প্রতিদিনের মত আজও
পত্রিকাওয়ালা ,”এই পেপার, এই পেপার” বলে ডাকছে,
বাদামওয়ালা ঠান্ডা বাদাম গরম বলে বিক্রি করছে,
পরিচিত ভিখারিনী সেই একই সুরে বিরক্ত করছে
কুলিওয়ালাদের হঠাৎ অস্থির হয়ে ছুটোছুটি বেড়ে যায়,
আর আমি একই রঙ এর
হলুদ পাঞ্জাবি পরে,
কমলাপুর রেল স্টেশন এর ২নং গেইটে
স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি ,
সকাল দশটা বাজার দশ মিনিট আগে থেকে,
উপবন এক্সপ্রেস এসে থামে ,
যাত্রীরা সব হন্য হয়ে প্রিয়জনের কাছে চলে যায়,
তারপর একসময় যখন স্টেশনের
দেয়ালঘড়িতে বারোটার ঘন্টা বাজে,
আমি সংকোচে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে দিতে
আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে
আশি নং দখিন কমলাপুর এর
ছোট খুপরিটাতে ঢুকে পরি,
আর নিজেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলি
“আজ না আসলেও,
তুমি কাল অবশ্যই আসবে
ব্যাস্ত আছে অন্য কোনো কাজে”
আমি প্রতিদিন স্টেশন যাই আত্মবিশ্বাসে ,
আর বাড়ী ফিরে আসি সংকোচে।


মনোলীনা,
গত “দুই হাজার নয়শো তিন দিন”,
প্রতিদিন তোমার অপেক্ষায়
আমি রেল স্টেশন দাঁড়িয়ে থাকি,
তোমার কথামত তোমার প্রিয়
হলুদ রং এর পাঞ্জাবি পরে।


এর মধ্যে দেশে সরকার বদলে গেছে দুবার,
অনেকগুলো উড়াল সড়ক হয়ে গেছে সরাদেশে,
রাস্তায় রাস্তায় অযথাই অনেক চেকপোষ্ট বেড়েছে,
মোরের দোকানের এক কাপ চায়ের দাম এখন দশ টাকা,
সিনেমা হলগুলো এখন আর আগের মত হাউজফুল হয় না,
আর আমার শরীরের রং টা বোধহয় পুড়ে গেছে।


তবুও তুমি আসো না,
তবুও তোমার আসার সময় হয় না,
অথবা ভুলে গেছো
একজন নবীন কবির কাছে তুমি কথা দিয়েছিলে
তুমি তার কবিতার খাতা গুছিয়ে দিবে সারাজীবন।


আমি প্রতিদিন নিজের সাথে বাজী ধরি
আজ তুমি আসবেই,
তারপর সব হারানো জুয়ারীর মত
পকেট হাতরানো মত করে বুক হাতরাই,
বারাবার উল্টেপাল্টে দেখি বুকে কিছু আছে কিনা।


অভিমানে বুক হাতরাই ,
কষ্টে বুক হাতরাই
অপমানে বুক হাতরাই
বিরহে বুক হাতরাই
ঘুমের মাঝেও বুক হাতরাই
তারপর একসময় পেয়ে যাই কবিতা।


মনোলীনা,
শুধু কবিতার খাতা গুছোতে পারিনা বলে
"দুই হাজার নয়শো তিন দিন"
আমি কোন কবিতা লিখিনা।
---------
জি, এম, হারুন অর রশিদ
১৫/০৩/২০১৭