শেষ দুপুরে ঘর থেকে বের হতে গেলেই
মা বলতেন,
“মাগরিবের আজানের আগেই ঘরে ফিরিস কিন্তু,
দেরী হলে তোর আব্বা বকবেন।"


পড়ন্ত দুপুরের গরমে বিছানায় শুয়ে
মার হাতপাখার বাতাসে
ভাতঘুমে দুচোখের আঠালো ভাবেও
ঘরের জানালা দিয়ে খোলা আকাশে আমার চোখ পড়তোই।


আর ঠিক তখন বিছানায় উঠে বসতাম,
দেখতাম আকাশে একটা লালরংয়ের সুতাকাঁটা ঘুড়ি উড়ছে।
ঘর থেকে বের হতে করুন সুরে আমাকে ডাকতো লালরংয়ের ঘুড়িটি।


সেই ঘুড়ির সুতো ধরার জন্য
এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় ছুটে বেড়াতাম।
হাওয়ার গতি বুঝতাম না আমি কখনোই!
শুধু শুধু ছুটতাম আর ছুটতাম,
সেই লাল ঘুড়ির সুতো আমার এই জীবনে আর ধরা হয়নি।


প্রায় প্রতিদিনই মাগরিবের আজানের পরই দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ফিরতাম।
লাল কালোরংয়ের একটা শাড়ি পরা মাকে দেখতাম
নিজের নামাজের পর
জায়নামাজের ওপর বসে থাকা বাবাকে
হাত পাখা দিয়ে ক্রমাগত বাতাস করে যাচ্ছে।
আমাকে দেখামাত্র বুকের অস্থিরতার নিঃশ্বাসটা বের করে দিতো,
আমি দূর থেকেও সেই গরম বাতাসের আঁচ পেতাম শরীর মনে।


আজকাল মাগরিবের আজানের আগেই বাড়ি ফিরি,
লাল কালো শাড়ি পরা মা এখন কোথায় বসে
জায়নামাজে বসা বাবাকে হাতপাখার বাতাস দিচ্ছে ক্রমাগত
ভাবতে গেলেই আমার মাথা শূন্য হয়ে যায়।
সন্ধ্যা রাত্রিতেই প্রচণ্ড আঠালো ঘুম পেয়ে বসে আমার দুচোখে।
ঘুমের মাঝে মরে যাওয়া মা বাবার অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া চেহারা স্বপ্নে ধরা দিতে না দিতেই
হাওয়া হয়ে মিশে যায় আকাশে।
আকাশে শুধু ভেসে বেড়ায় সারাজীবন ধরতে না পারা
সে‌ই সুতোকাটা লাল রংয়ের ঘুড়ি।


স্বপ্নের মাঝে আমি এখনো ছুটে বেড়াই
এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায়,
সে‌ই সুতোকাটা লাল রংয়ের ঘুড়ির জন্য।
—————————————
র শি দ  হা রু ন
১০/০৮/২০২২