(গতবছর কলকাতায় রাতের অন্ধকারে কারা যেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙ্গে দিয়েছিল । সেই মহামানবের ২০১ তম জন্মদিন স্মরণে এক কাল্পনিক আঞ্চলিক ভাষায় এই কবিতা রচিত হয়েছে ।)


উরা তর মূর্তিটাকে রেইতের আইন্ধারে ভেইঙ্গে দিল ! ক্যানে রে ?
তু কি দুষ কইরেছিলি--অ বাপধন ? কি দুষ কইরেছিলি ?
মূর্তি ভাঙল্য কে ডা ?
উদের কাচে সি কথার সিধা জবাব লাই গো । সিধা জবাব লাই ।
ই দিখায় উকে । সি দিখায় ইকে ।


হ, ঠিকই কইরেচিস্ । বে--শ কইরেচিস্ ভেইঙ্গে ।
লুকটাকে ভাল লাগেনি--তাই-ই ভেইঙ্গেচিস্ ।
ভেইঙ্গে পাপ বিদেয় কইরেচিস্ ।
তা--সিটা তরা ছাতি ফুলায়ে বল্ না ক্যানে ।
যদি নেঝ্য কম্ম কইরেচিস্—তবে তদের কিসের ডর ?
জানি রে বাপ, সি কথা বলার মুরদ লাই গো ।
তদের সি কথা বলার মুরদ লাই ।


অ্যাকবার সি লুকটা রেলে চইড়ে কুথা য্যানো যাচ্ছেল;
বাঘের পারা গোরা সাহেবের কুট-টা ছুঁড়্যে ফেল্যে দিল জানলা দিয়ে ।
চোখে চোখ রেখ্যে বইলল্য--তর কুট, মোর বুট আইনত্যে গেছ্যে ।
অ্যাই হলগে’ সাহস । অ্যাই হলগে’ মুরদ । ছাতির পাটা । ত্যাজ । বুঝলি—ত্যাজ ।
তদের সি মুরদ লাই । সি সাহসও লাই ।
তরা আইন্ধার ঘরের কাপুরুষ বটেক ! তদের ই দুষে উকে । উ দুষে তাকে ।


মেইয়ামাইনষের জনম মানেই ত’ পুড়াকপাল--দুঃখ সব্বোকালে;
স্যাই রামের কালেও সীতেমা-টোর কত্ত দুঃখ ছেল্য !
আর সি ‘রামরাজ্য’ যদি এত্ত ভাল—তবে রাজা সোয়ামী,
দু’টা কচি কচি ব্যাটাকে ছেইড়ে তাকে পাতালে যেইত্যে হল্য ক্যানে ?
মোদের নারী জেবন তো দুঃখ পাবার জইন্যি ! বেধবার ত ফেরে অ্যাককাঠি বাড়া ।
কত্ত কষ্ট ছেল্য--সে লুকটার কোমল পেরাণডায়, সি জইন্য বেধবারও বিয়া দিল বটেক !
কেউ পারল্য তাকে থামাতে ? মেরে ফেলাইবার ভয়েও ভয় পাবার লুক সি লয় ।
অ্যাই হলগে’ ত্যাজ । ছাতির পাটা । মরদমাইনষের মুরদ ।


তাপ্পর সি কথাডা--?
গরীবের ব্যাটা, তবু চাকরিডায় থুতু ফেইল্যে ক্যামন গট্ গট্ গট্ গট্ কইরে চইল্যে এল্য !
তরা পারতিস্ ? পারতিস্ তরা ?
অ্যাই হল্যগে’ ত্যাজ, সাহস । ছাতির পাটা ।


হ মাইনছি, সি নাকি ঠাকুর ঠুকরা মাইনত না--
কিন্তুক, কি অধম্মডা করছেল্য সি ?
মেইয়াগুলার জইন্যি ইস্কুল পেথম বানায়ে দিল কেডা ?
সি লুকটা--না, তদের ঠাকুদ্দা ? না তার ঠাকুদ্দা ?
আদিবাসী গরীব দুখীগুলাকে ট্যাঁকের ট্যাকা খসায়ে চিকিচ্ছা করত কেডা ?
সি লুকটা--না, তদের ঠাকুদ্দা ? না তার ঠাকুদ্দা ?
স্যাই যে বিদ্যাশে ট্যাকা পাইঠ্যে কাকে য্যানো উদ্ধার করছেল্য অ্যাকবার ?
স্যাই যে গ’ কেরেস্তান কবিকে--
আর ইখন ? দশটা ট্যাকা অমনি অমনি কেউ দিবেক ?
ঐ যে তদের ন্যাতা--যার কতায় মূর্তি ভেইঙ্গে দিলি তরা,
সি-ও দশটা ট্যাকা অ্যাক হাতে দিয়ে অন্য হাতে ভোটটা মাইগবে । সব্বা--ই ধান্দাবাজ ।
সি মনিষ্যি ছেল্য দ্যাবতা । দ্যাবতা গ’ দ্যাবতা । ঈশসর ।
সি ছেল্য নামেও ঈশসর, কামেও ঈশসর ।
পেন্নাম হই গ’তাকে । পেন্নাম হই ।
পাইরল্যে ক্ষ্যামা চেইয়্যে গড় কইরে লে তরাও ।


তদের ধম্ম তদের কাচে থাক--
সি মাইনষের ধম্ম অন্য, তদের জইন্যে লয় । সি বুঝা তদের কম্ম লয় ।
তদের ফুটা ত্যাজ । তদের ফুটা ত্যাজ --ঐ আইন্ধারে মূর্তি ভাঙা !
আর কণ্ঠার শিরা ফুলায়ে দ্যাশভক্তির মিছা মাইক ফুঁকা ।


কার লিখা বই থিকে তদের অ-আ-ক-খ বণ্ণপরিচয় হইছেল্য ?
…না, প্যাটে অক্ষরডাও নাই তদের ?
অবিশ্যি দরকারডাও বা কি ?--ন্যাতা-র ল্যাজ ধইরল্যেই ত সব পাবি ।
ছ্যা ছ্যা । ছ্যাঃ ।