মনোলীনা,
আমি বার বার মুখোশ বদলাই তোমারই জন্য,
আমিই  সেই মানুষ।


আমি শুকনো পাতার দীর্ঘশ্বাস
দু’পায়ে অবলীলায় মাড়িয়ে-
গহীন অরন্য থেকে-
একটি আস্ত জোছনার চাঁদ চুরি করি।
তারপর থেকে সব বিষন্ন কবিরা আমাকে অভিশাপ দেয় সেই চাঁদের জন্য।
আমি আবার মনস্তাপে পুড়ি সেই বিষন্ন কবিদেরও জন্য।
তাই বিষন্নতার মুখোশ পড়ে তাদের পাশেই বসে যাই দুঃখময় হাহাকারে-
চুরি যাওয়া সেই চাঁদেরই জন্য।
গভীর রাতে যদি কখনো মন খারাপের স্বপ্নে তোমার ঘুম ভেংগে যায়-
তখন বিছানায় শুয়ে আকাশ ভেবে ঘরের ছাদে তাকালেই দেখবে সেখানে-
একটি মন ভালোর আস্ত জোছনার চাঁদ ঝুলছে।


আমি সিনেমা হলে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম অনেকদিন-
তোমাকে সেই প্রিয় গল্প দেখবো বলে।
অথচ, তুমি আসোনি কখনোই সেখানে।
তাই ‘টিকেট কালোবাজারীর’ মুখোশ পড়ে সব টিকেট আজীবনের জন্য কিনে ফেলি।
যেহেতু তুমিই দেখবে না-
তাই অন্য কেউ যেনো দেখতে না পায় আমার প্রিয় সেই সিনেমা।


রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের মুখোশ পড়ে দাড়িয়ে যাই সেই সব পথ-
যে পথ দিয়ে তুমি আমার হাহাকারের
পতাকা তোমার গাড়ীতে পতপত করে উড়াতে উড়াতে যাও।
সেই সব পথের সিগন্যালে আমি সব সময়ই সবুজ বাতি জ্বালিয়ে রাখি।
তোমার এক মূহুর্ত যেনো দেরী হয়ে না যায় পৌঁছাতে।


আমি ডাকপিয়ন এর মুখোশ পড়ে- তোমার দরজায় ঝুলন্ত ডাকবাক্সে- আমার বানানো একটা আস্ত দিঘী পৌছে দেই।
সেখানে সব সময়ই লেখা থাকে,
“প্রাপক সাবধানে সাঁতারবেন,
না হলে দিঘীতে ডুবে যাবেন!!”


আমি তোমার ভ্যানিটিব্যাগের
আর্থিক টানাপোড়ায় অর্থের মুখোশ পড়ে শুয়ে থাকি-
যেনো কোনো সুখ কিনতে গিয়ে তোমার অসুখ না হয়।


আমি ভিখারীর মুখোশ পড়ে
তোমার দরজায় দাড়াই-
অসংসারী কবিতার জন্য।


আমি বৃক্ষের মুখোশ পড়ে তোমার জানলায় উকি দেই-
শধু তোমার মায়ার ফড়িংগুলো যদি কখনো ভুল করে আমার বুকে বাসা বাধে।


মনোলীনা,
একদিন যখন পৃথিবীর সব মুখোশে আমার অরুচি ধরে যাবে,
সেদিন আমার সব হাহাকার, বিষাদ, ক্রোধ আর কান্নার মুখোশ দিঘীর জলে ধুয়ে,
পৃথিবীর শুদ্ধতম স্নান সেরে
তোমারই দরজায় দাড়াবো।
তারপর স্পষ্ট কন্ঠে আমার শুদ্ধ চেহারা নিয়ে তোমাকেই বলবো-
“এখনো সময় আছে-
আমাকে ভালো না বাসলে,
একদিন এই পৃথিবীর মুখোশেরও টান পড়বে”।
—————————————
রশিদ হারুন
০৬/১২/২০১৯