প্রতি ঈদের নামাজের পর
ঈদগাহ থেকে বাড়ির পথে
শীতের কুয়াশা অথবা আষাঢ়ের জলে ভেঁজা মাটির পিচ্ছিল রাস্তা ধরে,
বাবার পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে
আমরা দু’ভাই ভয়ে ভয়ে বাবাকে বলতাম;
“ঈদের দিন না গেলে হয়না,
বাড়িতে গিয়ে নতুন কাপড় পরে ঘুরতে বের হবো।”
বাবা খুব গম্ভীর ভরাট গলায় বলতো
“এইতো বেশি সময় লাগবে নাহ।”


একটি বৃদ্ধ ডুমুর গাছের নীচে
প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া
সীমানাহীন দুটি কবরে পাশে দাঁড়িয়ে
দু’হাত তুলে বাবা বিড়বিড় করে কাঁদতেন,
আমাদের মনে হতো বাবার এই কাঁন্না যেনো অনন্তকাল ধরে চলছে!


আমরা দু’ভাই একসময়ে অস্হির হয়ে
বলেই ফেলতাম,
‘বাবা বাড়িতে গিয়ে আমরা নতুন কাপড় পরবো।”
সেই কাঁন্নার শান্ত ঢেউ থামতে কিছু সময় লাগতো
তারপর তিনি একই গম্ভীর ভরাট গলায় নরম করে বলতেন
“এইতো বেশি সময় লাগবে নাহ।”


সময়ের হিসাব বুঝতে বুঝতে
সময় শুধু দৌঁড়ে পালিয়েছে আমাদের জীবন থেকে,
পলাতক সময় শুধু আমাদের দু’ভাইকে  দিয়ে গেছে দাদা- দাদীর কবরের পাশে আরো দুটি নতুন কবর-
আমাদের বাবা-মার কবর,
আর সেই দুই কবরের উপর নতুন একটি ডুমুর গাছ।


আজও আমরা সময়ের হিসাব মিলাতে পারিনি।
ঈদের নামাজের পর
আমরা দু’ভাই এখনো ঈদগাহ থেকে বাড়ির পথে নীরবে হাঁটি।
পেছনে পেছনে আমাদের সন্তানরা হাঁটতে থাকে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে।
আমরা দু’ভাই ‌অযথাই মাঝে মাঝে বলে উঠি,
“এইতো বেশি সময় লাগবে নাহ”।
---------------
র শি দ  হা রু ন
১৪/০৭/২০২১