ভিখারীর বড়ো গুণ
সর্বদা জ্বালে না উনুন
ভিখ সে মাঙে পাত্রে                            
দিন ভর যত্রে-তত্রে ,
হাটে-ঘাটে দোকান পাটে
মন্দির মঠে
রেলে বাসে
বারোটি মাসে
রাস্তার মোড়ে বসে ,
সারাটা দিন খাটে
খায় তাই, যা জোটে
কখনো খায় না মোটে ;
তাদেরও নাম আছে ভোটে
নাগরিক তারাও বটে ৷
স্থায়ী বা চলমান
কখনো চড়ে যান
ভিখ মাঙাতে যায়না হটে
খাবার পেলে দেয় পেটে ,
এভাবে তার খিদে মেটে ৷
পাত্রে যা পায়
তা দিয়ে দিন চালায়
পেটের জ্বালায়
থাকে না স্থির
থাকে তারা নত শির !
রাতে সটান
হাতপা করে টান টান
ঘুমায় সে কাজ সেরে
মাটিতে বা কুড়ে ঘরে-
ভাঙা ঘর দুয়ারে
ঘুমোয় অকাতরে ৷
ষ্টেশনে ফুটপাতে
কিছু না পেতে
ফাঁকা মাঠে
ঘরের বাহিরে
গাছের তলায়
কখনো জেগে
মশা তাড়ায় ,
থাকে না ভাড়ায় ৷
কাঁধে ছেঁড়া কম্বল
জীবন সম্বল
হাতে বা লাঠি
হয়তো বাটি
এটাই ভিক্ষা পাত্র
ইহাই পুঁজি মাত্র ,
এরা সব আপন
করে যতন
বুকে ধরে
বেড়ায় ঘুরে ঘুরে ।
পড়ে গেলে
হাতে তুলে
অন্যত্র গমন;
ভিক্ষায় দেয় পুনঃ মন ৷
যে দেয় তারও ভাল
না দেয় তা’ও হল
নয় মুখ করা কালো ,
সে বাসে সবারে ভাল ৷
সারা জীবন স্বাধীন
থাকে না কারো অধীন
ইচ্ছে হলে কটোরা তুলে
পথে চলে যদি কিছু মেলে ,
কারও আদেশ না মানা
হিতোপদেশ না শোনা
কার জয় - কার ক্ষয়
সবই তার অজানা
জানে শুধু ভিখ মাঙা !
কাঁপুনী শীতে বা কড়া রোদে
সে বোঝে তার খিদে
বৃষ্টিজলে যেতে তাকে হয়
পেটের জ্বালায় ,
বোঝে রাত ও দিন
অনুভব হীণ সুদিন-দুর্দিন
অবুঝ সে এসবের উপরে
উঠিতে পারে না ঠাহর করে
রাতে তাড়ায় কুকুরে
দল বেঁধে আসে তেড়ে ৷
দিনে আবার পুলিশ
কাকে করিবে নালিশ !
বোঝে না যে-
কী করিবে সে ?


পাত্র বাড়ালে
সদরে আবডালে
ভিক্ষা কিছু পাবেই ,
দেখিয়া ভিক্ষা পাত্র
সে যে উপযুক্ত মাত্র
কিছু লোক ভিক্ষা দেবেই ৷
সমাজের আচরণ
অনেকের আছে দরদী মন
কারো আছে প্রচুর ধন
ভিক্ষা দানে করে যতন ৷
অনেক দাতার দাপট
করে ছট-ফট
ভিক্ষা দানেতে বড়ো পুণ্যি
করিতে চায় নিজেকে ধন্যি ,
এভাবে ভিক্ষাদানে ভূবনময়
ভেবেই তবে ভিক্ষা দেয় ,
মঙ্গল কামনা ভরা হৃদয়
আশীর্বাদ পেতে চায় -
এভাবে হোক বড়ো জয় ,
সবই ঠিক তারা বোঝে
কাজটা মোটে না বাজে ৷


অনেকে ধর্মশালা গড়ে
ভিক্ষারী পোষে ধরে
ভিখারী সেদিন
স্বভাবে হয় ভিন্
যার খায় নুন
অবশ্য গায় তার গুণ,
ভিখারী অবশেষে
আসে দাতার বশে ৷
ধরে নেওয়া যাক
হাস্য মজাক
হয়ো না অবাক
ভিক্ষা পাত্র হাতে শাসক !
বিদেশে কিছু মাঙে
বিভেদ কোথায়
এখন হেথায়
ভিখিরী আর সঙে ?
সঙ্ সাজে সঙ্
রকমারি ঢং
ইচ্ছে মতো
স্বার্থ যতো
করিতে পুরণ
শখের ধরণ
করে নেয় বরণ
সঙ্ করে মনোহরণ ৷
আর ভিখারী ?
ভিক্ষা নেবে
নুন খাবে
অধীন হবে না-
সে আখিরী ?
মোদের দেশ
ভরে আছে বেশ
উচ্চ শিক্ষায়
বিশাল সংখ্যায়
পেয়ে শিক্ষা
কেন করিবে ভিক্ষা ?
রয়েছে শিক্ষিত
নহে হাজার শত
তেত্রিশ কোটি
ধন্য দেশের মাটি
ধন্য দেশ জননী
ধন্য সব জ্ঞাণী গুণী
সবারে প্রণামী আমি ৷
আমেরিকার আবাদী
এত নয় আজ অব্দি
যতো শিক্ষিত
এদেশে ভরিত ,
অধুনা একুশেসদী
হয়নি এতো খাটি
তারা, তেত্রিশ কোটি !


তবু কেন আজ
সকাল সাঁঝ
তাদের দুয়ারে
আদর করে হাতে ধরে
সে ভিক্ষাপাত্র
মেলিয়া নেত্র-
ও মোর আকা
হে, আমেরিকা !
ভিক্ষে আমায় দাও
প্রভু দয়া দেখাও ,
এটা মোর কাজ
নাই ভয় লাজ
রোজ রোজ আমি চাই
ভিক্ষে যেন পাই ?
শোন গুণীন,
আমরা স্বাধীন
ক্ষণিক রব-
অধীন তব ,
এটা নয় অভাব
এটা চির স্বভাব
চিরকাল মাঙিব
তুমি দেবে তাই খাব ,
তোমায় হেথায়
রাখিব মাথায় ,
তোমা বিনে নাই উদ্ধার
অতি দরকার আমার !
( ২৩-০৯-২০১৫ -বুধবার)
গোপাল চন্দ্র সরকার
আমার অপর কবিতা গুগলে Jiggasa.in
Read my other poems at http://jiggasa.in/