ত্রিশ বছর পর আমি যখন আমার শৈশবের পুরোনো দোতালা বাড়িটির পাশে দাঁড়ালাম
-আশপাশ দিয়ে যারা যাচ্ছেন
কেউই আমাকে চিনল না,
আমিও চিনলাম না কাউকে।
শুধু আমাদের ভাড়া বাড়িটাকে অনেক বয়স্ক ও ক্লান্ত মনে হলো।


আমার জন্ম হয়েছিলো এই বাড়িতেই।
আমি বড় হতে হতে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি,
অথচ কী আশ্চর্য একটুও বড় হয়নি বাড়িটা।
সেই দোতালাই রয়ে গেল,
কিন্তু বয়স্ক হয়ে যাচ্ছে আমারই মতো।


হঠাৎ পাশ দিয়ে একজন মানুষ চলে গেলো,
ওনাকে মনে হলো আমারই বয়সী।
আচ্ছা সে তো আমার শৈশবের কোনো বন্ধুও হতে পারে,
আমরা হয়তো পরস্পরের নাম চেহারা ভুলে গেছি।


শুধুমাত্র দোতালার বারান্দার গ্রীলের নীচ দিয়ে একটি তিন-চার বছরের মেয়ে
আর সাথে তার বন্ধু সাদা-কালো একটি বিড়াল অনেকক্ষণ আমাকে দেখল।


আমি ফিরে যাবার সময় যখন গলির শেষ মাথায় চলে এসেছি
তখনই আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো বাতাসে একটা বিলাপের শব্দে!
বিলাপটি আমার জন্মঘর শৈশবের পুরনো দোতলা বাড়ির নাকি মহল্লার রাস্তার অথবা আমারই বুকের
-আমি বুঝতে পারিনি।


আমার কেন যে মনে হলো
আমি কখনোই বাড়িটি ছেড়ে যাইনি।
আমি একই সাথে অনেক জায়গায় ছিলাম।


আসলে জায়গা কখনো বদলায় না।
একই মানুষ একই সময়ে
নিজেকে বদলিয়ে বদলিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে জায়গায় জায়গায়।
এই বদলানো কেউ কেউ টের পায় জীবনের কোনো একসময়,
-আবার কেউ কেউ টেরই পায়না।
———————————
রশিদ হারুন
০৬/০৭/২০২০