জেতার পর অধুনা নেতা
কিনে নেয় সে জনতার মাথা ,
এমনি ধারায় কেবলি ভাবে
কিছু দেবে না, শুধু নেবে-
যেখানে যতো যা পাবে-
সবই যেন একা খাবে ।
ভোগী হয় স্বার্থী নেতা-
দর্শক, অসহায় জনতা !


কোন এক ছেলে, পড়া ফেলে
চিন্তায় মগ্ন, নেতা হবে বলে -
বাবাকে বলে, বাবা !
ছেড়ে দাও দিকি-
আমার বিষয়ে ভাবা ?
পড়া নিয়ে অর্থ ক্ষয়
এসব এবার মোটে নয় -
পড়ে শুনে হবেটা কী ?
পেটে জোটে না আহার -
কপালে মেলে না ঘি ।
দেশে, চাকরি-বাকরি রসাতল-
ছেয়ে আছে বেকারের দল !
আমার শুধু একটাই কাজ
ছেড়ে সব ভয় লাজ-
নেতা আমি যে হবই ,
ছাড়িব এবার পড়ার বই ৷


মনেতে ভরে অজানা ভয় !
তারে, বাবা হেসে কয়-
দেখরে গরীব বাছা ;
নেতাগিরিতে আচ্ছা-আচ্ছা
খায় যে ভীষণ গচ্চা !
রাজনীতিতে তুমি বাচ্চা !
লেখা পড়ায় বেজায় কাঁচা-
নেতা হওয়া যায় না সচ্চা ,
শোননি নেতার অপকেচ্ছা ?
ছাড় এ সব চিন্তা যা-তা
নিয়ে লাগো বই খাতা-
পড়া-লেখা এখন কাজ ,
পরে করিও সেবা সমাজ ৷
জবাবে পুত্র বলে পুনঃ ,
বাবা !তবে ঠিকমত শোন-
ছলে-বলে অথবা কৌশলে-
ছলনা, চালাকী, মাসুলে -
অথবা মিথ্যা চাল চেলে
জিতিব নিজ বাহু বলে ।


বাবা করে সাবধান !
আসলে নেই তব ধ্যান ।
লাগে অর্থ-কড়ি, সম্বল ,
এসবে তুমি ক্ষুদ্র, হীনবল ৷
এসব ভাল করে শেখ আগে-
রাজনীতিতে দলবল মাঁগে ,
জান না তুমি তোমার কমি ,
আগে পায়ের নীচে দেখ জমি-
এসব কর প্রথম হল্ ,
জান না বাস্তবতা, ধরাতল !
কোনটা কী আছে তোমার ,
অথচ সামর্থ্য আমার ?
খাঁ-খাঁ করা শূন্য ঘর-
আছে ভাবার-হতাশ হবার
দেখ খোকা-বনোনা বোকা ,
ছাড়, বাজে এসব শেখা ;
এ কাজ সবার নয় -
আর করিও না কাল ক্ষয় ৷
দেখ প্রিয় ছেলে,
অসৎ পথে গেলে
কখনো কখনো সব ফেলে-
যেতে হয়গো জেলে ,
বিষম শাস্তি সেথায় মেলে !
এসব কথা যাও ভুলে ,
তোমার পণ রাখ তুলে ৷


ছেলে নাছোড় বান্দা -
বলে, করিব সকল ধান্দা-
মহান নেতা মাহাজন
যে পথে করে গমন -
হয়েছেন ধনেশ্বর ,
তারা এখন অধুনা ঈশ্বর !
সেই পথ লক্ষ্য করে-
তাদের কৃতিধ্বজা ধরে ,
স্মরণে রেখে হব অগ্রসর-
মানিব তাদের আচার-বিচার ;
তোমার ধন করিব না নচ্ছার-
দেখ কেমনে করি আরপার !
এক দিন ঠিকই হব নেতা
সঠিক জানিও হে, পিতা !
ভোটে কী কেহ লড়ে না আর
সহায় সম্বল মোটে নেই যার ?
ভোটে অবশ্য পাব পার
রাজনীতিতে না মানি হার ৷


বাবা কহিলেন বেশ-
তোমারই কথাটা শেষ
বাঁচিয়ে তব জান-
রেখ আমার মান ,
করুণ স্বরে বাবা শুধায়-
বলো দেখি এসবের উপায় ?
করিবে কী করে-
পাই,পাই নাই, শূন্য ঘরে
শুধু ভাবি তাই, কী যে খাই,
ধনবল আর লোকবল
কিছূই যে আমার নাই ,
মনে বড়ো ভয় -তাই !
ছেলে বলিল, স্বর করি বড়ো
বাবা, এসব কথা ছাড়-
ভয়ে কেন শুধু জড়োসড়ো
বৃথা চিন্তা কেন নাড়ো ?
মিছে ভয় পাচ্ছ তুমি -
পয়সা যোগাব আমি ,
সকল উপায় জানি
তোমায় করিব না কোন হানি
বেচিব না ঘর, জমা-জমি ৷
করিব না কোন ঋণ-
এ কাজে যতই আসুক দুর্দিন-
করিব না বাঁচিতে ভিক্ষা-
এ- খোকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ৷


সব আঁট-ঘাঁট বেঁধে
ছেলে চলে সিধে-
বড়ো নেতা সহজেতে
হতে পারে সে জগতে ,
প্রথম কার্য করিল ত্যাজ্য
সততারে দিল সে বলি-
ধন জুটাতে শখ মেটাতে
মানবতাকে জ্বালায় হোলি ৷
যতো আপথ কত কুপথ
আশ্রয় করিয়া অসৎ
ছেলে কুপথ ধরিল যেচে
মাফিয়ার সাথে ড্রাগ্স্ বেচে ,
অর্থ হল তার যোগাড়-
চোরা পথে পয়সা জোটাতে
কত বার ভাঙিল হাড় !
শরীর গড়িতে-পেশী বাড়াতে
ভর্তি হল জীমে-
নেতাগিরিতে হাত পাকাতে
নেয়ে উঠিল ঘেমে ,
একদা জমে, নেতা নামে ৷
ধন কামাতে, কুকর্ম করিতে
কতো বার গেল জেলে
একদিন সে ভোটে দাঁড়ালো
অপকর্ম সব ফেলে ৷
খল সদা চলে ছলনা চালে
স্বভাব যায় না নেতা হলে-
এ নব নেতার হল তাই
দশের দেশের চিন্তা নাই ,
সদা সবকাজে স্বার্থই চাই ।


ছলা কলার-কৌশলে
ভোটার বাঁধায় জালে-
জেতার পর কত যে বাহার ,
জুড়ি মেলা ভার তার !
খাওয়া-দাওয়া, বসত বাটি
সবই রঙিন পরিপাটি-
সাজানো গাড়ি দামী ঘড়ি
বিদেশে বাসস্থান বাড়ি-
ধন কামায় কাঁড়ি-কাঁড়ি ;
আদর্শ তুলি, মুখে তার বুলি
সবার ঘুচাবো ভিক্ষার ঝুলি-
মাথায় ধরি প্রতিজ্ঞা আমার
প্রচুর কাজ পাবে বেকার
যোগাবো এবার সবার আহার
সুদিন ফিরিবে পুনঃ আবার ।
সকলে মনেপ্রাণে শুনে যাও
আর একটি বার যদি জেতাও ,
ধন্য হবে দেশ, ঘুচিবে ক্লেশ
সুখে রবে সবে-মোর সন্দেশ ।
হে বন্ধু , একটি বার জেতাও
ঘরের ছেলে ঘরেতে পাও !
উজাড় করে থলি, ভরাব
দু’হাতে সব ভরে দেব ,
শুধু কথাটা মেনে নাও
একটিবার মোরে আজমাও ৷


এসব পুরানো কথা
প্রতি বার তোতা রটা,
এসব নেতা, ধূর্ত ব্যাটা !
চামড়া তাদের অতিমোটা ।
নেতা জানে সব বৃথা
শুধুই ভোটের বক্তৃতা ,
পূর্ব ব্যথা ভুলেছে সবশ্রতা -
এমনি হয় দেশের নেতা !
আঁতে মক্ষম দিলে যে চোট
মেলে তাতে প্রচুর ভোট ।
সভায় ভিড় বাড়নো কাজে
আসে লোক ভাড়াটে সেজে
ভাষণে আকথা-কুকথা
বলে বেড়ায় অযথা নেতা-
প্রচার চালায় খুবই মজে
কর্ণকুহরে কঠোর বাজে ,
জনতা করে আমতা-আমতা
শোনে না তার আগা মাথা !
নেতার ভাষণ চলা কালে
জ্বালাতন হয় তিলে-তিলে
বোঝে না , মাথা-মুণ্ডু ছাই
জনতা চাপে করে হাইফাই
শ্রতার ভাগার উপায় নাই
উঠিতে দেবে না তাই ।
জনতার দৈন্য দশা
নেতা দেখে তামাশা ,
ছলসাজ নেতা হয়ে
চতুর্দিকে বেড়ায় গেয়ে
ছড়ায় বাক চাতুরীর জাল
নেতা হয় চক্রান্তে সফল ৷
আগের কথা জনতার ব্যথা
নেতা যায় সব ভুলে ,
তারা সরল জনতা
ভেঙে সব জড়োতা
ফুল-মালা দেয় নেতার গলে ৷
দুঃখে জনতা মরিছে জ্বালায়
সুগন্ধি মালায়-শোভে গলায়
তবু সভা ভরে কানায় কানায় ,
চাতক পাখী ! শ্রতারা ভাবনায় ।
আশাভরা জনতার কন্ঠে
ভরে সর্বত্র মাঠ-প্রান্তে
জয়োধ্বনি বারবার ওঠে ,
এ নেতা দরদী বটে !
করতাল ধ্বনি ধ্বনিত মাঠ
নেতার যেন বাদশাহী ঠাঁট ;
এসব কালে ক’জনার মেলে
রক্তবর্ণ চন্দন ফোঁটা
যেন শোভিছে জয়টিকা
ভরিয়া নেতার ভালে !
জনতার মহান নেতা
সাক্ষাৎ যেন দেবতা
জনতা ছলে হরবার
নেতা জয়ী হয় বারবার !


ঘোষণা পত্রে লম্বা ফর্দে
জানায় কাজের বহু ঘোষণা ,
ভোট হলে ও সারা ,
কালে কাজেতে নেই তাড়া
থেকে যায় ঘোষণা অজানা
সবই মিথ্যা ভাষণে আনা ৷
ঘোষণা পত্র ভরে ডাস্টবিনে
না পুনঃ ভ্রূক্ষেপ স্মরণে -
ভুলে আসে না নেতার মনে ,
পড়ে শড়ে, অন্ধকার কোণে !
প্রতিবার কেবলি কচড়া বাড়ে
পরতে পরতে এমনি করে ৷
স্তরে বাড়ে যুগ-যুগ ধরে !
সময় মেলে না দেখার তরে ।
তবু নেতা চালাবে দেশ
দেবে জনতারে উপদেশ ৷
জনতন্ত্রের রন্ধ্রে -রন্ধ্রে
ধরায় কারা যে ঘুণ-
সত্য নাকি সত্য এটা
মহান নেতার গুণ !!


(ইং-১১-০৯-২০১৫-শুক্রবার)
হিন্দী শব্দ, হল > মীমাংসা ,আজমাও > ব্যবহার কর, শড়ে > পচে, কচড়া> জঞ্জাল ।