একজন বালক অদৃশ্য এক নাটাই -সুতো দিয়ে আকাশে এক অদৃশ্য ঘুড়ি উড়ায়;
প্রতিদিন বাড়ির পাশের মাঠটিতে বিকেলে বেলায়।
‌অফিস থেকে ফিরতি পথে প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে তার সাথে দেখা হয় আমার,
কিন্তু কথা হয়না কখনো।


অফিস ফেরত বিকেলটা আমি তার ঘুড়ি উড়ানো দেখি মাঠে বসে,
আশ্চর্য হই আমি,
চলতি পথের মানুষজন কেউই তাকে দেখতে পায় না!
শুধু কেনো যেন আমিই দেখতে পাই তাকে।


বালকটিকে যখন খুব বিষন্ন হতে দেখি,
তখন বুঝতে পারি আজ তার ঘুড়ির সুতো কেঁটে গেছে।
আনন্দিত হলে বুঝতে পারি সেদিন সে ঠিকমতো ঘুড়ি মাটিতে নামিয়েছে,
অথবা অন্য কারো অদৃশ্য ঘুড়ি কেটে দিয়েছে।


সূর্য ডুবার পর দু’জনেই হাঁটতে হাঁটতে বাড়িতে ফিরি নিঃশব্দে।
ফিরতি পথে আচমকা  হারিয়ে যায় বালকটি সব সময়।
কোন বাড়ির ছেলে সে জানা হয়নি কখনো।


যেদিন আমি বাড়ির ফেরার পথে এক পরিচিত অন্ধ ভিখারীর ভিক্ষাপাত্রে, অমোনযোগের ভাব ধরে ইচ্ছে করে লাথি মেরেছি,
ঠিক সেদিন থেকে বালকটিকে আর মাঠে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি উড়াতে দেখিনি কখনো!
আমি প্রতিদিন সময় করে বিকেলে মাঠে এসে বসে থাকি,
তবুও বালকটির দেখা আর পাইনি তারপর।


হারিয়ে যাওয়া বালকটি আর তার ‌অদৃশ্য ঘুড়ি এখন আর আমাকে রাতে ঘুমোতে দেয়না তারপর থেকে,
বসে থাকি ‌অ-ঘুমে সারারাত।
সেই সব অ-ঘুমের গভীর রাতে
আমি কখন যে অদৃশ্য নাটাই সুতো নিয়ে চলে যাই সেই মাঠে,
একবারও টের পাইনা।
একসময় নিজেকে আবিস্কার করি.
রাতের আকাশে এক অদৃশ্য ঘুড়ি উড়াচ্ছি সেইখানেই দাঁড়িয়ে,
বালকটি ঠিক যেখানে দাঁড়াত।
এই আমিও যেদিন আকাশ থেকে সেই ‌অদৃশ্য ঘুড়ি মাটিতে নামাতে পারি
-সেদিন আমি বেঁচে থাকি,
যেদিন ‌অদৃশ্য ঘুড়ির ‌অদৃশ্য সুতো ছিড়ে ঘুড়ি উড়ে যায় রাতের আকাশে
-সেদিন আমি মরে যাই।
শুধু বিষন্ন এক চাঁদের আলোতে পরিচিত সেই অন্ধ ভিখারী বসে বসে আমাকে পাহারা দেয়।


এখন এভাবেই প্রতিরাতেই আকাশে ‌অদৃশ্য ঘুড়ি উড়িয়ে
আমি কোনোদিন বেঁচে থাকি,
আবার কোনোদিন মরে যাই
-এক ‌অন্ধ ভিখারী শুধু আমার জীবন মৃত্যু পাহারা দেয়।
————————————————
রশিদ হারুন
০১/০৮/২০২০