প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরার সময়
আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি
একটি দোকানের পাশে।
মাঝে মাঝে দু’একজন খুব মন খারাপ করে কেনাকাটা করে সেই দোকান থেকে।
দোকানদার নির্বিকার চেহারায় সব প্যাকেট করে দেয়।
কোন রকম দরদাম ছাড়া সবাই টাকা দিয়ে দেয়,
“চির বিদায় ষ্টোর” নামের এই দোকানটা
আমাকে খুব টানে!


আমার খুব ইচ্ছে একটা কফিন
আর কাফনের সাদা কাপড় কিনতে।
একদিন ঠিকই কিনে ফেলি
আম কাঠের সস্তা একটা কফিন
আর ধবধবে সাদা, দাগহীন
একটা কাফনের কাপড়।


দোকানদার সৌজন্য করে জানতে চেয়েছিল
-কে মারা গেছে?
আমি বলেছিলাম -আমার আপন জন।


ব্যাচেলার মানুষ,
থাকি ছাদের চিলকোঠার
ছোট্ট একট ঘরে।
রাতের অন্ধকারে সবার উৎসুক চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসি ঘরের ভিতর
সেই কফিন সহ কাফনের কাপড়।


প্রথম রাত্রিতেই খুব যত্ন করে
পরিষ্কার করি কফিনটাকে,
এরপর আলো নিভিয়ে অন্ধকার করে ফেলি ঘর।
তারপর কাফনের কাপড়টাকে সারা শরীরে জড়িয়ে
কফিনের ঢাকনাটা টেনে শুয়ে পড়ি কফিনের ভিতর
নিকশ কালো এক অচেনা অন্ধকারের বুকে।
নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মনে হতে শুরু করে ধীরে ধীরে!
একসময় দু’চোখ জুড়ে তীব্র আঠালো ঘুম চলে আসে।


কফিনের অ‌ন্ধকারে আমার কোন অসুখ মাথার ভিতরে কামড়ায় না।
কোন অভিযোগ  কফিনের কাঠ ভেদ করে
আমার বুকের কাছে আসতে পারে না।


সেই তীব্র আঠালো ঘুমে
এক সময় আমি আর মানুষ থাকিনা!
অন্ধকার থেকে বের হয়ে
ধব ধবে সাদা বক হয়ে আকাশে উড়তে থাকি।


সারারাত  উড়তে উড়তে  ক্লান্ত হয়ে ঘুম ভাংগে।
সকালে আবার সেই একই মানুষ হয়ে অফিসে যাই।


একসময় মনে হয় ‘আমার না’ আরেক জনের জীবন টানছি এই বুকে।
বুকের মাঝে অন্য মানুষের জীবন টানতে আমার আর ভালো লাগেনা।


এখন প্রতিদিন রাত হলেই কাফনের সাদা কাপড় পরে
কফিনের অন্ধকারে শুয়ে থাকি,
আর সাদা বক হয়ে সারারাত উড়তে থাকি।


আহারে,
যদি একটা সাদা বকের জীবন পেতাম
-শুধু উড়তাম আর উড়তাম।
-------------------------------
কাব্যগ্রন্থ – ভালো থেকো মনোলীনা
র শি দ  হা রু ন
১২/০৪/২০১৭