যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
লকডাউনে থাকতে থাকতে দিন তারিখ সব ভুলে গেছি।
কবরে যদি সম্মানিত ফেরেশতাগণ
দিন তারিখ জানতে চান বড়ই লজ্জায় পড়ে যাবো।


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
গোসল দেওয়ার মানুষ খুঁজতে তোমার খুব কষ্ট হবে।
বাজে অভ্যেস আমার-
প্রতিদিন গোসল ছাড়া আমার খুবই অস্বস্তি হয়।
কাফনের কাপড়ের দোকান বুঝি বন্ধ থাকে লকডাউনে?
আমি জানিনা-
তবে খুব কষ্ট হবে তোমার এসব করতে।
কাফন না পেলে তোমার সাদা শাড়িটা দিয়ে কাফন বানাতে দিও।

যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
আমার জানাজায় কোনো মানুষ আসবে না এখন।
কেউ কাঁধে করে কবরস্থানে নিতেও চাইবেনা।
গোর খোঁড়ার মানুষও পাওয়া যাবেনা এই অবেলায়;
আগে জানলে নিজেই কবরটা খুঁড়ে রাখতাম।


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
বন্ধু আর আত্মীয়রাও আসতে পারবেনা লকডাউনে,
ওদের কাছেও লজ্জা পাবো এই অবেলায় মরে গেলে।
সবাই একই কথাই বলবে,
“ মরার আর সময় পেলোনা!”


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
বন্ধুদের সাথে অনেকদিন আড্ডা দেওয়া হয়নি,
বলা হয়নি-
“যাইরে, আবার দেখা হবে।”
বলা হয়নি পরিচিত মানুষদের-
“ মনে কষ্ট দিলে ক্ষমা করবেন।”
বলা হয়নি-
“ আপনারা খুব ভালো মানুষ,
বলা হয়নি- “কৃতজ্ঞ”।
গলির কুকুরটাকে কথা দিয়েছিলাম,
একদিন পেট ভরে খাওয়াবো,
বেচারাও অপেক্ষায় থাকবে সারাজীবন।


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
তুমি খুবই অস্বস্তিতে পড়ে যাবে।
মার কাছে কিভাবে বলবে,
তার ছেলে এ‌ই অবেলায় মরে গেছে!
সন্তানদের কিভাবে বলবে-
“তোমাদের বাবা বোকার মতো এই অসময়েই মরলো!”


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
পূর্ণিমার চাঁদটা দেখা হয়নি অনেকদিন;
দেখা হয়নি জোনাকি,
বলা হয়নি তাদের-“ আমার কবিতা তোমাদের কাছে ঋণী।”


যদি এই অবেলায় মরে যাই
বড়ই লজ্জা পাবো-
শেষ স্ট্যাটাসটা দেওয়া হয়নি।
অনেকদিন যাবত লিখবো লিখবো ভাবছিলাম,
লাল ভালোবাসার চিহ্ন দিয়ে-
“ সারাজীবন মানুষ হতে চেষ্টা করেছি, তবুও পুরোপুরি হতে পারিনি,
সব মানুষ কে ভালোবাসি,
জীবন অনেক সুন্দর,
আর ভালো থেকো মনোলীনা”
————————————
১৩/০৪/২০২০
রশিদ হারুন