শাহেদ ,
শেষ পর্যন্ত তুইও
আমাকে একই প্রশ্ন করলি,
সবাই না হয় করে,
তারাতো আর আমার সব কিছু জানে না,
বুঝে না, কেউতো আর আমার বন্ধু না,
তুইও জানতে চাইলি,
এখনো বিয়ে করিনি কেনো?


বন্ধু,
বিয়ে কেনো করিনি
আমি নিজেও জানিনা ,
আবার হয়তো জানি,
এতো বড় সংসার,
তার উপড় বাবা নেই,
অভাবের বাড়ীর বড় ছেলের জ্বালা
তুই বুঝবি না,
আমার আয়ে চলতো সাতজনের সংসার,
কোনো মেয়ে এতো বিপদ পড়েনি যে,
অভাবের সাথে সংসার শুরু করবে,
অভাবী মানুষ ও কি ভাবে যেনো
প্রেমে ডুবে যায়,
“মনোলীনা” হা মেয়েটার নাম “মনোলীনা”ই ছিলো,
প্রেমটার যখন দু’বছর গেলো,
বিয়ের কথা বলতেই মেয়েটা বললো,
আলাদা বাড়ী নিয়ে যদি সংসার শুরু করি
তাহলেই ও বিয়ে করবে,
প্রেম’টা টুক করে ডুবে মরলো সেই দিনই,
আমার মনের অক্ষমতার হাওরের বিষন্নতার জলে।


সেদিন সারা  রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে চিৎকার করে বলেছিলাম,
“বাবা”
তোমার বুকে আমাকে টেনে নাও,
না হলে এই অক্ষমতার জলে একদিন
তোমার এই সন্তান ডুবে মরবোই।


বন্ধু ,
বিশ্বাস কর
কেউ বিয়ের প্রস্তাব আনলেই
মা’ যেনো কেমন আচরন করতো,
যেভাবেই হোক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিতো,
মনে হতো ভাই বোনেরা ও খুশি হতো তাতে,
আমি বুঝতাম, সবই বুঝতাম বন্ধু,
মা’ ভয় পেতো,
বিয়ে করলেই হয়তো আমি বদলে যাবো,
আরেকটা নতুন মানুষ এই সংসারের রোজগারে ভাগ বসাবে,
আমি যদি আমার মা’র বাকী সন্তানদের আর না টানি, তারা মানুষ হবে না ।


সবাই মানুষ হয়েছে
ভাই বোনেরা তাদের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত,
আমি শুধু প্রৌঢ় হয়েছি
আর মা’আমাদের ছেড়ে
বাবার কাছে চলে গেছে অনেক আগেই,
মা’র অসুস্হ অবস্হায়  শেষ কথা ছিলো,
“বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিস”
আমার উত্তর শোনার
সময় পায়নি আমার মা,
আমি শুধু জানি
মা’রা কখনো ভুল করে না।


শাহেদ,
এখন আমাকে আর কাউকেই
টানতে হয় না,
আমি শুধু নিজেকে টানি,
একলা ঘরে ফিরি দিন শেষে,
তিন বেলা বাইরে খেয়ে খেয়ে
শরীরে অসুখ বাধিয়েছি অনেক রকম,
রাতে ঘুমের মাঝে নির্ঘুম কাটাই প্রায়ই,
তখন বুকে, কপালে
একটা হাতের স্পর্শ এর জন্য
কেমন যেনো অস্হিরতা জাগে
মাথার ভিতর ,
কথা বলার জন্য
একজন মানুষ খুঁজি মনে মনে,
একটা নারী শরীর সম্পূর্ন স্পর্শ  
করা হলো না আমার এই জীবনে,
দেখাও হলো না।


এখন আর শরীরে
সেই ভাবে কাম জাগে না
যুবক বয়সের মতো,
যৌবনে কতো রাত এই ‘শরীর’
নিজের মাঝেই গলা টিপে হত্যা করেছি,
বার বার মরতে মরতে
শরীর ও ক্লান্ত হয়ে গেছে।


ইদানিং প্রায়ই সেই মেয়েটা
‘মনোলীনা’র কথা মনে পরে,
চেহারাটা কোনো ভাবেই
মনে করতে পারি না।


আজকাল মনে হয় ভালোবাসা হলো একরকম দেনা পাওনার হিসাব,
মা’র হিসাব মা করছে একরকম ভাবে,
মনোলীনা’ করেছে তার মতো করে,
আমি শুধু হিসাবের খাতা হয়ে ছিলাম।


বন্ধু,
আমারও খুব লোভ জাগে ইদানিং
ভালোবাসার হিসাব নিকাশ করতে,
শুধু সময় আর বয়স আয়নার দেয়াল হয়ে
হাহাকার বাড়িয়ে দেয় আমার ভিতর,
ভয়ে পারি না,
লজ্জায় পারি না,
মাঝে মাঝে যখন নিজেকে আর টানতে পারি না
তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে
শুধু বাবা মা’কে খুঁজি ।


ভাই বোনেরা মাঝে মাঝে
ফোন করে খোঁজ নেয়
ঠিক মতো বেঁচে আছি কিনা,
এই বয়সে ওরা মাঝে মাঝে বিয়ের কথা বলে,
আমি শুধু শুনেই যাই,
কখনো কোনো উত্তর দেই না।


শাহেদ,
আমি বুঝতেই পারিনি,
অক্ষমতার হাওরে আমি কবেই
ডুবে মরে গেছি  বিষন্নতার ভারে।
————————————-
রশিদ হারুন
০৬/০৭/২০১৮