শাবাশী
কঠিন উদয়ে, সত্যবিশ্বাসী !


অসত্যে হবে না আসক্ত
হতেও নেই অসত্যের ভক্ত ৷
আমি স্বয়ং অন্ধবিশ্বাসী
অনেকে পূজে আমায় আসি,
অন্ধবিশ্বাসীরা দলে ভারী
থাকে না কখনো অনাহারী ৷
এরা বেড়ে হয় বহু সংখ্যক
কারণটা জানা অতি আবশ্যক ।
এখানে, প্রশ্ন উঠিতে পারে
বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী হতে পারে
অন্ধবিশ্বাসী রয় সবার ‘পরে ৷
অন্ধবিশ্বাসী হয় না কভু
সত্য বিশ্বাসী তবু-!!


যদি হতে চাও সত্যবিশ্বাসী
আঘাত হানিবে অন্ধবিশ্বাসী ,
সংখ্যায়, ক্ষমতায়, তারা বেশী
একতা রেখেছে ধরে কষি ;
আপসে খুব তার মেলা-মিশি
বাঁধিবে তোমা বিনা রশা-রশি ৷
তারা যে সচরাচর আবার
আপন পড়শী হয় আমার !!!


(ইং-৭-১০-২০১৫-বুধবার)
(দ্রষ্টব্য-আমি পাঠকের কাছে ক্ষমা চাই, দীর্ঘ কাব্যটির জন্য)