পঞ্চাশ পার হলেই আয়নায় নিজেকেই আর পরিচিত মনে হয়না,
ঘরের দেয়ালে টানানো পুরনো ছবি দেখে মিলিয়ে নিতে হয় নিজেকে।


এখন খুব ভোর বেলায় পাঁচতলার জানালা দিয়ে
মন্ট্রিয়াল শহরের দালানকোঠার সারির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
একসময় ধীরে ধীরে বুকের ভিতর জেগে উঠে আমার ঢাকা শহর,
তারপর উত্তর যাত্রাবাড়ির একশ সাতের নয় বাড়িটি,
আর সব ছাপিয়ে বুকে কেঁপে ওঠে দক্ষিণ কমলাপুরের আশি নাম্বারের ঘরটি।


পঞ্চাশ পার হলে নিজের হাতের লেখাও বদলে যায়,
তাইতো হাতের লেখা মিলাতে
তোমাকে লেখা পোস্ট না করা পুরনো চিঠি নিয়ে বসতে হয়।


মনোলীনা,
ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরের আশি নাম্বারের বাড়িতেই এখনো কি আছ ?
ডাকবাক্সে না ফেলা খামের উপর তোমার নাম ঠিকানা লেখা কিছু চিঠি
এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছি
আমার পুরোনো সেই টিনের বাক্সে।


ফুল আঁকা আমার এই টিনের বাক্সটা দেখে তুমি একদিন মনস্তাপে বলেছিলে-
পঁচিশ বয়সের একজন পুরুষের ফুল আঁকা টিনের বাক্স থাকতে পারে,
এটা তোমার মাথায় আসে না,
রুচিহীনতার একটা সীমা থাকা উচিত!


পঞ্চাশে এসে তাই,
সেই রুচিহীন টিনের বাক্সে যত্নে রাখা
তোমার জন্য লেখা চিঠিগুলোর সাথে
আজকাল হাতের লেখা মিলিয়ে নিই।


আজ নতুন করে লিখছি তোমায় মন্ট্রিয়াল শহর থেকে।
চিনবে তো হাতের লেখা?
তাই পুরোনো একটা চিঠিও দিয়ে দিলাম সাথে।


মনোলীনা,
ঢাকা শহর এখনো কি বৃষ্টিতে ভেসে যায়?
তোমাদের ইটের ঘরের টিনের চালে
আছড়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটার সেই শব্দের নেশা
কি এখনো জাগে তোমার শরীর মনে?
নাকি সেখানে এখন ইট দেয়ালের ছাদওয়ালা শব্দহীন বাড়ি?


মন্ট্রিয়ালের তুষারে এখন আমার আর মন ভড়ে না-
আজকাল যখন তখন বুকের বিশাল হাহাকার
গোপনে ডাক দেয় ফিরে যেতে ঢাকা শহরের সেই বৃষ্টির কাছে।


উত্তর যাত্রাবাড়ির একশ সাত বাই নয় এর সেই মানুষটি আমিই,
এটা প্রমাণ স্বরূপ
আমার পঁচিশের পুরনো একটা ছবি
আইডি কার্ডের মতো করে বুক পকেটে ঝুলিয়ে,
আর হাতে ফুল আঁকা রুচিহীন সেই টিনের বাক্সটা রেখে
আচমকা একদিন
তোমাকে দেখার জন্য যদি
তোমার দরজায় গিয়ে দাঁড়াই,
আমাকে চিনতে পারবে তো?


মনোলীনা,
যদি একটুও চিনতে না পার,
বিশ্বাস করো
-আমি মরে যাবো,
এই পঞ্চাশেই মরে যাবো
প্রিয় বৃষ্টির জলে ভেজা ঢাকা শহরে।


শুধু মরে যাবার এই অদৃশ্য ভয়ে
আমি আজও ফিরিনা
তোমার ঢাকা শহরে।
———————-
র শি দ  হা রু ন
২০/১০/২০২২