মনোলীনা,
তুমি যেদিন থেকে চলে গেলে
এই ঢাকা শহর ছেড়ে,
সে’দিন থেকেই স্পর্ধা বেড়েছে সবার।


সবাই ধরে নিয়েছে,
তুমি এই শহরে আর ফিরবেনা।
তাইতো আজকাল রিকশাওয়ালারা আমার দিকে তাকিয়েও দেখে না।
কেমন অবহেলা ভরে ভাড়া চায়।
দশ টাকার ভাড়া বিশ টাকা চেয়ে ফেলে নির্ধিদ্ধায়।


তুমি নেই বলে,
ভিখারী ভিক্ষা নেয়না আমার কাছ থেকে,
করুনা করে আমার দিকে তাকায়,
আর পারলে আমাকেই কিছু ভিক্ষা দিতে চায়।


মনোলীনা,
‘আয়না ভাংগা চাঁদের আলো’ গিলতে যখন মধ্যরাতে রাস্তায় বের হই,
রাতের বেওয়ারিশ মাতালরা জোর করে আমাকে বাংলা মদ গিলিয়ে দেয়।
তারা আমাকেই অভদ্র বিরহী মাতাল বানিয়ে দেয়।
তখন মহল্লার কুকুরগুলো ‘অভদ্র আমাকে’ দেখলেই বিকট শব্দ করে চিৎকার করে ভয় দেখায়।
রাতের পুলিশ চেকপোষ্টে বারবার আমাকে চেক করে,
আর জানতে চায়,
“বুকের ভিতর কোনো নিষিদ্ধ শব্দ আছে কিনা?”


মনোলীনা,
তুমি এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়ায়-
বাড়ীওয়ালা একদিনের নোটিশে আমাকে বাড়ী ছাড়তে বলেছে,
এই শহরে আর ব্যাচেলরকে বাড়ী ভাড়া দিবেনা কোনো বাড়ীওয়ালা।
এই শহরে এখন সারাদিন রাত্রি উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে-
‘কাঁদতে কাঁদতে মুখ ফুলিয়ে থাকা একটি বালক আকাশ’।


মনোলীনা,
তুমি এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়ায়
সবাই কেমন দরিদ্র হয়ে গেছে।
পত্রিকায় নতুন কোনো খবর নেই,
পত্রিকার অফিস বন্ধ হয়ে সবাই বেকার।
‘গুলিস্তানের কামান’ চোর চুরি করে লোহার দরে বিক্রি করে দিয়েছে।
মধুমিতা আর জোনাকি সিনেমা হলের সব টিকেট অবিক্রিত থাকে।
বই মেলায় একটিও কবিতার বই বিক্রি হয়না।
বাদামওয়ালা আর ফুচকাওয়ালা মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে সারাক্ষণ
একজন কাষ্টমারের জন্য।


মনোলীনা,
দয়া করে,
তুমি ফিরে আসো এই ঢাকা শহরে,
আমার জন্য না হোক
এই শহরের মানুষের জন্য।


তুমি আসলেই,
আমি একদিনেই সাহসী হয়ে যাবো।
রাতের পুলিশের চেকপোষ্টে নির্ধিদ্ধায় বুক থেকে নিষিদ্ধ শব্দ  বের করে দিবো পুলিশের হাতে-
“অপেক্ষা ও ভালোবাসা”।
————————————
রশিদ হারুন
২২/১১/২০১৯