ফজরের আজানের পর জানালার পর্দা সরালে ধীরে ধীরে এক মায়বী আলো ঘর থেকে বের হয়ে এই শহরে হারিয়ে যায়।
মানুষের কোলাহলের শব্দ ক্রমাগত সূর্যের সাথে যখন বাড়তে থাকে
রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের চিৎকার ততই ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে।
একদিকে ঘড়ির কাঁটা দৌঁড়াতে থাকে
অন্যদিকে মানুষের ছুটন্ত স্বপ্ন,
রিকশা, মটর সাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি
আর বাসের দখলে চলে যায় ঢাকা শহর।


আমার দখলে থাকে শুধু আমার ছায়া,
তোমার ছায়ার ও দখল আমি এই একজীবনে নিতে পারলাম না,
ঢাকা শহরতো অনেক দূরের কথা।


মনোলীনা,
বহুদিন আগে তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম,
“আমি না পারি
কমসেকম তুমি অন্ততঃ ভালো থেকো এ‌ই ঢাকা শহরে।”
এই শহরে তোমার নতুন বাড়ির ঠিকানা কখনই জানালে না!
সেই কাঙ্গাল চিঠি এখনো চামড়ার মানিব্যাগের আমার পকেটে প্রতিদিন পিষ্ট হয়।


আজকাল পত্রিকা আর টিভির ব্রেকিং নিউজের গরম খবর
“ঢাকা শহরের সব ডাকবাক্স অভিমানে আত্মহত্যা করেছে!”
আমি শুধু জানি এই খবরের পিছনের খবর।
আমি তোমার ঠিকানা জানিনা বলে ঢাকা শহরের ডাকবাক্সদের এই অভিমান আমার উপর।


তোমার নতুন বাড়ির ঠিকানা কখনই জানালে না-
তাইতো আমার ভালো মন্দ তোমাকে আর জানাতে পারিনি,
নিজেও জানতে পারিনি কখনো
তোমার বিশাল সুখের কথা।


সারাদিন পর সূর্য যখন আমার সব সুখ দুঃখের গায়ে আগুন লাগিয়ে ডুবতে বসে
তখনই আমাদের ঢাকা শহর নতুন নতুন মুখোশ পরতে শুরু করে।
মুখোশ পরা এই ঢাকা শহরে আমি একা হেঁটে হেঁটে বেড়াই তোমার খোঁজে,
আশাহত হই প্রতিদিন,
আহত বুক নিয়ে প্রতিদিনই বাড়ি ফিরি
মধ্য রাতের চাঁদের ঘোরলাগা আলোতে।


মধ্যরাতে মাঝে মাঝে চোখ আটকে যায়
মুখোশের আড়ালের আসল ঢাকা শহরের গোপন চেহারায়।
অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে হাঁটতে পা লেগে যায় ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষের শরীরে!
অথবা ফুটপাতে আমাকে আটকে দিয়ে জেরা করে রাতের পুলিশ,
আমার আহত বুকের ক্ষত দেখেও তারা সুপ্রসন্ন হয় না কোনদিন
প্রতিবারই মানিব্যাগ থেকে কিছু না কিছু দিয়ে পার পাই।
ফেরার পথে নষ্ট ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে রাতের কোন না কোন নারী তাদের শরীর কিনতে আমাকে ডাকে।
মানিব্যাগের পকেটে রাখা তোমাকে লেখা শেষ চিঠিটি
আমাকে আটকে দেয় সেই সব রাতের নারীর কাছে যেতে।
  
আসলে আমার কোন কিছুতেই কিছু আসে যায়না আজকাল,
তাইতো নির্ভিকার ভাবে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ঠিকই পৌছে যাই নিজের মহল্লায়।
রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরগুলো গলির শুরুতেই আমাকে পাহারা দিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়।


ঘুম আসেনা আমার একলা বাড়িতে,
একসময় ছাদে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াই,
মুখোশ পরা এই ঢাকা শহরকে ভড়কে দিয়ে আচমকা চিৎকার করে বলে উঠি,
মনোলীনা,
এই শহরে আমি সারাদিন ফন্দিফিকির করে বেঁচে থাকি
শুধু তোমার একটি খবরের জন্য।
——————
র শি দ   হা রু ন
১৮/০৬/২০২২