রেল লাইনের পথ ধরে
কাশিপুরের কুড়ে ঘরটার দিকে
হেটে চলেছে রুবিনা,
পরনে লালপেড়ে বাসন্তী রঙের শাড়ী
জড়িয়েছে এক প্যাচে।


মসলিন চুলগুলো ফিনফিনে বাতাসে
উড়তে থাকে এলোমেলো,
রুবিনার খাড়া নাক
টানা টানা হরিণ চোখ
তাম্বুলের রসে রাঙানো পাতলা ঠোট,
সব মিলিয়ে রুবিনা
দারুন ভালোলাগার মত একটি কবিতা।


আকাশে ভরা-পুর্নিমার চাঁদ
মাঝে মাঝে নষ্ট মেঘ
কোথা থেকে ছুটে এসে
চাঁদটাকে করেছে কলঙ্কিত।


চাঁদের কলঙ্ক স্পর্শ করেছে
ঘাস মাটি লাউয়ের ডগা আর
ঝাঁকড়া মাথার বৃক্ষরাজি,
সেই কলঙ্ক স্পর্শ করেছে
রুবিনাদের কুড়ে ঘড়টাকেও।


ঢালু পথ ধরে হেটে চলেছে রুবিনা
মনে বড় কষ্ট বড় যন্ত্রনা
রুবিনা এগিয়ে চলেছে
কাশিপুরের ঢালুতে কুড়েঘড়টার দিকে
পরণে লালপেড়ে বাসন্তী রঙের শাড়ী
জড়িয়েছে এক প্যাচে।


রুবিনার লম্বা একহারা গড়ন
শরীর জুড়ে ভরা নদীর চমক
কান পাতলেই শ্রবন ইন্দ্রিয়ে শোনা যায়
খ্যাপা স্রোতের কলকল ধ্বনি,
পিয়াসী পুরুষের বুকের ভিতর জাগে
ঢেঁকির ধাপুর ধুপুর শব্দ,
রুবিনার দেহের খাঁজে খাঁজে ভাঁজে ভাঁজে
চোখ ফেলে লালা ঝাড়ে ভ্রমরকুলেরা
লোভাতুর জিহ্বায় ঠোট চাটে কামুকের দল।


চাঁদটার সাথে রুবিনার দারুন মিল
চাঁদটার যেমন নেই কোনো গতি
রূপবতী রুবিনারর নেই কোন পতি,
কিন্তু হাজার পুরুষ আসে নাগর সেজে রাতে,
চলে যায় নাগরেরা ভোরে,
রুবিনার গতর বেঁচা টাকায় চলে সংসার
বড় কষ্ট বড় যন্ত্রনা
বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ নিশ্বাস।


না রুবিনার বিয়ে হবে না, রুবিনা নষ্টা
জয়নাল মেম্বরের ছেলে আলতাফ মোল্লা
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে
রুবিনার সব কিছু লুটে নিয়েছে,
বিয়ে করে নাই নষ্টা করেছে।
গ্রামের সালিশ বিচারে রুবিনা ভ্রষ্টা
পেয়েছিল কিছু টাকা ও একটি সন্তান,
জারজ সে সন্তান এখন এতিমখানায়।


ওদিকে ইংলিশ বাদ্য বাজিয়ে মহা ধুমধামে
বিয়ে করেছে আলতাফ মোল্লা,
কিন্তু রুবিনার আর বিয়ে হয় না
সমাজ থেকে রুবিনা ঘৃনীতা।


আকাশে পুর্নিমাির চাঁদ
পথ ধরে আনমনে হেটে চলেছে রুবিনা
তার টাকা দরকার, মা অসুস্থ।


হঠাৎ কানে ভেসে আসে পরিচিত কন্ঠস্বর -"রুবিনা"-
রুবিনা তাকায়
যাবি রুবিনা? যেন আকুল আকুতি,
রুবিনা বুঝতে পারে
বলে কত টাকা দেবে?
মালদার পার্টি, খুশী করেই দেবে, যাবি?


এবার চোখ দুটি তার ছলছল করে ওঠে
দুই চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে গালে।


"চলো যাই",
এবং চলো যাই বলেই পিছন ফিরে
রুবিনা উল্টোপথে ধায় লোকটির সাথে
আরো একবার নষ্টা হতে।
তার টাকা দরকার, মা অসুস্থ্য,
তার গতর বেঁচা টাকায় মাকে
ডাক্তার দেখাতে হবে,
কুঁড়ে ঘরটার দিকে যাওয়া হয়না রুবিনার।


অবলা ফিরে চলে আরেকবার নষ্টা হতে ,
মা সবই জানেন-
তাই অশ্রুজলে আহার গেলেন,
তার বুক ফেটে বেড়িয়ে আসে দীর্ঘনিশ্বাস
ঝাঁপসা চোখে দেখেন সব অন্ধকার
অসাঢ় হয়ে মুক্তির পথ খোজেন।


রুবিনা চলেছে লোকটির সাথে
গায়ে তার লাল পেড়ে বাসন্তী রঙের শাড়ী,
জড়িয়েছে এক প্যাচে।
.