সময় দেখার জন্য এই শহরের  সবচেয়ে উঁচু দালানটায় একটা ঘড়ি ছিলো একসময়,
বিকল হয়ে পড়ে আছে ‌অনেকদিন থেকে সেই ঘড়ি।
শহরের মানুষের এটা টের পেতে পেতেই ‌বহুদিন চলে গেছে,
তাইতো ‌অসময় যাচ্ছে এই শহরের অনেকদিন ধরে।


গ্রাম থেকে এক বেকার যুবক এই শহরে এসেছে,
তার খারাপ সময়কে ঠিক করতে।
এই শহরে বাস থেকে নামার পরই তার পকেটমার হয়ে সে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলো গেল।
এখন শহরের সেই উঁচু দালানের বিকল ঘড়িটার দিকে মন খারাপ করে সে তাকিয়ে আছে।
যুবকটি কেমন বোকা দেখুন,
রাগ করে সে তার বেকার হাতদুটোই ছুঁড়ে মারল
সেই বিকল সময় যন্ত্রটার দিকে তীব্র ঘৃনার অভিশাপ মেখে,
তবুও যদি ঘড়িটা ঠিক হয়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের একজন শিক্ষক উনারই ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে
রাতের আঁধারে সেই উঁচু দালানের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন,
একসময় তিনি সেই বিকল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে
দর্শনের জনক থেলিসের মতো চিৎকার করে বললেন,
"সবকিছুই ঈশ্বরে পরিপূর্ণ"
-‌অথচ এ‌ই শহরের ঈশ্বর এখন মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ান,
তাইতো আমি এখন আর তাকে চিনতে পারছি না।


একজন নারী তার সন্তানদের জন্য রাতের খাবার
এখনও জোগাড় করতে পারেনি,
মুখে রং মেখে সে শহরের উঁচু সেই দালানটার নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
যদি কোনো গাড়ি তাকে নিয়ে যায়।
অস্হির হয়ে বারবার সে নষ্ট ঘড়িটা দেখছে,
বিকল ঘড়িতে তার সময় বাড়ছে না একটুও।


বিষাদ ও ভালোবাসার একজন কবি
কিছু জোনাকি পোঁকার সন্ধানে উঁচু দালানটার নিচে বসে আছেন
সেই সূর্য ডোবার পর থেকেই,
‌অথচ একটি জোনাকিরও দেখা পাননি তিনি মধ্য রাত্রি পর্যন্ত।
কবির ধারণা একটি জোনাকি পোঁকা
এই নষ্ট ঘড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেই ঘড়িটা সঠিক সময় দিবে।


শুধু একজন অবুঝ বালক সারাদিন সেই উঁচু দালানের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে, অপেক্ষা করে,
-এই শহরের ঈশ্বরের জন্য।


বালকটি যে কোন কাউকে দেখলেই বলে
-আপনি কি এই শহরের ঈশ্বর?
মুখোশটা খুলে ফেলুন,
তাহলে সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পাবেন।
তখন আমি আপনাকে এই নষ্ট ঘড়ির বদলে একট ভালো ঘড়ি দিবো;
ঠিক হয়ে যাবে এই শহরের সময়।


এ কথাগুলো বলেই সে তার বুকে হাত দিয়ে
ভালোবাসায় ভরা লাল হৃৎপিণ্ডটা বের করে সবাইকে দেখায় বারবার।


এই শহরের সব মানুষ এখন অপেক্ষায় আর আশায় আছে
-একদিন এই শহরের ঈশ্বর
এই নষ্ট সময়ের ঘড়িটা বদলে,
বালকটির ভালোবাসায় ভরা লাল  হৃৎপিন্ডটা নিয়ে শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানে ঝুলিয়ে দিবেন।
—————————————
র শি দ  হা রু ন
১২/০৮/২০২০