কোট টাই পড়ে সকালে অফিসে যাবার জন্য শেষবারের মত আয়নায় তাকাতেই;
আমার নিজেরই মৃতদেহ ভেসে উঠলো চোখে।
অফিসের বদলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলাম আজিমপুর কবরস্থানে,
সেখানে গিয়েই পেলাম অচেনা একজনের জানাযা।
দাঁড়িয়ে পড়লাম জানাজায়,
দীর্ঘ মোনাজাতে তার জন্য কাঁদলাম কিছুক্ষণ।
মৃতের কেউ একজন জানতে চাইলো,
মৃত মানুষটি আমার কেমন পরিচিত ছিলেন,
আমি জানালাম আমি কখনো মানুষটিকে দেখিনি,
আজই দেখবো।
আশ্চর্য হলেন তিনি।
মুখ থেকে কাফনের কাপড় সরিয়ে মৃতের অপরিচিত মুখটা দেখিয়ে দিলেন তিনি।
ঠিক আয়নায় দেখা আমার মৃতদেহের মতই তার মুখ!


সবা‌ই চলে যাবার পর আমি একা একা অনেকক্ষণ সেই কবরের পাশে বসে রইলাম
-মৃত মানুষটিকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য।


আজকাল আর অফিসে যাইনা,
সকাল সকাল ঘর থেকে বের হয়ে শহরের সব কবরস্থান ঘুরে বেড়াই।


এক একদিন এক একজনের জন্য কাঁদি,
তারপর তাকে সঙ্গ দেই দিনভর।
গল্প করি সারাজীবনের পাওয়া না পাওয়ার খুচরো ইতিহাসের,
সুখ-দুঃখের মিলে মিশে থাকার সংগ্রাম।


আসলে আমি নিজেকে শুনাই নিজের গল্প,
একাকীত্ব আমার জন্মগত রোগ,
তাই কবরে পাশে বসে থাকি,
বসে থাকি নিজেরই সাথে।


সূর্য ডুবে গেলেই ঘরে ফিরি।
ফিরেই আয়নায় তাকালে সেই মৃত মানুষটির মুখ ভেসে উঠে,
যার সাথে সারাদিন কাটিয়েছি,
আমার সাথেই মিলে যায় তাদের চেহারা সবসময়।


অচেনা মৃত মানুষের জন্য আমার দীর্ঘ মোনাজাত আসলে আমার নিজের জন্য,
শুধু আমার আসন্ন মৃত্যূতে আমারই মতো নিঃসঙ্গ কেউ যেনো আমার কবরের পাশে বসে আমাকে সঙ্গ দেয়,
অন্ততঃ একদিন,
সেদিন থেকে হয়তো আমি আর একাকীত্বে ভুগবো না।


—————————
রশিদ হারুন
০৫/০৮/২০২০