আমার দশতলা ফ্ল্যাটের ব্যালকনি দিয়ে দেখা যায়
রোজ কয়েকটা উড়োজাহাজ খুব কাছ দিয়ে
ঠিক যেন কার্নিসটা স্পর্শ করে উড়ে যাচ্ছে,
কোনো টা লাল, কোনো টা নীলের ছাপা কারুকার্য।
তাদের বিকট শব্দ এই চার দেওয়ালের মধ্যে আমার
কান বিদীর্ণ করে গলা টিপে দম বন্ধ করে দেয়।
এই উচ্চ অট্টালিকায় থাকার অভ্যাস আমার কোনো দিনও ছিল না,
আমি যে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এক গরীব ঘরের মেয়ে,
মা সুন্দরী বলে ডাকতো, দশ বছর বয়সে
বাবার হাত ছটকে কেঞ্জাকুড়ার মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম।
জ্ঞান ফিরে শুনেছি কোনও এক মাসি আমায়
কোলকাতায় এক বাবুর কাছে মানুষ হতে দিয়ে গিয়েছিল।
আমার তখন বোধ বুদ্ধি হীন ছোট্ট মন কিছু বোঝেনি,
বাবুর আদরে একটু একটু করে খেয়ে পড়ে বড় হয়েছি,
স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয়েছে আমার প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ।
বুঝিনি সেদিন বাবুর বিষভরা মনের কথা, তাই তো নৃশংস ভাবে
আজ ছিঁড়ে খাবলে খাচ্ছে কিছু সমাজের নোংরা কুকুরের দল,
এদের রাত নেই দিন নেই শুধু নেশা জেগে থাকে মুখে চোখে
এদের রাতের পর রাত দিনের পর দিন মখমলের বিছানায়
সঙ্গ দিয়ে গেছি নির্বিকারে, কষ্টের গোংরানো আওয়াজ
তাজা রক্ত এদের হৃদয় বিদীর্ণ করে না কখনও, বরং
ক্ষুধা হরনের মনোরঞ্জনের নিদারুন বস্তু হয়ে ওঠে।
এরা মেয়েদের লাম্পট্য সমাজের ভোক্ষনের বস্তু বলে মনে করে,
এরা নিত্য দিন নিজেদের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে এঁটো পাতার মতো
ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তার জমা নোংরার স্তুপে,
আর গলায় ঝুলিয়ে দেয় বেশ্যা খানার নেমপ্লেট।
এদের বিরুদ্ধে কোনো নালিশ নেই,
এদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার নেই,
কোনও অজুহাত নেই, কোনও অভিযোগ নেই,
কোনো আঙ্গুল ওঠে না এদের দিকে, এরা যে
সমাজের কর্ণধার, গণ্যমান্য গুনি ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
আচ্ছা বলতে পার আমারও তো মা বাবা ভাই বোন ছিল
আমিও পড়াশুনা করে আর পাঁচ জনের মতোই
সুষ্ঠ ভাবে কাউকে ভালোবেসে ঘর সংসার করতে পারতাম।
আমিও যে সকলের মতোই সাধারণ মেয়ে,
আমি এই শহুরে অট্টালিকার আড়ম্বর চাই না, আমি মুক্তি চাই,
আমাকে কেউ মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দাও।
"এই চার দেওয়ালের বাইরে আমার কোনো স্বপ্ন নেই,
কোনো ইচ্ছে নেই, আমার নিজের বলে কিছু নেই,
আমার নিজের কোনো বিশ্ব নেই, আমার কোনো আমি নেই,
আমার কোনো কষ্ট নেই, আমার কোনো কষ্ট নেই"।
হাই ঈশ্বর এই নৃশংস কুকুর সম মানুষের হাত থেকে
সমাজ কে বাঁচাও এদের একটু বোঝাও।।