গলির মুখে ঢুকেই ‌অস্থিরতায় পেয়ে বসল,
দরকার ছাড়াই ধুম করে একটা সিগারেট ধরিয়ে বসলাম।
সিগারেট টানতে টানতে দীর্ঘ বিশ বছর  ভাড়া থাকা
একশ সাত বাই বারো নং বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম,
দোতলার পরিবর্তে বাড়তে বাড়তে এখন পাঁচতলা হয়ে গেছে।


মানুষের মতো পুরোনো বাড়িগুলোও দেখছি মুখোশ পরে আছে,
চেনাই যাচ্ছে না কোনো বাড়ির আসল রূপ।
আগে তালা লাগানো লোহার গেট ছিল না এই বাড়িতে।


বাড়িওয়ালার বদলে উনার ছেলে ‘সিজার’ এর নাম সাদা কাগজে লেখা।
আমি নাম দেখে বেল টিপলাম অনেকক্ষণ,
কেউ দরজা খুলে দিল না,
নষ্ট হয়ে আছে বোধহয়।


যতদূর মনে পড়ে পাশের বাড়িটা মিজান সাহেবের
টিনের ঘর ছিল,
সেখানে এখন ছয়তলা ইটের বাড়ি।
যাত্রাবাড়ীর ওয়াসা গলির এই পুরোনো মহল্লায়
জোৎন্সা রাতের আলো মাটিতে পড়ার আগেই
ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো গিলে ফেলছে
সেই চাঁদের আলো!
আমি হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম
চাঁদের আলো এখন এই মহল্লায় পরবাসি।


ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোতে
মনমরা ভাব ধরেছে মহল্লার সব বাড়ির দেওয়ালগুলোতে।
গত কয়েকদিন ধরে এই বাড়িটি
রাত বিরাতের স্বপ্নে
বুকের মাঝে চুরমার হয়ে হঠাৎ হঠাৎ ভেঙে পড়ছে।


বাড়িগুলোর আর মহল্লার রাস্তার চেহারা বদলে যাওয়ায়
আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না আমাকে,
পাচ্ছি না আমার শৈশব আর কৈশোরের পায়ের দাগ।
স্বপ্নে ভাঙা বাড়িটার সাথে যেসব মানুষ প্রতি রাতেই আমার বুকে আঁচড় কাটে
তাদের কাউকে হেঁটেও যেতে দেখছিনা মহল্লার রাস্তা দিয়ে।


এই মহল্লার যেসব মানুষের মুখ
এতদিন ধরে আমার বুকে পালছি
আর মাঝে মাঝে বুকে আগলে ধরি ,
তারা বোধ হয় হাহাকারের বোমা হয়েই এই বুকে থাকবে বাকি জীবন।


প্রিয় মহল্লাবাসী,
চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকাই শুধু জেল নয়,
বয়স কালেও যদি বুকের মধ্যে
আপনার শৈশব আর কৈশোর আটকে থাকে সেটাও বড় জেলখানা।


আমি হঠাৎ করেই জোড়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
“ সিজার ,
ও সিজার
বাড়ি আছ?
লোহার দরজাটা খুলে দাও।”
———————————
র শি দ  হা রু ন
০৮/০৮/২০২২