প্রচন্ড বৃষ্টির রাতে আমার প্রায়ই ঘুম ভেঙে যায়,
কে যেন আমার নাম ধরে ডাকে বজ্রকন্ঠে।
আশ্চর্য, আমি ছাড়া কেউই শুনতে পায়না এই ডাক!!
এক সময় প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়,
-থামতেই চায়না।
জল আর বাতাস ভাসিয়ে নিতে চায় পুরো শহর।


আমি ছাতা নিয়ে বের হয়ে যাই।
যাবার আগে শুধু ভীত ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা স্ত্রী ও সন্তানদের বলে যাই,
“ বাবা ডাকছেন , বৃষ্টিতে বোধহয় কষ্ট হচ্ছে উনার, তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো”


রাস্তায় বের হতে‌ই দেখি
গলির মাথায় বাবা দাঁড়িয়ে আছেন
- ঠিক ল্যাম্পপোস্টের নিচে।
পান্জাবীটা শরীরের সাথে লেপ্টে আছে
-সেই কখন থেকে বৃষ্টির জলে ভিজে ভিজে।


“তুই এতো দেরি করলি খোকা,
আমি সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে”
তারপর ছাতাটা খুলে উনার মাথায় ধরতেই ঝড়-বৃষ্টি সব থেমে যায় প্রতিবার।
আর মানুষটাও সাথে সাথে হারিয়ে যায়।


বৃষ্টির জলে ভেজা শরীর আর মন নিয়ে বাড়ি ফিরি,
প্রতিবারই দেখি স্ত্রী ও সন্তানরা না ঘুমিয়ে বসে আছে আমার জন্য।


ভেজা ছাতাটা রাখতে গিয়ে স্ত্রী সব সময়ই বলবে,
“বাবা মারা গেছেন পনেরো বছর হলো,
তুমি দয়া করে একজন মানসিক ডাক্তার দেখাও,
তোমার সন্তানরাও তোমার জন্য কাঁদে।”


আমি বিড়বিড় করে বলি,
যেন কেউ শুনতে না পায়-
“ বৃষ্টির রাতে বাসায় ফিরতে দেরি হলেই
বাবা সব সময় ছাতা নিয়ে আমার জন্য
ঐ ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতেন,
-যতো রাতই হোক না কেনো।”
———————————————
রশিদ হারুন
২৯/০৪/২০২০