মনোলীনা
প্রাচীনকাল থেকেই কিছু মানুষ হঠাৎ করেই ‌একবারেই গুম হয়ে যায়
আশেপাশের মানুষরা তা টেরও পায় না,
কেউ তাদের আর কখনোই খুঁজে পায়না
এমন কি তারা নিজেও নিজেকে খুঁজে পায়না আর বাকি জীবন।


শুধু মানুষটির শরীর দিব্যি সবার সামনে হাঁটাচলা করে
অথচ সেই মানুষটি তার নিজের শরীরের ভিতরেই থাকেনা আজীবন।


প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে তুমিও জানতে পারবে,
এই গুম হয়ে যাওয়াকে তখনকার সময়ের চিকিৎসকরা বলতো – ‘অন্তৰ্দহন’
এর চিকিৎসা পত্রে বিস্তারিত ভাবে লেখা হয়েছে-
“প্রিয় মানুষটাকে না পাওয়ার তীব্র গুমোট হাহাকার
আর বিষম যন্ত্রনার কথা মুখে বলতে না পারার এক বিবশ কষ্টে
মানুষটি তার বুকের ভিতরের মনোবেদনার তাপে পুড়ে পুড়ে
ছাই হয়ে শরীর থেকে বাতাসে মিলিয়ে গেছে,
সেই মানুষটিকে শরীরের ভিতরে রাখার একমাত্র ঔষুধ,
-সেই প্রিয় মানুষটিকে কোন না কোন ভাবে তার এই হাহাকার আর যন্ত্রনার কথা কমসেকম একবার  জানানো,  
হোক তা একট চিঠি লিখে
কোন একটি কবিতা শুনিয়ে
অথবা একবার চিৎকার করে কেঁদে ফেলে।


মনোলীনা
পত্রিকা খুললে মাঝেমধ্যে দেখবে,
প্রত্নতাত্ত্বিকবিদগণ মাটি খুঁড়ে যখন
প্রাচীন মানুষের ফসিল আবিস্কার করেন
সেই ফসিলের কিছু বুকের কোঠরে পাওয়া যায় অক্ষত অনেক বর্ণমালা,
হালকা গরম জল,
অথবা জ্বলন্ত কিছু ছাই।


মনোলীনা
তুমি কি জানো?
বর্তামান কালেও কিছু মানুষ একই কায়দায় গুম হয়ে যায় তার শরীর থেকে!


আধুনিক ডাক্তারগণ এই হারিয়ে যাওয়াকে বলে -‘বিষণ্নতা’
এর একমাত্র ঔষুধ নাকি মুঠোভর্তি ঘুম!


মনোলীনা
বিষণ্নতার এক পুরোনো দোস্ত আমি,
তাইতো ঘুমকে ফাঁকি দিতে নিজের প্রেসক্রিপশন নিজেই লিখি
এক বিষাদের কবিতার মুখোশে।
আর সেই প্রেসক্রিপশন বুকে নিয়ে
সারাদিন দাবড়িয়ে বেড়াই শহরময়,
তটস্থ করে রাখি সব ঔষুধের দোকান।


সূর্য ডুবলেই সুযোগমতো তোমার দোতলা বাড়ির চিঠির বাক্সে ফেলে আসি আমারই লেখা
এক বিষণ্নতার প্রেসক্রিপশন।


মনোলীনা
তুমি শুধু একবার
শুধু একবার প্রেসক্রিপশনটা পড়ে দেখো,
বুকের ঔষুধগুলো ঠিকঠাক লেখা হয়েছে কিনা,
‌অন্ততঃ ভুল ঔষুধের নাম সঠিক করে দিও।


তা না হলে
ভুল ঔষুধে আমিও একদিন
গুম হয়ে যাবো আমার শরীর থেকে
সেই সব প্রাচীন মানুষের মতো আজীবনের জন্য।
———————
র শি দ  হা রু ন
০৮/০১/২০২১