কদম ফুলের গন্ধে কী এক রহস্য খেলা করে
আমি ঠিক বুঝতে পারিনা!
কদম ফুলের গন্ধে বোধহয় ঈশ্বরও পাগল হয়ে যান।
তার পাগলামীতে তখন মেঘের বুকেও গর্জন শুরু হয় কান্নার মতো শব্দে।
সেই গর্জন থামে যখন মেঘের বুকের কান্না ঝরে  বৃষ্টি হয়ে।
আর আমার বুক থেকে জল ঝরে অপেক্ষা হয়ে।


বৃষ্টির দিন শুরু হলেই,
আমার অস্হিরতা বাড়ে-অপেক্ষা বাড়ে।
অফিস শেষে প্রায় দিনই শহরের শেষ মাথায় বারো মাইল গাড়ি চালিয়ে বাবার কবরের পাশে এসে দাঁড়াই।
অপেক্ষায় থাকি কবে ফুল ফুটবে,
-বাবার কবরে মাটিতে লাগানো কদম গাছ থেকে বাবারই প্রিয় কদম ফুল।


বর্ষাকাল আসলেই আমার বাবা প্রায় দিনই
অফিস শেষে মার জন্য কদম ফুল নিয়ে ঘরে ফিরতেন।
মনে হতো মা যেনো সারাদিন অপেক্ষায় থাকতেন এই কদম ফুলের জন্য।
কী এক অসহ্য মৌ মৌ গন্ধে ঘর ভরে যেতো।
আমার কিছুতেই সহ্য হতো না এই গন্ধ,
মাথা ঘুরতো আমার।
এই অসুখের কথা বাবাকে কখনোই বলতে পারিনি।


আমি টের পাই
বৃষ্টির দিনে এখনো মা অপেক্ষায় থাকেন
এই কদম ফুলের।


বাবা বেঁচে থাকতে জীবনের কোনো কিছুই দিতে পারিনি উনাকে।
উনার মৃত্যূর পর উনারই কবরে একটি কদমের চারা বুনেছিলাম।
এখন বর্ষা শুরুতে সেই কদম গাছ
থেকেই ঈশ্বরকেও পাগল করে অজস্র ভালোবাসা ফুটে
-বাবার কবর থেকেই- আমার মায়ের জন্য।


পনের বছর যাবত বৃষ্টির দিনে
আমার অপেক্ষায় মা দরজার দিকে তাকিয়ে থাকেন,
কখন ফিরবো আমি অফিস থেকে।
যেদিন কদম ফুল নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারি সেদিন পুরো ঘর ভরে যায় কদমের মৌ মৌ গন্ধে।
রাত যত বাড়ে গন্ধ ততই বাড়তে থাকে মা'র ঘর থেকে।
বাবার ভালোবাসার কাছে মরণও পারেনি তার সুন্দর এই পাগলামী বৃষ্টির জলে ধুয়ে মুছে দিতে।


কেউ বুঝে না আমি ঠিকই টের পাই,
-কদমের গন্ধ নয়, সারা ঘর জুড়ে ভেসে বেড়ায় মা'র চোখের জল,
বাবার শরীরের গন্ধ,
আর আমার দীর্ঘশ্বাস।


"বাবা,
-কদম ফুলের গন্ধে এখন আর আমার মাথা ঘুরায় না।”


————————————————
রশিদ হারুন
০১/০৫/২০২০