তুমি শুয়ে ছিলে ধবধবে সাদা বিছানায়,
আকাশের মেঘের আনাগোনা ছিলো তোমার বিছানা জুড়ে,
তোমার বুকের পাঁজরের উঠানামার শব্দ কাঁচের দরজার ওপাশ থেকেও শোনা যাচ্ছিলো,
মনে হয়েছিলো,
তুমি উড়ে যাচ্ছ সাদা মেঘে ভাসতে ভাসতে,
সাদা আকাশযানে চড়ে অন্য জগতে,
দু’জন নার্স দেবদূতের মতো সাদা পোষাক পরে দাড়িয়ে ছিলো তোমার শিয়রে সারাক্ষন,
তোমার মুখে,বুকে আর হাতে লাগনো যন্ত্রগুলো আকাশযানের ইন্জিনের মতো লাগছিলো,
তুমি পনের দিন যাবত শুধু উড়ছিলে
আমাদের কাছ থেকে চলে যাবার জন্য।


মা, আমি আর ভাইবোনেরা
তোমার চলে যাওয়া থামানোর জন্য মনে মনে সারাক্ষন প্রার্থনা করছিলাম,
ডাক্তার’দেরও ভুল করে ঈঁশ্বর ভেবে বলেছিলাম কতোবার,
“ আমার বাবা’কে বাঁচান”।


চোখ বন্ধ করার আগে তুমি আমাকে শেষ বার বলেছিলে,
“আমার একটু সুপারি খেতে দে”
আমি দিতে পারিনি সামান্য সুপারি, ডাক্তার’দের নিষেধের কারনে,
তারপর থেকে প্রতিটি মূহুর্ত আমি সুপারি হয়ে তোমার মুখে ডুকতে চেয়েছিলাম,
চেয়েছিলাম মুখ দিয়ে বুক বরাবর প্রবেশ করে বুকটা চালু করে দিতে।


ডাক্তার বলেছিলো,
“ডেকে দেখুন, কথা শুনতেও পারে”
মা তোমার গালে গাল লাগিয়ে বলেছিলো,
“আজান দিচ্ছে,
নামাজ পড়তে যাবেনা মসজিদে?”
তবুও তুমি জবাব না দিয়েই চলে যাচ্ছিলে,


তুমি চলে যাচ্ছিলে চাঁদপুরের সেই মিষ্টি বড়ই গাছটার বড়ই ছেড়ে,
চলে যাচ্ছিলে উত্তর যাত্রাবাড়ী’র টানাটানি সুখের সংসার ছেড়ে,
ডেমড়ার অবসর জীবনের আরাম আয়েস থেকে,
তুমি যতই চলে যাচ্ছিলে আকাশযানে করে.
আমরা ততই শুধু তোমার বুকের বাতাস হয়ে বুকটা চালু করতে চেয়েছিলাম।


আমি হাসপাতালে তোমার বিছানার পাশে পাহারাদারের মত পনের দিন বসেছিলাম,
তোমার আকাশযান’টাকে যে কোন ভাবে  আটকাতে হবে ভেবে,
মা বলেছিলো,
“তোর শরীর খারাপ হয়ে যাবে,
ঘুমিয়ে নে একটু,
আমি সজাগ আছি”
তবুও মা’কে সজাগ রেখে আমি ঘুমোতে যাইনি,
যদি চোখ খুলে আবার সুপারি খেতে চাও।


বাবা,
ডাক্তার’দের অগোচরে কতোবার যে তোমার বুকে কান পেতেছিলাম,
যদি বুকের কোনো শব্দ শোনা যায়,
যন্ত্রের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যেতো না সেই সময়,
তবুও মা আর ভাই বোনদের মিথ্যে করে বলতাম,
“আজ একটু বুকের আওয়াজ পেয়েছি”
সবার চোখ সে সময় লোভী বিড়ালের মতো চকচক করে উঠতো,
এবারের মতো বোধহয় থেকে যাবে মায়ার সংসারে।


তারপর কখন যে ভোর বেলা এক সর্বনাশা ঘুম আমায় পেয়ে বসেছিলো অল্প সময়ের জন্য,
তুমি চলেই গেলে সেই ধবধবে সাদা সেই আকাশযানে চড়ে।


বাবা
চোখ বন্ধ করার আগে তুমি আমাকে শেষ বার বলেছিলে,
“আমার একটু সুপারি খেতে দে”
বাবা,
পনের বছর হলো আমি আর কোনদিন সুপারি ছুয়েও দেখিনি।
__________________
রশিদ হারুন
২৮/০৩/২০১৯