মনোলীনা,
কতো যে চিঠি লিখলাম তোমাকে,
একটা করে চিঠি লিখি
-তারপর রঙবেরঙের খামে ভরে ডাকবাক্সে নিজ হাতে ফেলে আসি সবসময়।
কোনদিনই তোমার একটাও ফিরতি চিঠি থাকেনা আমার জন্য।
শুধু ফিরে আসে আমার নিজেরই লেখা সেই সব আক্ষেপের চিঠি!
খামের ওপর লাল কালিতে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা থাকে
-“চিঠির প্রাপক পাওয়া যায়নি”।


একা একা এই শহরে
একটা ফিরতি চিঠির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে,
তুমিবিহীন এই জীবনে
‌অচেনা এক কঠিন বিষাদের ব্যাকারনে অদ্ভুত ক্লান্তিতে ভরে যায় আমার শরীর মন।
তাইতো আমি গভীর বিষাদের
জোয়ারের জল হয়ে উপচে পড়ি যেখানে সেখানে।


মনোলীনা,
শহরের সব মানুষ এখন আমাকে নিয়ে গুজব ছড়ায়,
-“ এমনি চলতে থাকলে দেখবেন,
লোকটি একদিন পুরোপুরি জল হয়ে যাবে;
আর নিজের ঘরেই গোপনে সেইদিন
সে সেই জলেই ডুবে মরবে ।”


মনোলীনা,
বুকের খুব বিরক্তিকর গোঙানিতে আর থাকতে না পেরে এক গভীর রাতে,
নিজের জলেই ভিজতে ভিজতে;  
চিঠির বদলে আমারই বুকে পিঠে তোমার বাড়ির ঠিকানা লিখে
গোপনে ডাকবাক্সে ঢুকে পড়ি চিঠি সেজে।
সকালে ডাকপিয়ন আমাকেই
চিঠি ভেবে ঢুকিয়ে নেয় তার চিঠির ব্যাগে।


তারপর শহরের তোমার বাড়ির সেই ঠিকানায় তোমাকে না পেয়ে অদৃশ্য কাউকে ‌অভিশাপ দিতে দিতে,
চিঠি ভেবে আবার আমাকেই ফেরত দিয়ে যায় প্রেরকের ঠিকানায়।
একই কথা কপালে লিখে দেয় লাল কালিতে মোটা মোটা ‌অক্ষরে,
- ‘চিঠির প্রাপক পাওয়া যায়নি।'


মনোলীনা,
কখন যে ঠিকানা বদলালে গোপনে
আমাকে একবারও জানলে না।
যদি তোমার সঠিক ঠিকানায় আমার
চিঠি আর না পৌছায়
তাহলে দেখবে-
শহরের সমস্ত ডাকপিয়নের ‌অভিশাপে
এই শহরের মানুষের গুজবকে সত্যি করে;
একদিন ঠিকই নির্জন কোনো এক রাতেরবেলায়
আমারই ঘরের জলে হয়তো ভাসতে থাকবে
-আমারই লাশ ;
আর ভুল ঠিকানায় ভরা,
প্রাপক খুঁজে না পাওয়া
তোমার কাছে লেখা আমার অসংখ্য বেওয়ারিশ চিঠি।
—————————————
র শি দ  হা রু ন
১৯/০৯/২০২০