প্রিয় নেতা,
আমার বিপ্লবী অভিবাদন নিবেন,
আপনাকে আমি এখন প্রায়ই টেলিভিশন আর পত্রিকায় দেখি,
আপনার স্বাস্হ্য আগের চেয়ে ভালো হয়েছে,
মুখের কালো দাগগুলো বোধ হয় এখন নাই,
আপনাকে যেহেতু আর রোঁদে পুড়তে হয়না,
তাই আপনি দেখতে আরো সুন্দর হয়েছেন।


আপনার সাথে দেখা করার জন্য অনেক চেষ্টা করছি,
আপনার সরকারী বাসায় গিয়েছিলাম,
পুলিশ ঢুকতে দিলোনা,
ফোন করেছিলাম অনেকবার, আপনার পুরোনো নাম্বারে,
আপনার ব্যাক্তিগত সহকারী প্রতিবারই ফোন ধরে বলে,
“ আপনি পরে ফোন করুন, স্যার এখন মিটিং এ”
আমি প্রতিবারই বলি,
“আমার নামটা বলবেন,আমাকে যেন উনি
এই নাম্বারে একটা ফোন দেন,
আমার খুব জরুরী দরকার।”


আপনার ফোন আর কখনোই আসলো না,
আপনা’কে বোধহয় আমার নামটা বলেনি আপনার ব্যাক্তিগত সহকারী,
বললে আপনি আমাকে নিশ্চয়ই ফোন করতেন।


আমি খুবই সমস্যায় পরেছি,
‘বিপ্লব’ শব্দ’টি আমি প্রথমে আপনার মুখ থেকে শুনি,
তখন আমি কলেজে ১ম বর্ষে,
আপনি আমাদের ছাত্র সংসদের নেতা ছিলেন,
সবার নায়ক ছিলেন শুধু আপনার প্রতিবাদী কথার জন্য,
খুব সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারতেন আপনি,
শুধু শুনতেই ইচ্ছে করতো,
আপনার চলাফেরা, কথাবার্তা, সবই ছিলো আমাদের আদর্শ,
আপনার আপোষহীন চরিত্র আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।


আপনি আমাকে যে ‘বিপ্লব’ শিখিয়েছিলেন,
সেখানে ছিলো শুধু সমাজ পরিবর্তনের কথা,
সম অধিকারের কথা, ধর্মনিরপক্ষ রাষ্ট্রর কথা,
ক্ষধার্ত মানুষের জন্য খাবারের গল্প,
‘মানুষ’ এর জন্য মানুষের ত্যাগের কথা,
আহা শুধু শুনতেই ইচ্ছে করতো,
নিজেকে তখন মনে হতো চরম ‘বিপ্লবী’।


আপনার হয়তো মন নেই,
আমি আমার অসুস্হ বিধবা ‘মা’এর চিকিৎসার টাকা
আপনার ‘বিপ্লবী ফান্ডে’ দিয়েছিলাম,
আপনি তখন আমাকে দেখিয়ে সবাইকে বলেছিলেন,
“ ওর দিকে তাকাও,
ও আজ আমাদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকলো,
দেশ হলো আসল মা,
একজন ‘মা’ মরে গেলে কিছু হবে না,
কিন্ত্তু দেশ মরে গেলে সবার ‘মা’ মরে যাবে”,
তখন আমার গর্বে বুক ফুলে উঠেছিলো।


আমার ‘মা’ বিনা চিকিৎসায় ঠিকই মরে গিয়েছিলো,
কারোই কিছু হয়নি, শুধু কষ্ট পেয়ে চিৎকার কেঁদেছিলো
আমার ছোট ভাই-বোন গুলো,
ওরাতো আর ‘বিপ্লব’ বুঝতো না,
আমারও কেমন যেনো কান্না পেয়েছিলো,
তবুও কাঁদিনি, যদি কেউ দেখে ফেলে,
আমি যে তখন চরম বিপ্লবী।


এই বিপ্লব বুকে নিয়ে সারাদিন আপনার সাথেই ছিলাম,
আপনার দেখানো রাস্তায় চলতে গিয়ে,
পুলিশ কেইস আর জেল জুলুমে লেখা পড়াটাও শেষ করতে পারলাম না।
জেলে বসেই শুনেছি আপনি সরকারী দলে যোগ দিয়েছেন,
আপনি এখন সরকারের বড় মন্ত্রী।


অনেক’দিন পর জেল থেকে বেড়িয়ে দেখি
একজন ও অভ্যর্থনা জানতে জেল গেটে নেই,
কেউ চিনলো না আমাকে,
শুধু দরিদ্র ভাই-বোন গুলো বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো।


আপনাকে আমার জরুরী দরকার শুধু
একটি কথা জানার জন্য,
আপনি আমাকে যে বলেছিলেন,
“একজন ‘মা’ মরে গেলে কিছু হবে না,
কিন্ত্তু দেশ মরে গেলে সবার ‘মা’ মরে যাবে”
আমার যে এখন সারাদিন মা’র কথাই মনে পড়ে,
যে’দিন পত্রিকায় আপনার মা’য়ের সাথে সুন্দর হাসিখুসি
একটা ছবি দেখলাম,
সে’দিন আমার মা’র কথা বেশি মনে পড়লো,
আচ্ছা বলুনতো,
‘বিপ্লব’ কথার অর্থ কি বদলে গেছে
আমি যখন জেলে ছিলাম?”
আমার খুব সন্দেহ হয় আমি বিপ্লবী হতে পারিনি,
আপনি যে ভাবে বলেছিলেন,
নেতা,
আমার না সারাদিন শুধু মা’র কথাই মনে পড়ে।
“বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক”
———————————————————
রশিদ হারুন
২১/০৯/২০১৮