বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটেই আটকে দিয়ে
জানতে চাইলো কার কাছে যাবো,
আমি গার্ডের দিকে না তাকিয়ে পাশে তাকালাম,
পাশ দিয়ে একদল ছাত্র- ছাত্রী চলে গেলো
প্রান খুলে গল্প করতে করতে,
একটা কুকুরও অনায়াসে ডুকে গেলো রাজার মতো,
“ আমি এখানকার প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলাম”
বলেই  আকাশের দিকে তাকালাম।


ঝকঝকে পরিষ্কার সকালের আকাশ,
আমি হাটছি অসংখ্য বৃক্ষের ছায়ার মধ্যে দিয়ে,
মনে হলো দীর্ঘ কাল অপেক্ষায় ছিলো এই ‘এক কিলো’র বৃক্ষদল
আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য,
তাই তারা ছায়া দিয়ে
আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।


কখন যে মাঝ রাস্তা বরাবর ধরে হাটছি বলতেও পারবো না,
বিকট গাড়ীর হর্নে
হঠাৎই নিজেকে আবিস্কার করলাম
রাস্তার মাঝ বরাবর
বোকার মতো হেসে ক্ষমা চাইলাম ছাত্র- ছাত্রী ভর্তি বাস চালকের কাছে।


সব কিছুই যেনো অপরিচিত
নতুন নতুন দালান,
পরিপাটি গোল চত্বর,
অসংখ্য মানুষ চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে সিনেমার পর্দার মতো ,
আমি কিছুই ঠিক মতো দেখছি না
মোহগ্রস্ত মানুষের মতো চলছি।


হাটতে হাটতে কখন যে
‘শাহ পরান’হলের সামনে চলে এসেছি,
বলতেও পারবো না,
আমার রুম বরাবর বেড়ে উঠা ইউক্যালিপটাস গাছ টা এখনো বেঁচে আছে,
এই গাছ তো এতোদিন বাঁচে না,
মন খারাপ থাকলে গভীর রাতে প্রায়ই আমি তার সাথে কথা বলতাম,
একটা গোপন বিরহ বুকের মধ্যে জেগে উঠলো
ইউক্যালিপটাস গাছটার জন্য।


কখন যে ৪৩৯/ডি রুমের সামনে
দাড়িয়ে আছি নিজেও জানি না,
রুমের দরজা হাট করে খোলা,
একজন ছাত্র সিগারেট হাতে দরজার পাশে দাড়িয়ে,
আমাকে দেখে সিগারেট আড়াল করে ফেললো,
কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বললাম,
“ আমি এই রুমের প্রথম বর্ডার ছিলাম”
আমার মনে হলো ,
আমাকে স্বাগত জানাতেই
দরজা হাট করে খোলা ।


রুমের ভিতরে ঢুকতেই ,
কেনো যেনো মনে হলো
রুমমেট কামরুল, মানস, লিংকন
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে,
এক্ষুনি মিল্টন, জামান , জুয়েল  
প্লেইং কার্ড নিয়ে হাজির হবে
শাহেদ আর বাপ্পা  সিগারেট খুঁজতে আসবে,
শুভ তবলায় টুক টাক আওয়াজ তুলবে
বনিক আর খুশবু বলবে “ বন্ধু যুদ্ধ হলে ডাক দিস”
এতো কিছু মধ্যে তারেক বই থেকে চোখই তুলবে না
আর আমি কবিতা লেখার ব্যার্থ চেষ্টায় সিগারেট টানছি।


আমি ফিরছি
প্রচন্ড ঝরো বৃষ্টিতে ভিঁজতে ভিঁজতে
আকাশের সাথে
“এক কিলোর” গাছগুলো ও কাঁদছে।


গার্ডের রুমের দিকে তাকিয়ে
মনে মনে বললাম
আমি শুধু আমাকেই খুঁজতে এসেছি,
শুধুই আমাকে।।
————————-
রশিদ হারুন
১০/০৮/১৮